1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের পোশাক সস্তায় বিক্রি হচ্ছে জার্মানিতে

৪ নভেম্বর ২০১০

পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে৷ জার্মানির অনেক প্রতিষ্ঠানে খুব সস্তায় এসব তৈরি পোশাক বিক্রি হয়৷ কিন্তু যারা এসব পোশাক শিল্প কারখানায় কাজ করছে তারা কী যথাযোগ্য পারিশ্রমিক পাচ্ছে?

https://p.dw.com/p/PxsD
ছবি: picture-alliance / dpa

তৈরি পোশাক রপ্তানির দিক থেকে অন্যান্য অনেক দেশকে পেছনে ফেলে রেখেছে বাংলাদেশ৷ বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের পোশাককর্মীদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না৷ প্রশ্ন, এ অবস্থা কী চলতেই থাকবে?

এ সপ্তাহেই বন শহরে অবস্থিত ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠিত হল ‘ক্লীন ক্লোদিং ক্যাম্পেন' অর্থাৎ ‘পরিচ্ছন্ন তৈরি পোশাক অভিযান' নিয়ে একটি আলোচনা সন্ধ্যা৷ উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে জড়িত আরিফা আখতার, জেসমিন বেগম এবং খুরশিদ আলম৷

আলডি, লিডল এবং কিক – তিনটি জার্মান প্রতিষ্ঠান৷ এসব প্রতিষ্ঠানে খুব সস্তায় বিক্রি হয় নানা ধরণের পোশাক৷ শার্ট, টি-শার্ট থেকে শুরু করে তোয়ালে, টেবিল মোছার কাপড় পর্যন্ত সেখানে সুলভ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে৷ নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভীড় একারণেই এসব দোকানে বেশি৷ এসব তৈরি পোশাকের বেশির ভাগই আসছে বাংলাদেশ থেকে৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছ থেকে খুবই অল্প মজুরি দিয়ে আদায় করে নেওয়া হচ্ছে কাজ৷ গার্মেন্টস কর্মী জেসমিন বেগমের মাসিক উপার্জন মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা৷

২৬ বছর বয়সী জেসমিন বললেন, ‘‘আমি ২০০০ সালে এ্যাসিটেন্ট অপারেটর হিসেবে প্রথমে কাজ শুরু করি৷ মাঝখানে বছরখানেক কাজ করিনি এরপর আবার শুরু করি৷ আমার বেতন তিন হাজার পাঁচশো৷ আমি চাই যে, ফ্যাক্টরির পরিবেশ ভাল হোক৷ ভাল মুজুরি দেওয়া হোক৷ শ্রমিকদের সুয়োগ-সুবিধা ভাল থাকুক৷''

Textilarbeiterin Bangladesch
ছবি: AP

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্যা আরিফা আখতার৷ তিনি নিজেও একসময় গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন৷ অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন৷ কিন্তু দেখেছেন শ্রমিক হিসেবে অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব নয়৷ শেষ পর্যন্ত যোগ দিয়েছেন শ্রমিক ইউনিয়নে৷ কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের কজের অবস্থা, পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে কী? আরিফা বললেন, ‘‘আমরা ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধাগুলো আদায় করতে চাই৷ যাতে করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ভাল একটা মজুরি পায়৷ যে কোন গার্মেন্টসে নারী শ্রমিক বেশি, তারা যেন কোন ধরণের বৈষম্যের শিকার না হয়৷ দেখা যায় যে অনেক ফ্যাক্টরিতে ছেলেদের বেতন বেশি, মেয়েদের বেতন কম৷ এগুলো আমরা তুলে দিতে চাই৷ যে সব শ্রম আইন আছে সেগুলো আমরা নারী শ্রমিকদের জানাই৷ তাদের কী কী পাওনা তা আমরা বিভিন্ন ধরণের ট্রেনিং-এর মাধ্যমে জানাই৷ ফেডারেশন এসব ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করে৷''

বাংলাদেশের গার্মেন্টেস শিল্পেরর তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে ইউরোপের নানা দেশে৷ অত্যন্ত সুলভ মূল্যে৷ আনন্দের সঙ্গে কিনে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেতারা৷ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের ভাল-মন্দ নিয়ে তাদের তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই৷ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছে তাই শ্রমিক ফেডারেশনের দাবি, ‘‘ওরা যেন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়৷ মালিকদের হাতে যেন ন্যায্য পাওনা আসে৷ তাহলে আমাদের মালিকরাও আমাদের শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দিতে পারবে৷ পুরোপুরি না হলেও বেতন কিছুটা বাড়বে, এ কথা ঠিক৷ যদি বেশি অর্থ মালিকরা পায় তাহলে সেখানে জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ আসবে৷ তাহলে আমরাও তাদের প্রশ্ন করতে পারবো৷ বাস্তব সত্য হল বাংলাদশের গার্মেন্ট্স মালিকদেরও ঠকানো হয়৷''

ডঃ গিজেলা বুর্কহার্ট ক্লিন ক্লোদিং ক্যাম্পেন নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে৷ এ সংগঠনের দাবি, সুষ্ঠুভাবে পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে গার্মেন্টসের কাজের পরিবেশ-শর্ত-নিয়ম-কানুনের উন্নতি সাধন করতে হবে৷ তিনি জানান, ‘‘যেসব প্রতিষ্ঠান সুলভে পোশাক বিক্রি করছে তাদের কাছে আমাদের দাবি শ্রমিকদের তারা যেন যথার্থ মূল্য দেয়৷ যেন একটি মেয়ে বা একটি পরিবার সেই উপার্জনে জীবন চালাতে সক্ষম হয়৷ তবে তা তারা সত্যিই করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা আসলেই কঠিন৷ কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময়ই অজুহাত দেখায় ,‘আমরা তো ঠিকমত পয়সা দিচ্ছি, কই এ ধরণের সমস্যার কথা তো শুনিনি৷' আমরা চাই জার্মান সরকারও এ বিষয়টির দিকে নজর দিক৷ আমরা আইন প্রণয়নের কথা বলছি৷ যেখানে কাজের পরিবেশসহ, সামাজিক সুযোগ-সুবিধা এবং মানবাধিকারের কথাও বলা হবে৷ অর্থাৎ এগুলো পূরণ করা না হলে আদালতে এসব প্রতিষ্ঠানকে যেন হাজির করা হয়৷ এদের বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়৷ এর ফলে বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস শ্রমিক যেন জার্মানির আদালতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক