বার্লিনে যে রেস্তোরাঁয় কোনো অপচয় হয় না
২৯ মে ২০২০দিনের শেষে রেস্তোরাঁয় কত খাদ্যই অপচয় হয়৷ এমন অপচয় বন্ধ করতে ডাভিড সুখি ও ইয়াসমিন মার্টিনের মাথায় এই আইডিয়া এসেছিল৷ এই দম্পতি বার্লিন শহরে ‘ফ্রেয়া' নামের জার্মানির প্রথম ‘জিরো ওয়েস্ট' বা অপচয়-বিহীন রেস্তোরাঁ খুলেছেন৷ ডাভিড বলেন, ‘‘প্রত্যেক শহর, প্রত্যেক রেস্তোরাঁকে সার্বিকভাবে আরও অনেক টেকসই হওয়া উচিত৷ পুরোপুরি ‘জিরো ওয়েস্ট' মেনে না চললেও মলিকের কাঁধে গ্রাহকদের প্রতি বিশাল দায়িত্ব রয়েছে৷ পরিবেশের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে৷ যখনই বেশি রান্না হবে, তখনই অপচয় বেশি হবে৷’’
বেশ কয়েক বছর ধরে ডাভিড ও ইয়াসমিন ব্যক্তিগত জীবনেও যত কম সম্ভব আবর্জনা সৃষ্টি করেন এবং ভিগান বা খাঁটি নিরামিষ খান৷ তাঁদের রেস্তোরাঁয় খাদ্যের উপাদান প্লাস্টিকের মোড়ক ছাড়াই আনা হয়৷ আশেপাশের অঞ্চলের অরগ্যানিক চাষিদের কাছ থেকে সেগুলি কেনা হয়৷ সব পদই ভিগান৷ যেমন আজকের তালিকায় রয়েছে রোস্টেড মাশরুম, সেলারি শিকড় ও আলুর টেরিন৷ সঙ্গে রেস্তোরাঁয় তৈরি রুটি ও চাটনি৷ ডাভিড সুখি বলেন, ‘‘আমরা কাউকে ভিগান বা নিরামিষাশী বা ‘জিরো ওয়েস্ট' অনুসারী করে তুলতে চাই না৷ বরং খাবারের স্বাদের দৌলতে আকর্ষণীয় থাকতে চাই৷ প্রথাগত চিন্তার বাইরে বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদে ইচ্ছামতো কাজ করতে চাই৷ বেশি কথা না বলে কাজে মন দিতে চাই৷’’
এমন আইডিয়া বার্লিনে শুরু হয় নি৷ ২০১৪ সালেই ইংল্যান্ডের প্রথম জিরো-ওয়েস্ট রেস্তোরাঁ হিসেবে ‘সাইলো' যাত্রা শুরু করে৷ নরওয়ের রাঁধুনী হাল্ফডান ক্লুফটেন সেখানে ‘সু শেফ' বা সহকারী রাঁধুনী হিসেবে কাজ করেছেন৷ এখন তিনি ফ্রেয়া রেস্তারাঁর প্রধান রাঁধুনী৷ তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বার্লিনে প্রয়োগ করতে চান৷ হাল্ফডান বলেন, ‘‘আমরা লবণাক্ত পানি দিয়ে মরসুমি শাকসবজির তরল ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন করি৷ এমন শাকসবজির স্বাদ ও গন্ধের মধ্যে আরও অনেক বৈচিত্র্য পাওয়া যায়৷ তাছাড়া সস বা ড্রেসিং তৈরির কাজে ভিনিগার বা তেলের বদলে আমরা সেই তরলও ব্যবহার করতে পারি৷ সব পদের মধ্যেই তা কাজে লাগানো যায়৷''
রেস্তোরাঁর মধ্যেও টেকসই পদ্ধতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার ছাপ চোখে পড়ে৷ যেমন হাত মোছার ন্যাপকিন কাপড়ের তৈরি, আসবাবপত্রও পুরানো৷ মোড়কের বদলে কাচের পাত্র ব্যবহার করা হয়৷ মাশরুম ফাইবার দিয়ে ল্যাম্পশেড তৈরি করা হয়েছে৷
মোটকথা খুঁটিনাটি বিষয়গুলির প্রতি যথেষ্ট নজর দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু অতিথিরাও কি তার কদর করেন? একজন বললেন, তাঁর কাছে এই কনসেপ্ট বেশ আকর্ষণীয়৷ বাসায় তিনি এ বিষয়ে একটি বই পড়েছেন৷ তবে সেটাই এখানে আসার মূল কারণ নয়৷ খাবারের আকর্ষণেই তিনি এখানে এসেছেন৷ আর একজন অতিথি বলেন, ‘‘আমরা এত কিছু ফেলে দেই বলে উত্তেজিত হয়ে পড়ি৷ অপচয় কমানো অত্যন্ত কঠিন, পুরোপুরি বন্ধ করা আরও কঠিন৷ এরা এখানে যেটা করছে, সেটা সত্যি দারুণ৷’’
শাকসবজি ও খাবারের অবশিষ্ট অংশ দিয়ে কী করা হয়? ‘গেরসি' নামের নিজস্ব কম্পোস্টিং যন্ত্র সেই জঞ্জাল গিলে নেয়৷ ৬০ থেকে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ব্যাকটিরিয়ার চিড়িয়াখানা সবকিছু রূপান্তর করে৷ ইয়াসমিন মার্টিন বলেন, ‘‘রাতে খাবারের অবশিষ্ট অংশ যন্ত্রে ভরে দেওয়া হয়৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে মাটির বিকল্প সৃষ্টি হয়৷ শেষে সেই মাটি আবার খেতে ফেলে দেওয়া যেতে পারে৷’’
এভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চক্র সম্পূর্ণ হয়৷
ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি