শক্তির জানান দিল জেএমবি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ময়মনসিংহের ত্রিশালে জেএমবি-র ৩ জঙ্গি সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন (৩৮), হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসান (৩৫) ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিজান ওরফে বোমা মিজানকে (৩৫) রবিবার প্রিজন ভ্যানে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগীরা৷ তাদের হামলায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন৷ তাদের মধ্যে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাবিক হাসান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত৷ বাকি দু'জন বিভিন্ন মামলায় কারদণ্ডপ্রাপ্ত৷ তাদের গাজীপুরের কাসিমপুর কারাগার থেকে নতুন মামলায় হাজিরার জন্য ময়মনসিংহ নেয়া হচ্ছিল৷
২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০ বোমা ফাটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় জেএমবি৷ এরপর ঝালকাঠিতে বিচারক হত্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের নৃশংসতার প্রমাণ রাখে৷ এরপর জেএমবি-কে নিষিদ্ধ করে সরকার৷ ২০০৭ সালে জেএমবি-র প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইসহ শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়৷ এরপর জেএমবির দায়িত্ব নেন সাইদুর রহমান৷ তাঁকে ২০১০ সালে গ্রেফতার করা হয়৷ এই সময়ে জেএমবি-র প্রায় ২ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন৷ আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মনে করে জেএমবি প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে৷
গত সপ্তাহে আল কায়েদার হুমকির পর ব়্যাবের উপ-মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ধারাবাহিক অভিযানের ফলে বাংলাদেশে জঙ্গি তত্পরতা এখন আর তেমন নেই৷ আর জেএমবি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে৷'' কিন্তু জেএমবি-র এই অপারেশনের পর তা ভুল প্রমাণিত হল৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান (অব.) ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জঙ্গিদের নির্মূল করা কঠিন৷ কারণ তার ‘আদর্শিকভাবে' উদ্বুদ্ধ৷ আর তাদের নেতৃত্ব কখনো শূণ্য থাকেনা৷ কারণ সব সময়ই তাদের পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করা থাকে৷ আর চাপে পড়লে তারা কৌশল পরিবর্তন করে৷ তাই তারা শেষ হয়ে গেছে এই ভেবে হাত-পা গুটিয়ে থাকার মত বোকামি আর হয়না৷''
কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাই করেছে৷ জেএমবি-র মজলিসে শূরার সদস্য এবং দুর্ধর্ষ এই ৩ জঙ্গিকে প্রিজন ভ্যানের চালকসহ মাত্র ৪ জন পুলিশের পাহারায় গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পাঠিয়েছিল৷ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান তা স্বীকার করে বলেছেন, জঙ্গিদের সাধারণ আসামির মতো পাঠানো ঠিক হয়নি৷
তবে ময়মনসিংহের ঘটনার পর পুলিশের টনক নড়েছে৷ যে সব কারাগারে জঙ্গিরা আটক আছে, সে সব কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার শিথিলতাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘পুরো ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে'৷
এদিকে ৩ জঙ্গির একজন হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসানকে ফের আটক করা সম্ভব হলেও সোমবার ভোররাতে তিনি টাঙ্গাইলের সখীপুরে ‘বন্দুক যুদ্ধে' নিহত হয়েছেন৷ আটকের পর তাকে নিয়ে বাকি দু'জনের সন্ধানে বের হলে তিনি বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন বলে পুলিশের দাবি৷