বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণ
৪ জুলাই ২০১৯এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)৷ তাদের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে একশ' জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঘটনা ঘটেছে ৬৩০টি৷ শুধু তাই নয়, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জন নারীকে৷ ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন৷
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসেবে ঘটনার মাত্রা আরো ভয়াবহ৷ প্রতিদিন গড়ে ধর্ষণ মামলা হয়েছে ১১টি৷ ২০১৮ সালে পুরো বছর জুড়ে এক হাজার ২৫১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসেব বলছে, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে মোট ধর্ষণ মামলা হয়েছে ২০ হাজার ৮৩৫টি৷
এই মামলার সংখ্যার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির পেছনে বিচারহীনতাকেই দায়ী করলেন নারী নেত্রী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান৷
‘‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷ ‘‘ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ শতকরা ৪-৫ ভাগ শাস্তি হয়৷ এখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে৷ ফলে ধর্ষণ বাড়ছে৷''
বাংলাদেশের বাস্তবতায় একজন ধর্ষিতার আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা কতটা কঠিন, তা-ও তুলে ধরেন তিনি৷ বলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনায় মামলা থেকে শুরু করে তদন্ত, বিচার সবখানেই নারীকে প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয়৷ ফলে দেখা যায় প্রভাবশালীদের চাপে অনেক ঘটনাতেই আপোষ করতে হয়৷ ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রবণতাও বাড়ছে৷''
‘সাউন্ড বক্স’ বাজিয়ে ধর্ষণ
এদিকে, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে নিহত হিরা আক্তারকে ধর্ষণের সময় সাউন্ড বক্স বাজানো হচ্ছিল বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন নিহতের চাচা খলিল শেখ৷ পাশের বাড়ি থেকে এর আওয়াজ পাওয়া যায় বলে জানান তিনি৷
‘‘ঘটনার সময় সাউন্ড বক্স ছেড়ে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছিল৷ পাশের বাড়ি থেকেও সেই শব্দ শোনা গেছে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন খলিল৷
প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় ১১ বছর বয়সি মাদ্রাসা ছাত্রী হিরাকে৷ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মোড়েলগঞ্জ থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হায়েছে৷ মামলায় মোট ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে ওসমান শিকদার নামে একজন কলেজ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে থানার ওসি আজিজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘এজাহারে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে৷ আমরা প্রাথমিকভাবে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লিপস্টিকের দাগ পেয়েছি৷ তাকে ধর্ষণের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷’’
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মশিউর রহামানও প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য কিছু আলামত পাঠানো হয়েছে৷ তার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷''নিহত ঐ ছাত্রী মোড়েলগঞ্জের ছাপড়াখালী গাজীরঘাট দাখিল মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল৷ তার বাবা গাউস শেখ৷ তিনি ওই মাদ্রাসারই নৈশ প্রহরী৷ তার চাচা খলিল শেখ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তারা তিন বোন৷ সে (হিরা) সবার ছোট৷ ঘটনার সময় হিরা একাই বাড়িতে ছিল৷ তার বাবা দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন৷ মা তার এক বোনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান৷ আর আরেক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে৷ সে তার শ্বশুর বাড়িতে৷’’
ওই বাড়িতে আর কোনো ঘর নেই৷ বাড়িটি টিনশেডের, নির্মানাধীন৷ বিকেল ৪টার কিছু পরে পাশের বাড়ি থেকে তার এক ফুপু সুঁই আনতে গিয়ে দেখেন হিরার লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলছে৷ ভিতর থেকে দরজা আটকানো৷ এরপর দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়৷ লাশটি বিবস্ত্র অবস্থায় পাওয়া যায়৷
জলিল শেখ বলেন, ‘‘বাড়িটি নির্মানাধীন হওয়ায় এখনো জানালা লাগানো হয়নি৷ আর পিছন দিকে যে ফাঁকা আছে তা থেকে ঢোকা ও বের হওয়া সম্ভব৷’’