1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষার্থীদের উপর কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ আগস্ট ২০১৮

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সারাদেশে বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা৷ নিরাপত্তার অযুহাতে রাস্তায় কোনো বাস নামায়নি তারা৷ অপরদিকে শিক্ষার্থীদের উপর কলঙ্ক লেপন করে তাদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/32ar0
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/Md M. Hasan

শুক্রবারও বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছে৷ তবে কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷ কোথাও কোথাও শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে৷ শনিবারও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী৷ এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকরাও রাস্তায় নামলে একটা বিস্ফোরণমূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷ আন্দোলনের মধ্যে খোদ রাজধানীতে শুক্রবার একটি বেপরোয়া বাসের চাপায় মারা গেছেন এক মটরসাইকেল আরোহী যুবক৷ বিক্ষুব্ধ মানুষ সঙ্গে সঙ্গে ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনে৷

নিরাপদ সড়কের যৌক্তিক আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ তিনি বলেন, ‘‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সাম্প্রদায়িক শক্তি সওয়ার হয়েছে৷ ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যৌক্তিক আন্দোলনকে তারা অযৌক্তিক পথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে৷'' তাই কোনো অপশক্তির উসকানিতে বিভ্রান্ত না হতে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ অন্যদিকে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের মধ্যে জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়েছে৷ এ ধরনের ভিডিও এবং অডিও তারা পেয়েছেন৷

সাদিয়া আরমান

শিক্ষার্থীদের উপর এই ধরনের কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান নামে একজন অভিভাবক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের দাবি যে যৌক্তিক সেটা সবাই স্বীকার করছেন৷ তাহলে সব মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? এখন তাদের জামায়াত-শিবির বলা হচ্ছে, দু'দিন পর হয়ত আরো ভিকটিম করা হবে, এটা তো ঠিক না৷''

শিক্ষার্থীদের সব দাবি সরকার মেনে নিয়েছে, তাহলে কেন এই আন্দোলন? জবাবে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা তো বিশ্বাসই করতে পারছে না যে এটা মানা হয়েছে৷ তাই তারা ঘরে ফিরছে না৷ আমরা অভিভাবকরাও তাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়েছি৷ আমরাও পথে নেমে প্রতিবাদ করছি৷ কারণ এই দাবি তো শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, এটা আমাদের সকলের প্রাণের দাবি৷''

এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর, পরিবহণ মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক' হলে তবেই সড়কে গাড়ি নামাবেন তারা৷ পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরার প্রত্যাশা প্রকাশের পরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার, সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিক-শ্রমিকরা৷ শুক্রবার সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থান আগের কয়েক দিনের মতো ছিল না৷ তার মধ্যে পরিবহণ মালিক কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধের কারণে সারাদেশে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে৷

খন্দকার এনায়ত উল্যাহ

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ত উল্যাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ছাত্ররা বাস ভাঙচুর করছে, যার জন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে৷'' বাস চলাচল বন্ধের কোনো নির্দেশনা মালিকরা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ওইভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি৷ ভাঙচুর করছে, তাই বাস বন্ধ রয়েছে৷ গত কয়েকদিনে আমাদের চারশ'র বেশি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে ৮/৯টি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷''

কবে নাগাদ বাস চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে জানতে চাইলে সঠিক দিনক্ষণ না জানিয়ে জনাব এনায়েত বলেন, ‘‘ছাত্ররা ভাঙচুর বন্ধ করুক, বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷ আমাদের তো কোনো দাবি নেই৷ আমরা নিরাপদে বাস চালাতে চাই৷'' শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত এই পরিবহণ নেতা৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের সব দাবিই যৌক্তিক৷ আমরাও তাদের সঙ্গে একমত৷''

ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল আমিনও ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন, ‘‘ছাত্ররা যে দাবি করেছে সেটা যৌক্তিক৷ এখন তাদের দাবি পূরণ হয়েছে, ঘরে ফিরে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা উচিত৷'' কোথাও কোথাও শ্রমিক আর শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন – এমন প্রশ্নের জবাবে জনাব আমিন বলেন, ‘‘ছ'দিন ধরে আমার শ্রমিকরা না খেয়ে আছে৷ ওরা দিন এনে দিন খেয়ে চলে৷ বাস না চলার কারণে ওদের পেটে ভাত নেই৷ এই পরিস্থিতিতে একজন অভুক্ত মানুষ কখন কী করে ফেলবে সেটা তো বলা যায় না৷ আমরা তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে রেখেছি৷ তবে কতদিন রাখতে পারব জানি না৷''

নুরুল আমিন

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থী ঘরে ফেরার আহ্বান জানানোর পরও টানা ষষ্ঠ দিনের মতো শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা৷ গত পাঁচ দিনের মতো ব্যাপক আকারে না হলেও মিরপুর, শাহবাগ, আসাদ গেট, উত্তরা, রায়েরবাগ এলাকায় শুক্রবার সড়কে শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে৷ বেলা ১২টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ' শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবস্থান নেয়৷ তাদের একজন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ-র ছাত্র আবির হাসান বলেন, ‘‘বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরেও নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান কীভাবে হাসতে পারেন? আমরা শাহজাহান খানের পদত্যাগ চাই৷ এখানে অনেকেই বলছে, এটা বিএনপির দাবি৷ কিন্তু না, এটা সাধারণ ছাত্রদের দাবি৷''

অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, দু'জন কিশোর শিক্ষার্থীকে হত্যা করার ঘটনায় যে বিষ্ফোরণ চলছে তা সরকারের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ৷ শুক্রবার জাতীয় প্রেসকাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘কোটা আন্দোলন এখনও আছে৷ এতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷ এবার দু'জন কিশোর শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে৷ যে বিষ্ফোরণ চলছে, এতে সরকারের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ সরকারকে তারা বিশ্বাস করে না৷ সরকার মিথ্যাচার করছে৷''

সরকার কি সত্যিই মিথ্যাচার করছে? আপনার মতামত জানতে চাই আমরা৷ তাই লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য