বার্লিনের শরণার্থী শিবিরের কাজ আজও শেষ হয়নি
১ জানুয়ারি ২০১১বার্লিনের মারিয়েনফেল্ডে এলাকায় দশটি উঁচু উঁচু বাড়ি, তা'তে ছোট ছোট সাধারণ ফ্ল্যাট - অবশ্য সমৃদ্ধ দেশ জার্মানির হিসাবে৷ জল, বিদ্যুৎ, সেন্ট্রাল হিটিং, সব কিছুরই ব্যবস্থা আছে৷ তথাকথিত ঠাণ্ডা লড়াই'এর যুগে কম্যুনিস্ট পূর্ব ইউরোপ থেকে যে সব মানুষরা পালিয়ে আসতেন, তাঁদের চোখে এই মারিয়েনফেল্ডেই হয়তো অত্যাধুনিক, বিলাসবহুল আবাসন বলে মনে হতো৷ এবং আজও মারিয়েনফেল্ডেকে সেই চক্ষে দেখার মতো মানুষ আছেন, যদিও তাঁরা আর পূর্ব ইউরোপ থেকে আসেন না৷
এখন এই শান্তি, স্বাধীনতা, স্বচ্ছলতাকামী মানুষগুলি আসেন কসোভো, চেচনিয়া, আফগানিস্তান, সোমালিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে৷ অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রী, সঙ্গে একাধিক শিশুসন্তান৷ কোনো ক্ষেত্রে আবার মাত্র ২০ বছর বয়সের এক কি একাধিক তরুণ, হয়তো সোমালিয়া থেকে পালিয়ে এসেছে৷ - মারিয়েনফেল্ডে ছাড়াও বার্লিনে একাধিক শরণার্থী হোস্টেল আছে৷ তাদের কোনো একটিতে এদের স্থান হয়ে যায়৷ তখন হয়তো তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে কি পাবে না, তার বিচার চলেছে৷ এবং বহু ক্ষেত্রেই মাস তিনেকের মধ্যেই জানা যায় যে, তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে না, তাদের ‘স্বদেশে' ফেরত যেতে হবে৷ যেমন সার্বিয়া থেকে আগত অধিকাংশ জিপসিদের৷
উদ্বাস্তু হিসেবে স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলাকালীন শরণার্থীদের কাজ করে অর্থোপার্জন করার অধিকার নেই৷ তবে সরকারের অনুমোদিত নানা রিলিফ কার্যে তারা অংশ নিতে পারে৷ সব সত্ত্বেও, কেউই যুদ্ধ-বিগ্রহ, বৈষম্য এবং অভাব-অনটনের বিভীষিকায় আর প্রত্যাবর্তন করতে চায় না৷ অথচ জার্মানি অভিমুখে উদ্বাস্তুর স্রোত কিন্তু আগের মতো নেই৷ তাই সরকারি কর্মকর্তারা ২২,০০০ বর্গমিটারের মারিয়েনফেল্ডে শরণার্থী শিবিরটিকে বন্ধ করে দেওয়ার কথাই ভাবছিলেন৷
কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক প্রার্থীদের একটা বড় ঢেউ আবার বার্লিনে এসে পৌঁছতে শুরু করেছে - বিশেষ করে আফগানিস্তান, সোমালিয়া, ইরাক এবং ইরান থেকে৷ কাজেই কর্তৃপক্ষ আবার মারিয়েনফেল্ডে খুলতে বাধ্য হয়েছেন৷ ২০১০-এ বার্লিনে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২,০০০৷ সেই সংখ্যা নাকি ২০১১-তে আরো অনেক বাড়বে৷
আর মারিয়েনফেল্ডে দেখবে শান্তি, স্বাধীনতা, স্বচ্ছলতার সন্ধানে মানুষের নিরুদ্দেশযাত্রা কোনোদিন বন্ধ হয়নি, এবং হয়তো কোনোদিন বন্ধ হবে না৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই