‘বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা যেন স্বাভাবিক ঘটনা'
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫হাইকোর্টে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ রবিবার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন৷ ২০০৩ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, রায়ে তাঁদেরকে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা করার অধিকারও দেয়া হয়েছে৷ ২০০৩ সালে ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন, ২০০৩' পাশ করে সে অধিকার রহিত করা হয়েছিল৷ বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই মেয়াদে ২০০২ সালের ১৬ই অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট' নামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কমপক্ষে ৫৭ জন নিহত হন৷ যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পরপরই তাঁরা মারা যান৷ মৃতদের মধ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসীও ছিলেন৷ সবার ক্ষেত্রেই বলা হতো, তাঁরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷ নিহতদের পরিবারেরই পক্ষ থেকে দাবি করা হতো, মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ নয়, যৌথ বাহিনীর নির্যাতনেই মারা গেছেন তাঁরা৷
১২ বছর আগে দায়মুক্তি দেয়া ওই কথিত ‘হত্যাকাণ্ডগুলোর' বিরুদ্ধে বিচার প্রার্থনার পথ খুলে দিয়েছে হাইকোর্ট৷ কিন্তু রবিবার এই রায় ঘোষণার দিনে বাংলাদেশে চলছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী উত্তাল আন্দোলন৷ সে কারণেই হয়ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ বিষয়ে বেশি লেখা বা মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে অনেকেই খবরটি টুইট করেছেন৷
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার দাবি সেই ২০০৩ সালের পর থেকেই উঠছে৷ কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা থামেনি৷ আওয়ামী লীগের আমলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে, হচ্ছে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে অন্তত ১০১ জন মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে৷ সম্প্রতি ছাত্র লীগ এবং যুব লীগের দুই কর্মী নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও ব়্যাব-এর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তুলেছে৷ ব়্যাব এবং পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য যথারীতি দাবি করা হয়, ওই দুই তরুণ ‘বন্দুকযুদ্ধে' মারা গেছে৷
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রসঙ্গে একটি টুইট খুবই প্রণিধানযোগ্য৷ মুক্তশ্রী চাকমা নামের একজন লিখেছেন, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা স্বাভাবিক একটা ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জনগণ – দু'পক্ষই এভাবে হত্যা করে৷
বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতার পালাবদলে যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সেগুলোসহ হালের রাজন-রাকিবের মতো শিশুর হত্যার কথা মনে করলে মুক্তশ্রীর এ মন্তব্যকে অগ্রাহ্য করা যাবে কি?
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ