1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুমূর্ষু করোনা রোগীদের জন্য রেমডেসিভির

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ মে ২০২০

করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহার করা হবে৷ এরইমধ্যে দেশের দু'টি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত রেমডেসিভির ওষুধের নমুনা জমা দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে৷ অনুমতি মিললেই বাজারজাত করবে তারা৷

https://p.dw.com/p/3byeL
ছবি: picture-alliance/AP/Gilead Sciences

নমুনা জমা দেয়া কোম্পানি দু'টো হল বেক্সিমকো ও এসকেএফ৷ গত বুধবার নিজেদের প্রস্তুতকৃত ওষুধের নমুনা জমা দিয়েছে বেক্সিমকো আর শনিবার জমা দিয়েছে এসকেএফ৷ যা পরীক্ষায় ১৫ থেকে ১৬ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর৷ এরপর অনুমোদন মিললেই বাজারজাত করতে পারবে কোম্পানিগুলো৷

বেক্সিমকো ও এসকেএফ ছাড়াও আরো ৬টি কোম্পানি ওষুধটি উৎপাদনের রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে৷ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে, স্কয়ার, বিকন, ইনসেপ্টা, অপসনিন, পপুলার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস৷

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পর বাংলাদেশ করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এই ঔষধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে৷ তবে করোনার মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার শুরু হলেও মূলত এই রেমডিসিভির ইবোলায় আক্রান্তদের প্রতিষেধক হিসেবেই প্রস্তুত করা হয়েছিল৷

ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রেমডেসিভির অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ৷ একসময় ইবোলাতে ব্যবহার হতো৷ এখন ‘ইমার্জেন্সি অথোরাইজেশন' দিয়েছে আমেরিকার দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)৷ একজন রোগীর সুস্থ্য হতে যেখানে ১৫ থেকে ১৬ দিন লাগে, সেখানে এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে ১১ দিনে তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন৷’’

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় গত সপ্তাহে রেমডিসিভির নামের একটি ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর৷ গত ৭ মে ওষুধটি করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে জাপান সরকারও৷

রেমডিসিভির এর উদ্ভাবক মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সেস৷ এলডিসি বা স্বল্প আয়ের দেশের তালিকায় থাকা দেশগুলোর জন্য প্রদত্ত মেধাস্বত্ত্ব সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এটি উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়৷

এসকেএফের পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) ডা. মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শনিবার আমরা নমুনা জমা দিয়েছি৷ শুক্রবার দেশে প্রথমবারের মতো করোনা চিকিৎসায় কার্যকর জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদন কাজ শেষ হয়েছে৷ আমরা ওষুধটি ‘রেমিভির' নামে বাজারজাত করবো৷ তবে এর আগে আরও কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে৷ সব প্রক্রিয়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন পেলে রেমডেসিভির বাজারে আসবে৷ তবে এ ওষুধের ডিস্ট্রিবিউশন সাধারণ ওষুধের মতো হবে না৷ কেবলমাত্র কিছু হাসপাতাল এবং ইনস্টিটিউশনে এই ওষুধ সরবরাহ করা হবে৷ কোনও খুচরা ওষুধের দোকানে এই রেমডেসিভির পাওয়া যাবে না৷’’

মূল্য নির্ধারণ ও বাজারজাত প্রক্রিয়া

রুহুল আমিন

ওষুধের দাম কত নির্ধারণ করা হয়েছে? আর একজন রোগীকে সুস্থ্য হতে কত ডোজ ওষুধ নিতে হবে? জবাবে ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি ফাইলের দাম পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছি৷ একজন রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পাঁচ থেকে ১০ দিন এটা নিতে হবে৷ তবে প্রথম দিন দুই ডোজ নিতে হবে৷ অর্থাৎ যার সবচেয়ে কম লাগবে তারও ছয়টি ডোজ নিতে হবে৷ যার মূল্য পড়বে কমপক্ষে ৩৩ হাজার টাকা৷ আর যার সবচেয়ে বেশি লাগবে তার নিতে হবে ১১টি ডোজ৷ যার মূল্য ৬০ হাজার ৫০০ টাকা৷’’

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমাদের কাছে যে দু'টি কোম্পানির নমুনা জমা দেওয়া হয়েছে তাদের উভয়ের দাম প্রায় একই৷ জনাব আমিন বলেন, ‘‘এই ওষুধগুলোর দাম আমরা নির্ধারণ করি না৷ এটা কোম্পানিগুলোই ঠিক করে৷ এখন যেহেতু কাঁচামালের দাম বেশি পড়ছে এই কারণে ওষুধের দামও বেড়ে যাচ্ছে৷’’ 

তিনি বলেন, এসকেএফ এর উৎপাদন কাজ শেষ পর্যায়ে৷ এখনও কিছু পরীক্ষা বাকি আছে৷ সেগুলো শেষ হলেই ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট' হিসেবে এটি বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত হবে৷ তবে এরিমধ্যে বেক্সিমকো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে৷ যদিও অনুমোদন হওয়ার আগ পর্যন্ত তারাও বাজারজাত করতে পারবে না৷ সব ঠিক থাকলে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে ১৫ থেকে ১৬ দিন লেগে যাবে বলে জানান রুহুল আমিন৷

ডা. মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম

এই মুহূর্তে দেশের বাজারেই এই ওষুধ বাজারজাতের পরিকল্পনা কোম্পানিগুলোর৷ এখনও কেউ দেশের বাইরে রফতানির জন্য ওষুধ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেনি বলেও জানান অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন৷ অন্যদিকে এসকেএফের মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে দেশের মানুষই প্রথম অগ্রাধিকার৷ দেশের চাহিদা পূরণ হলে যদি বেশি উৎপাদন করতে পারি তাহলে বিদেশে রফতানির অনুমতি আমরা চাইব৷’’

ব্যবহারের নিয়ম

রেমডেসিভির মূলত ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়৷ এই বিষয়ে এসকেএফ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন বলেছেন, ‘‘ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত মার্চ মাসে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ফর্মুলেশন বিজ্ঞানীরা মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে রেমডেসিভির নিয়ে কাজ শুরু করেন৷ যেহেতু এটি একটি শিরায় দেওয়া ইনজেকশন, সে কারণে এর উৎপাদনে সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়৷’’

ওষুধের দামটি সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন সীতেশ চন্দ্র বাছার৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান