বাতিল স্থাপত্য যখন শিল্পকর্ম
১১ জানুয়ারি ২০১৪সৃষ্টির দৃষ্টান্ত
ইংল্যান্ডের সুপরিচিত লাল ইটের বাড়ি, একটি আবার চারতলা – সেটাই ব্রিটিশ শিল্পী অ্যালেক্স চিনেক-এর পক্ষে আদর্শ৷ সপ্তাহ তিনেক আগে এখানে কাজ শেষ হয়েছে৷ দেখলে মনে হবে, বাড়ির সামনেরটা যেন পিছলে বাগান অবধি নেমে গেছে! চিনেক বলেন, ‘‘এই এলাকাটা এককালে একটা সম্ভ্রান্ত এলাকা ছিল আর এখানকার স্থাপত্যও সেইরকম উঁচুদরের ছিল – সেটাই আমাকে আকৃষ্ট করে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের ফলে বাড়িগুলোর চেহারা অত্যন্ত কাহিল৷ এই বৈপরীত্য আমার ধারণার সঙ্গে সুন্দরভাবে খাপ খায়৷''
ঊনবিংশ শতাব্দীর বসতবাড়িটা এগারো বছর ধরে খালি পড়ে ছিল৷ তারপর অ্যালেক্স চিনেক তাতে হাত লাগান৷ বাড়িটাকে নতুন আকৃতি দিতে মোট এক লাখ বিশ হাজার ইউরো খরচা হয়েছে – তা সত্ত্বেও বাড়িটা বাস করার মতো হয়নি৷ তবে বাড়িটা একটা একক শিল্পকলা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ছোট্ট শহর মার্গেট-এর পক্ষে একটা পর্যটক আকর্ষণ বৈকি৷ অবশ্যই নানা জনের নানা প্রতিক্রিয়া শোনা যায়৷ কেউ বলেন, ‘‘এখানে তো কতো বাড়িই পড়ে পড়ে খারাপ হচ্ছে৷ হঠাৎ তার মাঝখানে একটা সঠিক বাড়ি, যা পিছলে রাস্তায় নেমে পড়েছে৷ দারুণ!'' কেউ বা বলেন, ‘‘এখানে কেউ থাকলে আরো ভালো হতো, কারুর মাথার উপর ছাদ হতো৷'' আরেক জন বললেন, ‘‘এখানে যে পরিমাণ চিন্তা আর শ্রম ব্যয় করা হয়েছে, তা অভাবনীয়৷ মার্গেট-এ এ ধরনের একটি বস্তু অতি ভালো কথা৷''
অবক্ষয়ের মধ্যে প্রেরণা
শহরের অবক্ষয় চিরকালই অ্যালেক্স চিনেক-এর প্রিয় বিষয়৷ লন্ডনের বোহেমিয়ান ‘ইস্ট এন্ড' এলাকার এই পুরনো কারখানা বাড়িটিতে শেষমেষ গাঁজার চাষ করা হচ্ছিল! অবশ্যই পুলিশের অজ্ঞাতে৷ আজ কারখানার সামনেরটা একটি শিল্পকর্মের অংশ৷ জানালার তিনশো'টি কাচের প্রতিটি ঠিক একইভাবে এবং একই জায়গায় ভাঙা! এ জন্য ১,২০০ কাচের দরকার পড়েছিল৷ চিনেক বলেন, ‘‘আমার শিল্পকর্মে খেলাও আছে আবার কিছুটা বোকামিও আছে৷ আমি ভেলকি আর হাসিঠাট্টার সহজ আনন্দগুলোকে ব্যবহার করি৷ একটা বাড়ির পিছলে পড়া কিংবা জানলার কাচগুলো ঠিক একইভাবে ভাঙাটা ঐ আশাবাদের অঙ্গ৷''
অ্যালেক্স চিনেক একটি পুরনো কারখানায় বসবাস এবং কাজ করেন৷ অঙ্কণশিল্প নিয়ে পড়াশোনা করলেও চিনেকের প্রকল্পগুলিতে স্থাপত্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ আপাতত তিনি তাঁর সর্বাধুনিক প্রকল্পের জন্য নানা ধরনের ইঁট খুঁজছেন৷ প্রকল্পটি হল: লন্ডনের একটি বাড়ির সম্মুখভাগ৷ অ্যালেক্সের প্রকল্পগুলির অর্থ আসে নির্মাণ সংস্থাগুলির অনুদান থেকে৷ ২৯ বছর বয়সি শিল্পীর তা থেকেই চলে যায়৷ অথচ প্রকল্পের পরিকল্পনাতেই কয়েক মাস সময় লাগে৷ চিনেক বলেন, ‘‘নান্দনিক সিদ্ধান্তগুলি গোটা প্রক্রিয়ার একটা ক্ষুদ্র অংশ, কাজেই আমার নিজেকে সবসময়ে শিল্পী বলে মনে হয় না৷ এটা যেন একটা ব্যবসা৷ লম্বা হিসেবপত্তর, আলাপ-আলোচনা৷ এ সব প্রকল্পের জন্য পূর্ত বিভাগের অনুমোদন লাগে, স্থানীয় পৌর পরিষদের সঙ্গে যা নিয়ে কথা বলতে হয়৷''
আরও চমক
লন্ডনের ব্ল্যাকফ্রায়ার্স রোডের একটি বাড়ির জন্য অ্যালেক্স চিনেকের সব অনুমোদন নেওয়া হয়ে গিয়েছে৷ বাড়িটার পাশ দিয়ে রোজ যে হাজার হাজার পথচারী যান, তাদের পক্ষে কল্পনা করাও শক্ত, কী ধরনের একটি শিল্পকর্ম এখানে সৃষ্টি হতে চলেছে৷ আর কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হবে৷ তখন দৃশ্যটি দেখাবে...বাড়িটা যেন ঠিক উল্টো হয়ে মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে! চিনেক বলেন, ‘‘যে কোনো দর্শক, যে কোনো পথচারী এই শিল্পকর্মটি দেখতে ও উপভোগ করতে পারেন, তাদের শিক্ষা অথবা সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন, তারা শিল্পী হন আর নাই হন৷ প্রকাশ্য, সরকারি শিল্পকর্মের এই বিরাট দায়িত্বটা থাকে৷''
অ্যালেক্স চিনেক তাঁর শিল্পকর্ম দিয়ে সরকারি ব্যবস্থার গাফিলতির দিকেও মনোযোগ আকর্ষণ করতে চান৷ মার্গেটে তাঁর শিল্পকর্মটি এক বছর পরে উধাও হবে, কিন্তু সেখানে একটা নতুন বাড়ি গড়ে উঠবে, সাবেক ধ্বংসস্তূপের উপর তৈরি হবে নতুন বাসস্থান৷