বাংলাদেশের জন্য খারাপ সময়
১৩ ডিসেম্বর ২০১৯তাদের অভিমত বাংলাদেশকে এখন অনেক সতর্ক থাকতে হবে। এনআরসির পর ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশের জন্য নতুন ধরণের সংকট তৈরি করতে পারে। আর এর ফলে একদিকে যেমন বাংলাভাষীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে দুস্কৃতিকারীরা এখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর সুযোগ নিতে পারে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন,‘'ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভারতে গিয়ে বসবাসের প্রবণতা তৈরি করতে পারে। তারা মনে করতে পারে তারা হিন্দু রাষ্ট্রেই ভালো থাকবে। আবার ভারতে বসবাসরত বাংলাভাষী মুসলমানরা ভারত ত্যাগের জন্য নিপীড়নের মুখে পরতে পারেন। আসামে সেই পরিস্থিতি এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে। আর বাংলাদেশের দুস্কৃতিকারীরা সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর দখলের পায়তারা করতে পারে। বলতে পারে ভারতে গেলেতো নাগরিকত্ব পাবে, সেখানেই যাও৷’’
তিনি বলেন,‘‘পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এক কাতারে বাংলাদেশেও সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলে বিজেপি নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহবাংলাদেশকে অপমান ও অসম্মান করেছেন। তবে এটা নতুন নয়। এরচেয়ে খারাপ কথা নির্বাচনের সময় তারা বলেছে। তারা কট্টর হিন্দু ভোট পুরোপুরি দখলে নেয়ার জন্য এটা করছে। কিন্তু ভারতের মত দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে প্রতিবেশির সম্পর্ককেও ব্যবহার করছে। এটা উচিত নয়।’’
তৌহিদ হোসেন বলেন,''বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন ভারত সফর বাতিল করলেন তা আমি বলতে পারবো না। তবে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অমিত শাহ যা বলেছেন সে ব্যাপারে আমরা যে খুশি না তাতো এভাবে প্রকাশ করতেই পারি। ভারত পরে আরেকটি বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনার সময়ে সংখ্যালঘু নির্যাত হয়নি বলে বাংলাদেশকে একটু খুশি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে তাদের এই ধরণের কথা বলা থামবে বলে মনে হয়না। কারণ এটাই তাদের রাজনীতি।’’
আর এসব কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হবে বলে মনে করেন না তিনি। কারণ ভারত এর চেয়ে খারাপ কথা বলেছে অতীতে।
তৌহিদ হোসেন মনে করেন, ‘‘ভারতের বিশেষ করে বিজেপির এই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি বাংলাদেশের জন্য একটি খারাপ সময় ডেকে আনছে। এই সময়ে বাংলাদেশকে অনেক সতর্ক থাকতে হবে। সাবধানে থাকতে হবে।''
সাবেক রাষ্ট্রদূত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শহিদুল হক মনে করেন,‘‘দুই মন্ত্রী সফর বাতিল করে অভিনন্দনযোগ্য কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন ধরেই বলে আসছিলেন আমরা শুধু ভারতকে দিয়েই যাচ্ছি। আমরা ধারণা প্রধানমন্ত্রীই তাদের যেতে বারণ করেছেন৷ অমিত শাহ শুধু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথাই বলেননি। ভারতের পার্লামেন্টে যেদিন নাগরিকত্ব বিল উত্থাপন হয় সেদিনও অমিত শাহ প্রচুর বাংলাদেশ বিরোধী কথা বলেছেন। বহিরাগত বাংলাদেশি কথাটা বার বার বলেছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছেন। আমরা মনে হয় এর জবাব দেয়া দরকার। সেটা শুরু হয়েছে। আর এতে ভারতের সাথে আমারেদর কূটনৈতিক সম্পর্ক শীতল হবার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ আমরাতো শুধু দিয়েই যাচ্ছি।’’
তবে তিনি মনে করেন,‘‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশের চেয়ে ভারতেই বড় সংকট সৃষ্টি করবে। আসাম ও ত্রিপুরাসহ সেভেন সিস্টারের প্রকৃত অধিবাসীরাই সংখ্যালঘু হওয়ার আশঙ্কায় আছে। আর সে কারণেই তারা প্রতিবাদ করছে।’’