লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছেনা
৪ মে ২০১৩প্রথমে শহরবানু আশায় বুক বেধে ছিলেন হয়তো তার মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা যাবে৷ সে আশা নিভে গেছে৷ আর এখন তিনি আশায় আছেন যদি লাশটি পাওয়া যায়৷ তাই নতুন কোনো লাশ উদ্ধার হলেই তিনি ছুটে যান৷ ছুটে যান অধরচন্দ্র হাইস্কুল মাঠে, হাসপাতাল মর্গে৷ কিন্তু লাশও মিলছেনা৷ শেষ পর্যন্ত শহরবানু মেয়ের লাশ পাবেন কিনা তাও এখন অনিশ্চিত৷ কারণ এখন যে লাশ উদ্ধার হচ্ছে তা গলে-পঁচে বিকৃত হয়ে গেছে৷ চেনার কোনো উপায় নেই৷ আর এই শহরবানুর মতো শত শত মানুষ এখন হাতে ছবি আর ঠিকানা নিয়ে স্বজনের লাশের অপেক্ষা করছেন৷
রানা প্লাজা ধসের ১০ম দিনে শুক্রবার আরো ৪০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে৷ এপর্যন্ত মোট লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৫০৭টি৷ তার মধ্যে আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৪৩১টি লাশ৷ জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২,৪৪৬ জনকে৷ লাশ আর জীবিত মিলিয়ে এপর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ২,৯৫৩ জনকে৷ আর রানা প্লাজা ধসের সময় ভবনে ৩,২০০ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ ৫,০০০ মানুষ ছিলেন৷ সেই হিসেবে এখনো দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ আছেন৷ আর এখন পর্যন্ত ধসে পড়া ভবনের ৩০ ভাগের মতো অপসারণ সম্ভব হয়েছে৷ উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন এখনো ধ্বংসস্তূপের নীচে অনেক লাশ রয়েছে৷ উদ্ধার অভিযান যতই এগোচ্ছে ততই লাশ বেরিয়ে আসছে৷
ঢাকা জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন ডয়চে ভেলেকে জানান, এখন শুধু বিকৃত লাশ নয়, লাশের অংশ বিশেষও পাওয়া যাচ্ছে৷ তাই সাধারণভাবে লাশ শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷ তাই তারা স্বজনদের কাছে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ হস্তান্তর করতে চাইছেন না৷ এক্ষেত্রে লাশের একটি নম্বর দিয়ে সেই নম্বর অনুযায়ী ডিএনএ নমুনা রেখে আবার সেই নম্বর চিহ্ন দিয়েই আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সহায়তায় জুরাইন কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করছেন তারা৷ এরপর নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজনের ডিএনএ নমুনা নিয়ে তা মিলিয়ে লাশ শনাক্ত করা হবে৷ নয়তো একজনের লাশ অন্যজনের লাশ হিসেবে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে - যা জটিলতার সৃষ্টি করবে৷ তারা শোকার্ত আত্মীয় স্বজনকেও বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছেন৷
তিনি জানান সাভারের তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের ঘটনায় তারা মোট ৫২টি বিকৃত লাশ এভাবে দাফন করেন৷ পরে এপর্যন্ত ৩৯টি লাশ ডিএনএ'র মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে৷