বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের দুর্দশার চিত্র
গত দেড় দশকে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে একের পর এক অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে৷ দুর্দশায় পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি সম্প্রতি ব্যাংক খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেছে৷
৯২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ
২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ২৪টি বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে৷ এই টাকা বাংলাদেশের গত অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশ বা জিডিপির দুই শতাংশের সমান৷
একটি সরকারি ব্যাংকের চিত্র
রাষ্ট্র মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক এননট্যাক্স গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা ব্যাংকটির ভিত্তি মূলধনের চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি৷ এক্ষেত্রে একক গ্রাহকের জন্য যে ঋণসীমা নীতি থাকে, তা লঙ্ঘন করেছে জনতা ব্যাংক৷
একটি বেসরকারি ব্যাংকের চিত্র
বাংলাদেশে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনার সুনাম থাকলেও গত কয়েক বছরে তার কয়েকটির পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে৷ যেমন, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ২৩৬ কোটি টাকার পাচারের ঘটনা ঘটেছে৷
করের টাকা ব্যাংকে
২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ভুয়া কোম্পানি ও সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়৷ এভাবে অর্থ ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোকে বছরের পর বছর জনগণের করের টাকা দিয়ে টিকিয়ে রাখে সরকার৷ ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এমন পুনঃঅর্থায়নে সরকারের ব্যয় ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা৷
ক্ষমতাধররা ব্যাংক মালিক
২০১৩ সালের সরকার নয়টি নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন দেয়৷ এই ব্যাংকগুলোর মালিক তখনকার রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা৷ এরমধ্যে একজন সাবেক মেয়রও ছিলেন৷
এক শিল্পগ্রুপের ৭ ব্যাংক
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ একাই সাতটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়৷ এর মধ্যে ২০২২ সালে তারা ইসলামী ব্যাংক থেকে একাই ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়৷ তাদের দখলের পর একসময়কার শক্তিশালী ব্যাংকটি দুর্বল হতে শুরু করে৷
হ্যাকিংয়ের তদন্ত
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত ৬৭৯ কোটি টাকার বেশি তুলে নেয় হ্যাকাররা৷ বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই ঘটনার তদন্ত করছে৷ ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭৯ বার তারিখ নিয়েও তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি তারা৷
খেলাপি ঋণের পরিমাণ
২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা৷ ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা৷ খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে৷
ঋণ পুনঃতফসিল
খেলাপি ঋণ সময়মতো আদায় না হওয়ায় তা পরিশোধের মেয়াদ বাড়ায় ব্যাংকগুলো৷ ২০১১ থেকে ২০১৪ সালে প্রথমবার পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ৩৩ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে৷ আর তৃতীয়বার পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ক্ষেত্রে উদ্ধারের হার ৩০ শতাংশ মাত্র৷
পাচার
ব্যাংক খাত থেকে খেলাপি হওয়া ঋণ পাচার হয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ৷ ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ চার হাজার ৭০০ কোটি ডলার থেকে ছয় হাজার ৭০০ কোটি ডলার৷ এই তথ্য ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির৷