1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশেও গর্ভ ভাড়া!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ মে ২০১৭

গোপনে হলেও বাংলাদেশে গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তানের বাবা-মা হওয়ার ঘটনা ঘটছে৷ এখানে বিষয়টি আইনগত বৈধ না হওয়ায় কেউ তা প্রকাশ করছেন না৷ আবার কেউ কেউ ঝামেলা এড়াতে বিদেশে, বিশেষ করে ভারতে গিয়ে গর্ভ ভাড়া নিচ্ছেন৷ ফিরছেন সন্তান নিয়ে৷

https://p.dw.com/p/2c7I8
Indien Leihmutterschaft - Zydus Hospital in Anand Town
ছবি: Getty Images/AFP/S. Panthaky

বাংলাদেশে গর্ভ ভাড়া দেয়া বা নেয়ার বিষয়টি এখনো প্রচলিত নয়৷ তবে গোপনে হচ্ছে বলে খবর আছে৷ টেস্ট টিউব বেবি'র বিষয়টি আইনগতভাবে এখানে বৈধ হলেও গর্ভ ভাড়া দেয়ার বিষয়টি হয় রাখঢাক করেই৷ আইনগত জটিলতা এড়াতেই এই রাখঢাক বলে জানান একজন চিকিৎসক৷ ভারতের চেন্নাইসহ আরো কয়েকটি শহরে গিয়ে গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তানের পিতা-মাতা হয়েছেন বাংলাদেশের অনেক দম্পতি৷ তবে তারাও বিষযয়টি সামাজিক কারণে গোপন রাখেন বলে জানান নারী ও শিশু বিষয়ক একজন চিকিৎসক৷

ওই চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকার গাইনি চিকিৎসক এবং গাইনি ক্লিনিকগুলো গোপনে ঢাকায় গর্ভ ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেয়৷ নিঃসন্তান দম্পতিদের ক্লিনিকের কোনো কোনোটি গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেন৷ তবে পুরো ব্যাপারটিই হয় গোপনে৷ বাংলাদেশে গর্ভ ভাড়া নিতে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা লাগে৷''

Abdullah Shaharier - MP3-Stereo

গর্ভ ভাড়া দেয়া নারী (সারোগেট মাদার) এখানে কিভাবে পাওয়া যায়? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা ক্লিনিক বা চিকিৎসকরাই যোগাড় করে দেন৷ চেইন গড়ে উঠছে৷ তবে গর্ভ ভাড়া নেয়ার বিষয়টি প্রধানত উচ্চবিত্ত বা উচ্চ মধ্য বিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে৷''

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়ে গর্ভ ভাড়া নিয়ে বাবা-মা হওয়া এখন আর নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ অনেক নিঃসন্তান দম্পতি আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী এটা করছেন৷ তবে বেশিরভাগ দম্পতিই এজন্য ভারতকে বেছে নেন৷ আর ভারতের চেন্নাই তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে৷ ওই চিকিৎসক জানান, ‘‘এজন্য  বাংলাদেশে ভারতীয় হাসপাতালের ‘দলাল' আছে৷ তারাই বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সহায়তা করেন৷''

চিকিৎসকদের মাধ্যমে জানা যায়, নানা কারণে গর্ভ ভাড়া নিয়ে অনেকে সন্তানের পিতা বা মাতা হন৷ নারীদের জরায়ুতে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়ায় পুরুষের শুক্রাণুগুলো জরায়ুতে থাকা ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না৷ ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিশ্রণে নিষেক প্রক্রিয়াটি না ঘটার কারণে সন্তান গর্ভে ধারণ করা সম্ভব হয় না৷ তাছাড়া হিস্টারেকটমি, অতিরিক্ত ডায়াবেটিস, ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের গর্ভ ধারণ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তারা সারোগেট মাদারের শরণাপন্ন হন৷ অনেক সময় দেখা যায় অনেক ব্যস্ত নারী যাদের সন্তান ধারণের মতো দীর্ঘসময় হাতে নেই অথচ সন্তান চাই, এমন নারীরাও সারোগেট মাদারের শরণাপন্ন হন৷

বাংলাদেশে এই বিষযটি আইনগত বৈধতা না পেলেও আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ উন্নত বিশ্বে এখন বহুল প্রচলিত৷ সারোগেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি দম্পতির কাছ থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করে একটি বিশেষ ব্যবস্থায় জাইগোট তৈরি করে ‘ভাড়াটে মায়ের' গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়৷ অর্থাৎ যেই গর্ভধারণটি ওই দম্পতির নারীর গর্ভে হওয়ার কথা ছিল, সেটি সারোগেট মায়ের গর্ভে শুধু প্রতিস্থাপন করা হয় মাত্র৷ এরপর ১০ মাস ১০ দিন গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসব এসব প্রক্রিয়া সাধারণ নিয়মেই হয়ে থাকে৷ আর এর বিনিময়ে সারোগেট মাদাররা অর্থ নিয়ে থাকেন৷ সন্তানের প্রতি তাদের কোনো দাবি থাকে না৷

Rashida Begum - MP3-Stereo

চার বছর আগে ঢাকার এক দম্পতি ভারতে গিয়ে গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তান পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান ডয়চে ভেলেকে৷ তিনি জানান, ‘‘আমার স্ত্রী'র শারীরিক ঝুঁকির কারণে সন্তান নিতে ভয় পাচ্ছিলাম৷ পরে ঢাকারই এক গাইনী চিকিৎসক আমাদের সারোগেসি সম্পর্কে ধারণা দেন৷ পরে আমরাও বিষয়টি সম্পর্কে জানি৷ নিশ্চিত হয়ে ওই চিৎিসকের মাধ্যমেই আমরা ভারতের চেন্নাইয়ে গিয়ে গর্ভ ভাড়া নিই৷ সব মিলিয়ে আমাদের ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে৷ আমরা একটি কন্যা সন্তান পেয়েছি৷''

নারী ও শিশু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বাংলাদেশে এখন টেস্টটিউব বেবি'র বিষযটি বৈধ এবং প্রকাশ্য৷ এ নিয়ে এখনো কিছুটা সামাজিক রাখঢাক থাকলেও বিষয়টি এখন আর গোপন নয়৷ নিঃসন্তান দম্পতিরা টেস্টটিব বেবি নিচ্ছেন৷ আমরা এখানে গর্ভ ভাড়া দেয়া বা নেয়ার কথাও শুনছি৷ তবে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারছি না৷ কারণ, সামাজিক বিষয় ছাড়াও এটি এখানে আইনগত বৈধতা এখনো পায়নি৷ কিন্তু দেশের বাইরে গিয়ে যে কেউ কেউ সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নিচ্ছেন তা অস্বীকার করা যাবে না৷''

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন চিকিৎসক জানান, ‘‘ঢাকায় সারোগেট বেবি আছে৷ আমরা চিকিৎসকরা তাদের চিনিও৷ দম্পতিদেরও চিনি৷ তারা এখানেই করিয়েছেন৷ কিন্তু কেউ প্রকাশ করেন না৷''

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সারেগেসি হয় কিনা, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই৷ তবে আমি অনেক দম্পতিকেই চিনি, যারা এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন এবং আগ্রহ আছে৷ আর এখানে সারোগেট মাদার পাওয়া তেমন কঠিন হওয়ার কথা নয়৷ কারণ, তরুন এবং অল্প বয়সে তালাক প্রাপ্ত অনেকের মধ্যে আমি সারোগেট মাদার হওয়ার  আগ্রহ লক্ষ্য করেছি৷''

২০১৫ সালে ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্তানহীন দম্পতিদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ভারতে গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসা ক্রমশ ফুলেফেঁপে উঠছে৷ ভারতে গর্ভ ভাড়া সহজলভ্য ও খরচ কম হওয়ায় গর্ভ ভাড়া বা সারোগেসি বাণিজ্যের বাজার দাঁড়িয়েছে ১৫০০ কোটি টাকার মতো৷

ভারতে  প্রায় ২০ হাজার আইভিএফ ক্লিনিক আছে৷ এ ধরণের ক্লিনিক সবচেয়ে বেশি আছে দিল্লি, মুম্বই ও চন্ডিগড়ে৷ 

Bilkis Begum Chowdhury - MP3-Stereo

বাংলাদেশে নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগ বলে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয়৷ তবে এ ব্যাপারে সঠিক কোনো জরিপ নেই৷ কিন্তু নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য চিকিৎসা পরামর্শ দিতে ঢাকাসহ সারা দেশে অনেক ক্লিনিক আছে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম জানান, ‘‘নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য ঢাকায় অনুমোদিত ১০টি টেস্ট টিউব বেবি সেন্টার আছে৷ আর চট্টগ্রামে আছে চারটি৷ তবে সারোগেসি'র ব্যাপারটা বাংলাদেশে হয় বলে আমার জানা নাই৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘ধনী দম্পতিদের কেউ কেউ হয়তো আগ্রহী হন৷ তারা দেশের বাইরে চলে যান৷ এখানে টেস্টটিউব বেবি'র প্রবণতা বাড়ছে৷ এবং আড়াই লাখ থেকে চার লাখ টাকা খরচ করে টেস্ট টিউব বেবি নেয়া যায়৷''

ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশেও সারোগেসির আইনগত বৈধতা দেয়া উচিত৷ চিকিৎসা বিজ্ঞান একে স্বীকৃতি দেয়৷'' একই অভিমত ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী'র ৷ তিনি মনে করেন, ‘‘চুপে চাপে বা গোপনে করার চেয়ে আইনগত স্বীকৃতি দিলে অনেক জটিলতা এড়ানো যাবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য