1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কলকাতায়

৮ অক্টোবর ২০২০

কলকাতায় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ। মিছিল ঘিরে রাজপথে তুলকালাম।

https://p.dw.com/p/3jcCW
ছবি: BJP Media Cell

বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির যুব মোর্চা। যা ঘিরে চূড়ান্ত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে কলকাতায়। অভিযোগ, মিছিলের উপর যথেচ্ছ জলকামান চালিয়েছে পুলিশ। সেই জলে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল মেশানো ছিল বলেও বিজেপি অভিযোগ করেছে। অন্য দিকে বিজেপি কর্মীরাও দিকে দিকে পুলিশকে আক্রমণ করেছে বলে প্রশাসনের অভিযোগ। ইটবৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। হাওড়া ময়দানে বোমাবাজি হয়েছে। একজন কর্মীর কাছ থেকে পিস্তল উদ্ধার হয়েছে বলেও অভিযোগ।

২০২১ সালের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গেবিধানসভা নির্বাচন। যত দিন এগিয়ে আসছে, রাজনীতির পারদও তত চড়ছে। দিকে দিকে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ হচ্ছে। একাধিক বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন। রাজ্য বিজেপির হিসেব অনুযায়ী গত কয়েক বছরে একশরও বেশি বিজেপি কর্মী রাজ্যে খুন হয়েছেন। সম্প্রতি টিটাগড়ে খুন হয়েছেন যুব বিজেপির বাহুবলী নেতা মনীশ শুক্ল। সামনে থেকে ১৪টি গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। সেই ঘটনায় সিআইডি দুইজনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে। বিজেপির অভিযোগ তারা তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডা।

বিজেপির আরও অভিযোগ, প্রশাসন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মদতেই একের পর এক খুন হচ্ছে। অন্য দিকে তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি।

বৃহস্পতিবার সকালেই যুব বিজেপির নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়ে দেন, চারটি মিছিল করে নবান্নকে ঘিরে ফেলা হবে। তবে বিজেপি কর্মীরা যাতে নবান্নের ধারেকাছে পৌঁছতে না পারেন, তার জন্য পুলিশও সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করে রেখেছিল। রাস্তায় মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ। রাজ্য বিজেপির মিডিয়া সেলের ইনচার্জ সপ্তর্ষি চৌধুরী ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ''পুলিশ বিভিন্ন জেলা থেকে বিজেপি কর্মীদের কলকাতায় ঢুকতেই দিচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় তাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে।''

এ দিকে বুধবার বিকেলেই নোটিশ দিয়ে দুই দিন নবান্ন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। নোটিশে বলা হয় স্যানিটাইজ করা হবে বলে নবান্ন বন্ধ রাখা হচ্ছে। সপ্তাহের মাঝখানে এ ভাবে নবান্ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। বিজেপির দাবি, ভয় পেয়েই সরকার নবান্ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা মুকুল রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যুব মোর্চার মিছিলের ভয়েই মমতা নবান্ন বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন ঘটনা রাজ্যের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি।''

একদিকে বিশাল পুলিশ বাহিনী, অন্য দিকে বিজেপি কর্মীদের মিছিল। সকাল থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল কলকাতায়। তবে বেলা ১২ টা নাগাদ তা চরমে পৌঁছয়। হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে প্রথম পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেয় যুব মোর্চার একটি মিছিল। পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। একই সঙ্গে জল কামান ব্যবহার করা  হয়। প্রায় একই সময়ে কলকাতার হেস্টিংসে দ্বিতীয় মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙে। সেই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির প্রথম সারির নেতৃত্ব। সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মিছিলের সামনে। অভিযোগ, সেই মিছিল ব্যারিকেড ভাঙার পরেই জলকামান থেকে রং মেশানো জল স্প্রে করতে শুরু করে পুলিশ। বিজেপির অভিযোগ, ওই জলে কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে। রাজু জল কামানে আহত হয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। অভিযোগ, জলে মেশানো কেমিক্যাল থেকে তাঁর রক্ত বমি হতে শুরু করে। বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন বিজেপির উত্তর কলকাতার নেতা রাকেশ সিং। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার পরেই তাঁদের উপর জল কামান চালানো হয়েছে। জলে খারাপ কেমিক্যাল ব্যবহারের অভিযোগও পুলিশ অস্বীকার করেছে। পুলিশের অভিযোগ, হেস্টিংস, হাওড়া ব্রিজ এবং হাওড়া ময়দানের মিছিল থেকে বিজেপি কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, বোতল ছুড়তে থাকে। হাওড়া ময়দানে বোমাবাজিও হয়েছে। পুলিশও পাল্টা বেধরক লাঠিচার্জ করে। হেস্টিংসের মিছিলে আহত হয়েছেন সর্বভারতীয় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা অরবিন্দ মেনন। প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির অদূরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উত্তাল রাজ্য। করোনাকালেও তৃণমূল এবং বিজেপি দুই পক্ষই রাস্তায় নেমে রাজনীতি করে যাচ্ছে। হাতরাসের ঘটনার পরে মিছিল করেছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে বিজেপিও নবান্ন অভিযানের বিশাল আয়োজন করেছিল। উত্তেজনার পারদ চড়ছে বিভিন্ন জেলাতেও। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সংঘর্ষ হচ্ছে। প্রাণহানি ঘটছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, শাসক দলের মদতেই প্রতিদিন সংঘর্ষ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কোনো পদক্ষেপ করছেন না। রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্য দিকে বিজেপিও পাল্টা সংঘর্ষের পথ বেছে নিচ্ছে। 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো