বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীর অবদান
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীর অবদান বাড়ছে৷ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৬ হাজার নারী কৃষি, শিল্প ও সেবাসহ নানা খাতে কাজ করছে৷
পোশাক খাত
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি পোশাক শিল্পখাত থেকে আসে৷ মোট গার্মেন্টসকর্মীর প্রায় ৫৪ শতাংশ নারী৷ এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট (এসিডি)-র জরিপ অনুযায়ী দেশের মোট ৪২ লাখ ২০ হাজার পোশাকশ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৪ লাখ ৯৮ হাজার৷ এই খাতে নিয়োজিত নারী কর্মী দেশের শিল্পখাতে নিয়োজিত মোট নারী কর্মীর ৭০ ভাগ৷
প্রবাসী আয়ে নারী
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬ জন নারী প্রবাসে কাজ করতে গেছেন৷ প্রবাসী আয় প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম৷ প্রবাসে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫, যা মোট সংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ৷ তারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন৷
কৃষিখাত
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট কর্মক্ষম নারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কৃষিকাজে নিয়োজিত৷ নারী শ্রমশক্তির ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়োজিত কৃষিকাজে৷ বিবিএসের ২০১৮ সালের তথ্য মতে, দেশের কৃষি খাতে নিয়োজিত আছে ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী৷
চা শিল্প
চা–শিল্পে নারীর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ চা–বাগানগুলোতে কাজ করা ১ লাখ ২২ হাজারের বেশি শ্রমিকের ৭০ ভাগই নারী৷ বাংলাদেশে ২০১৯ সালে নয় কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়৷ চা উৎপাদনের ১৬৬ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয় ২০১৯ সালে৷ (সূত্র:প্রথম আলো, জুন ২০২০)
শিক্ষা খাত
প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে নারীর জন্য ৬০ শতাংশ কোটা থাকলেও সেই সীমারেখা বেশ আগে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ৷ তবে মাধ্যমিকে শিক্ষক হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ এখনো আশানুরূপ নয়, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় এই হার নগণ্য৷ (সূত্র: প্রথম আলো)
সেবা খাত
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই খাতে ৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী৷ সেবা খাতে ৩৭ লাখ নারী কর্মরত৷
নার্স
২০২০ সালে নার্সিং ও মিডওয়াফারি অধিদপ্তরের পিএমআইএস তথ্য অনুযায়ী, দেশে পুরুষ নার্সের সংখ্যা মাত্র ৯ দশমিক ৪ শতাংশ৷ অর্থাৎ, ৯০ দশমিক ৬ শতাংশই নারী৷
পুলিশ
পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ১৬৩ জন৷ তাদের মধ্যে ডিআইজি দুই জন,অ্যাডিশনাল ডিআইজি তিনজন, পুলিশ সুপার ৭১ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১০৯ জন ও সহকারি পুলিশ সুপার ১০০ জন৷ এছাড়া ইন্সপেক্টর ১০৯, এসআই ৭৯৭, সার্জেন্ট ৫৮, এএসআই এক হাজার ১০৯, নায়েক ২১১ এবং ১২ হাজার ৫৯৪ জন কনস্টেবলও নারী৷
প্রশাসন
প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে ২৬ শতাংশ নারী৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের হিসেব অনুযায়ী, ১৪৯ জন ইউএনও ছাড়াও বর্তমানে ১০ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি), ৩৮ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এবং ১৭৩ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে নারী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন৷ এছাড়া সচিবের মধ্যে ১১ জন নারী৷ ৫১১ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী ৮৩ জন, ৬৩৬ জন যুগ্ম-সচিবের মধ্যে ৮১ জন নারী৷
কারখানা
২০১৮ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, কারখানায় ২১ লাখ ১ হাজার ৮৩০ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন আর পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৭ জন৷
জিডিপিতে নারীর ভূমিকা
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০২০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান প্রায় ২০ শতাংশ৷ এর সঙ্গে সংসারের ভেতর ও বাইরের কাজের মূল্য ধরলে তাদের অবদান বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ৷ এর অর্থ হলো, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের অবদান সমান সমান৷