বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই পাঁচ কর্মকর্তা কে?
১৩ ডিসেম্বর ২০১৬সুইফটের গ্রাহক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রধান স্টিফেন গিলডেরডেল আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এমন কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখনও হামলার শিকার হচ্ছে৷'' অবশ্য ঠিক কতগুলো ব্যাংকে নতুন করে হামলা করা হয়েছে, হামলাকারীরা কারা, কত টাকা চুরি হয়েছে, এ সব ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি৷
গত ২ নভেম্বর বিশ্বের যে সব ব্যাংক সুইফটের সেবা নেয়, তাদের চিঠি দেয়া হয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে৷ ব্যাংকগুলোর কাছে সুইফটের পাঠানো চিঠিটি প্রকাশ না করা হলেও, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ঐ চিঠিটি দেখেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে৷ চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে তাদের লেনদেন হুমকির মুখে বলে সতর্ক করা হয়৷ সাইবার হামলা এবং নতুন নতুন হ্যাকিং কৌশলের কাছে সুইফট মেসেজিং নেটওয়ার্ক নাজুক হয়ে পড়েছে৷ তারপরও সুইফট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি ডলার লেনদেন হচ্ছে৷
এই ব্যবহার করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা করা হয়৷ শেষ পর্যন্ত ফিলিপাইন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে (আরসিবিসি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা৷ মামলাটি বর্তমানে বাংলাদেশে সিআইডি তদন্ত করছে৷ এছাড়া ফিলিপাইন্স এবং শ্রীলংকা পুলিশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইও ঘটনাটির তদন্ত করছে৷
সিআইডি-র অরগ্যানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাহ আলম এরইমধ্যে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘ব্যাংকের রিজার্ভ যেভাবে রাখা হয়েছে, তা অত্যন্ত সুরক্ষিত৷ এটাকে জেনেশুনে বা বুঝেই অরক্ষিত রাখা হয়েছে৷ অর্থাৎ সেখানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারাই কাজটি করেছেন৷''
তিনি জানান, ‘‘হ্যাকাররা এখানে তিন ধাপে কাজ করেছে৷ প্রধান কম্পিউটারটিতে ইন্টারনেট ছিল না, সেটাতে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে৷ হ্যাকাররা অরক্ষিত নিশ্চিত হওয়ার পর তারা কাজটি করেছে৷ আর তারা টাকা বের করে নিতে বিশ্বের দুর্বল ব্যাংকিং পদ্ধতি যারা করে, সেই সব ব্যাংক বেছে নিয়েছে৷''
শাহ আলম সংবাদমাধ্যমকে আরো বলেন, ‘‘অত্যন্ত সুক্ষভাবে কাজটি করা হয়েছে৷ এর সঙ্গে বাংলাদেশ কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত৷ আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি৷ তবে এই মুহূর্তে তাদের নাম বলতে চাই না৷ তাদের নাম বলা ঠিক হবে না৷''
এ নিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা শাহ আলমের সঙ্গে মঙ্গলবার ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি৷
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রিজার্ভ চুরি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একেক সময় একেক ধরনের খবর এসেছে, আসছে৷ আমি মনে করে, কোনো কিছু নিশ্চিত না হয়ে তা প্রকাশ করা উচিত নয়৷ সিআইডিই তাদের বক্তব্যে একই অবস্থানে থাকছে না৷ একজন বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন জড়িত৷ আবার আরেকজন বলছেন, জড়িত থাকার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি৷ আমার মনে হয়, তদন্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোনো কিছু বলা ঠিক নয়৷''
তাঁর কথায়, ‘‘সিআইডি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেনি৷ তারা তাই মাঝপথে কথা বলতে পারে না৷ এছাড়া ফরাসউদ্দিনের কমিটির প্রতিবেদন নিয়েও সংশয় আছে৷ তিনিও দু'রকম কথা বলেছেন৷ সর্বশেষ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার অবহেলার কথা৷''
মঙ্গলবার রাতে সিআইডি কর্মকর্তা শাহ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এখন চেষ্টা করছি এই কর্মকর্তারা হ্যাকারদের সহযোগিতা করে কীভাবে লাভবান হয়েছেন, তা বের করতে। আমরা আশা করি তা পারব। বলতে পারেন আমারা তদন্তের একদম শেষ ধাপে আছি। তারপরই গ্রেপ্তারের প্রশ্ন আসবে। আমরা স্বস্তিকর অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করতে চাই। হ্যাকারদের সহযোগিতায় তাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তার সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের আছে৷’’
এ বিষয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷