ফিরেছে মনির, তবে লাশ হয়ে
৮ নভেম্বর ২০১৩মনিরের গায়ে হরতালের আগুন লাগে সোমবার৷ এরপর টানা তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে সে৷ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না৷ বরং বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার নির্মম শিকারে পরিনত হয়েছে মনির৷ চলে গেছে না ফেরার দেশে৷
সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগে মনিরের মৃত্যু নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে৷ আমার ব্লগ ডটকমে ব্লগার সুমিত কর্মকার লিখেছেন, ‘‘দিনের বেলায় ঢাকা শহরটা ঘুরার আগে বাবার গাড়িতে মনির একটু ঘুমায়৷ বাবার একটা বার চিন্তা হয়নি, হঠাৎ কিছু পশু এভাবে ঘুমের মাঝে এসে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে যাবে৷ শেষ পর্যন্ত, নিজের ক্লান্ত দেহের ঘুমটা আজ সকালে চিরকালের জন্য ঘুমের দেশে পাঠিয়ে দেয় মনিরকে৷ ''
সামহয়্যার ইন ব্লগে রনী মুরাদ লিখেছেন, ‘‘মনির আজ আর একটি নাম নয়৷'' মনিরের উদ্দেশ্যে এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘তুমি আজ আমাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রমাণ করে দিলে আমরা কতটা হিংস্র, বর্বর৷ তোমার হয়ত জানার বয়স হয়নি যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিবৃত্ত এখানেই শেষ নয়, এখানে শেষ হবেও না, তবুও আমরা দিনশেষে হরতালের পক্ষে বিবৃতি দেব! ''
একই ব্লগ সাইটে এস এম মোমিনের লেখার শিরোনাম ‘‘হৃদয়ে রক্তক্ষরন এবং রাজনীতির আগুনে পোড়া একজন মনির৷'' ২০০৭ সালের জুলাই মাস থেকে সামহয়্যার ইন ব্লগে থাকা এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘সরকারি চাকুরে হওয়ায় গত তিনদিনের হরতালে আমাকে বাধ্যতামূলক অফিসে আসতে হয়েছে, গাজীপুরের সেই একই রাস্তায় যেখানে ঘুমন্ত মনিরকে পুড়িয়ে দাহ করা হয়েছে৷ ওই স্থানটা ক্রস করার সময় আমারও ভয় হয় এই বুঝি মানুষরূপি হায়নাদের রোষানলে পড়ছি৷''
ব্লগার তানভীর-বিন-হাসান লিখেছেন, মনিরের বাবা রমযান আলিকে নিয়ে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘রমযান আলির বুকে আর কখনো তার কোনো সন্তানকে নিয়ে ঢাকা শহর বেরুবার ইচ্ছা হবে না৷ এক বুক পৃথিবী বোঝাই করে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব হবে না তার৷ দু'দিন ধরে ছেলেকে যে শহর দেখিয়েছেন, যে শহরে বাবার সাথে ঘুরে ঘুরে দুটো দিনের অপার্থিব আনন্দ নিয়ে ভরে উঠেছিল মনির, সেটা জানা হবে না অনাগত কোন ভবিষ্যতের৷
সংকলন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ