1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাবা-মায়ের সেবা

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২

জার্মানিতে ক্রনিক অসুখে ভোগা মানুষদের সেবা শুশ্রূষার জন্য নার্সিং সার্ভিস থেকে সহায়তা পাওয়া যায়৷ কয়েক ঘণ্টার জন্য নার্স এসে করে যায় প্রয়োজনীয় কাজ৷ কিন্তু বহু ক্ষেত্রে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদেরও এ দায়িত্ব নিতে হয়৷

https://p.dw.com/p/16HIz
Bild: Andrea Kasiske (FM DW) am 21.9. 2012 in der Gemäldegalerie in Berlin Stichwort: Museum für demenzkranke
ছবি: DW

জার্মানির ভিটেন/হের্ডেকে ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ক্রনিক রোগীদের সেবা বা যত্নের দায়িত্বভার অনেক ক্ষেত্রেই নিতে হয় তাদের অল্পবয়সি সন্তানদের৷ ৪৪ বছর বয়স্ক আস্ট্রিডের ক্ষেত্রেও এই রকমটি হয়েছে৷ দুই কন্যার জননী আস্ট্রিড ডাক্তারের সহায়ক হিসাবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন৷

কিছুদিন ধরেই রোগে ভুগছিলেন তিনি৷ চিকিত্সকরা তাঁর অসুখটি নির্ণয় করে যখন জানালেন, তখন আঁতকে উঠলেন আস্ট্রিড৷ কারণ তিনি এমএস রোগে ভুগছেন৷ বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে ‘বহুবিধ কাঠিন্য'৷ মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের একটি জটিল রোগ এটি৷ এর ফলে রোগী ক্রমেই তার দৃষ্টিশক্তি, মাংসপেশির ওপর নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক ভারসাম্য ও অনুভূতি হারায়৷ নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াই মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের কোষগুলোকে আক্রান্ত করে৷

আস্ট্রিড জানান, ‘‘আমার পাঁয়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে গেল৷ সবচেয়ে খারাপ লাগল এই ভেবে যে, পরিবারের দেখাশোনা করতে পারব না ও অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে৷'' আস্ট্রিড জানেন, এখন থেকে বড় মেয়ের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে৷ দুই মেয়ে নিয়ে নিজের বাড়িতে বসবাস করতে হলে এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই৷

বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়নি

এতদিন পর্যন্ত জার্মানিতে সেবা শুশ্রূষাকারী বাচ্চাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি৷ ভিটেন ইউনিভার্সিটির নার্সিং বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের কর্মীরা জার্মানিব্যাপী এক সমীক্ষায় বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন সম্প্রতি৷ ফলাফলে জানা গেছে, জার্মানির প্রায় দুই লক্ষ ছেলেমেয়ে ক্রনিক অসুখে আক্রান্ত মা-বাবার সেবার দায়িত্ব নেয়৷ ভিটেন ইউনিভার্সিটির জাবিনে মেটসিং-ব্লাউ জানান, তারা বয়স্কদের মতই কাজকর্ম করে থাকে৷ যেমন তারা মা-বাবার চলাফেরায় ও শারীরিক পরিচর্যায় সাহায্য করে৷ এছাড়া তারা অসুস্থ মা-বাবাকে ওষুধ খাওয়ানো ও ক্ষত পরিচর্যার ব্যাপারেও সহায়তা করে৷

প্রায়ই গৃহস্থালীর কাজকর্ম ও ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা দায়িত্বও নিতে হয় তাদের৷ জাবিনে ব্লাউ বলেন, ‘‘মা বাবার একজন সুস্থ থাকলেও এসব ক্ষেত্রে তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে৷ স্বান্ত্বনা দেয় অসুস্থ মা বা বাবাকে৷''

Einer pflegebedürftigen älteren Dame wird am Dienstag (17.04.2012) in Weingarten (Kreis Ravensburg) in einem Altenheim das Essen von einer Pflegekraft gegeben. Foto: Tobias Kleinschmidt dpa/lsw
ছবি: picture-alliance/dpa

দায়িত্ববান সন্তান

এমএস, বাত বা ক্যান্সারে আক্রান্ত মা বাবার সন্তানদের জীবনযাত্রা শিশুবান্ধব বলা যায় না৷ মা-বাবা মানসিক রোগে ভুগলেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হয় অনেক সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের৷

আস্ট্রিডের ১৫ বছর বয়সি মেয়ে ইউলিয়ার দিনটিতেও অবসর সময় বলে কিছু নেই৷ সে জানায়, ‘‘সবার আগে আমি ঘুম থেকে উঠি৷ তারপর ঠিকঠাক হয়ে মাকে বিছানা থেকে উঠতে সাহায্য করি৷ বাথরুমে যেতে ও কাপড় চোপড় পরতে সাহায্য করি, চুল আঁচড়াই, নাস্তা তৈরি করি৷ আমার বোনের দিকেও খেয়াল রাখি৷ অবশেষে আমি স্কুলে যাই৷''

বিকালে স্কুল থেকে ফিরে ঘর ঠিকঠাক করে ইউলিয়া৷ বাজার করতে যায়, ওষুধ নিয়ে আসে, বোনকে স্কুলের হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করে৷ ইউলিয়া বলে, ‘‘আবহাওয়া ভালো থাকলে মাকে হুইল চেয়ারে করে বাইরে নিয়ে যাই৷ বন্ধুবান্ধবের জন্য প্রায় কোনো সময়ই থাকে না৷''

অসুস্থ মা-বাবারা বাইরে থেকে কোনো সাহায্য নিতে দ্বিধাবোধ করেন৷ তাদের শঙ্কা, অসুখের খবর জানাজানি হলে তাদের কাছ থেকে ছেলেমেয়েকে সরিয়ে নেয়া হবে৷ আর সেকারণে গুটিয়ে নেন তারা নিজেকে৷

চিকিত্সকরাও আমল দেন না

অনেক চিকিত্সকও এই বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না৷ জাবিনে ব্লাউ-এর ভাষায় ‘‘চোখ বন্ধ করে রাখেন তারা৷ কোনো কোনো ডাক্তার জানেন যে, ছেলেমেয়েরা বাড়িতে অসুস্থ মা-বাবার যত্ন করে থাকে৷ তারা ছেলেমেয়েদের কাঁধে স্নেহের চাপড় মেরে প্রশংসা করে বলেন, ‘‘কাজটা তুমি খুব ভালো করছো৷''

অবশ্য এমন ডাক্তারও রয়েছেন, যারা নার্সিং সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীর জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করেন৷ জাবিনে মেটসিং ব্লাউ জানান, রোগী ও তার পরিবার নিজেদের দুরবস্থার কথা খোলাখুলি বলতে চান না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ডাক্তার ক্ষতস্থানের পরিচর্যা দেখেন, ভালোভাবে চলা গৃহস্থালী লক্ষ্য করেন, কিন্তু এর পেছনে যে, কার হাত রয়েছে, তা নিয়ে মাথা ঘামান না৷''

এজন্য ভিটেন ইউনিভার্সিটির নার্সিং ইন্সিটিটিউট-এর পক্ষ থেকে ইন্টারনেটে একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে৷ এতে ভুক্তভোগী ছেলেমেয়ে ও তাদের মা-বাবারা ভাবের আদান প্রদান করতে পারে৷ কেননা সমীক্ষা থেকে বোঝা গেছে যে, তাদের একটা বিশেষ আকাঙ্খা হল, কারো সঙ্গে কথা বলতে পারাটা৷ এছাড়া ইন্টারনেটের ওয়েবসাইটে সারা জার্মানিতে অবস্থিত নার্সিং সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের তালিকা ও খোঁজখবর দেয়া থাকে৷ কেউ চাইলে নিজের রাজ্য ও শহরের নাম ক্লিক করলেই জানা যাবে কাছাকাছি নার্সিং সংক্রান্ত কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কিনা৷ জাবিনে ব্লাউ ভরসা দিয়ে বলেন, ‘‘আমার কী করতে হবে, কীভাবে আমি সেখানে যাব, খরচ কত, এসব বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে, উত্তর দেব আমরা৷''

প্রতিবেদন: ক্লাউস ডয়সে/আরবি
সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য