বসন্ত উৎসবে মেতেছে গোটা বিশ্ব
শুভ নববর্ষ৷ অবাক হলেন? চীনে কিন্তু নববর্ষের সূচনা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷ তবে শুধু চীনেই নয়, ১৯শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের কাছ বছরের শুভারম্ভ তো বটেই, বসন্ত উৎসবও! বেইজিং-এর রাস্তায় রাস্তায় তাই উৎসবের আমেজ৷
ঘোড়ার পরে এলো ছাগল
চীনা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ঘোড়াবর্ষ শেষ হয়ে শুরু হয়েছে ছাগলবর্ষ, অর্থাৎ ‘ইয়ার অফ দ্য গোট’৷ চীনাদের জন্য ছাগল নম্রতা, শান্তি এবং ভালোবাসার প্রতীক৷ ১২ বছর পর পর একবার ফিরে আসে এই ছাগলবর্ষ৷ আর এর মাঝের বছরগুলো অন্য একটি প্রাণীর নামে পরিচিত হয়৷ যেমন ড্রাগন, ইঁদুর, বাঘ, খরগোশ, সাপ, বানর, ঘোড়া ইত্যাদি৷
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা
চীনা নববর্ষ হলো চন্দ্রবর্ষের সূচনা, যাকে বলে ‘লুনার ইয়ার’৷ ঈদ-দুর্গোৎসবের মতোই, নববর্ষ বা বসন্ত উৎসবে মানুষ দেশের বাড়ি যায়, যায় স্বজনদের কাছে৷ তাই যে সমস্ত অভিবাসী শ্রমিক সারা বছর দেশের বাইরে কাটান, তাঁরাও ফিরে আসেন নিজ পরিবারে৷ অন্তত একটা গোটা সপ্তাহ তাঁরা কাটিয়ে যান ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে৷ এর ফলে চীনের পরিবহন ব্যবস্থার ওপর ভীষণ চাপ পড়ে এ সময়৷
...এসো বসো আহারে...
বর্ষবরণের ঠিক একদিন আগে থেকেই শুরু হয় খাওয়া-দাওয়ার পালা৷ শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, এতে যোগ দেন পরিবারের জ্যেষ্ঠ কর্তাব্যক্তিরাও৷ নানা-নানি, ঠাকুরমা-ঠাকুরদা, বাবা-মা, ছেলে-বুড়ো, নাতি-নাতনি – সবাই মিলে চলে মহাভোজ৷ উত্তর চীনে এ সময় ‘নিয়ান গাও’ নামের বিশেষ এক ধরনের ‘ডাম্পলিং’ বা পিঠা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে৷
‘ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি’
এ উৎসবের আর একটা বৈশিষ্ট্য হলো আতশবাজির খেলা৷ চীনা ঐতিহ্য অনুযায়ী, ভূতপ্রেত তাড়ানোর জন্য বাজি পোড়ানো হয় এই সময়৷ আতশবাজির আর রঙীন বাতির আলোয় বর্ণিল হয়ে উঠে শহর৷ কিন্তু বাজির বিকট আওয়াজে শব্দ এবং বায়ু দূষণের মাত্রাও বেড়ে যায়৷ এ কারণে চীনের প্রায় ১৩৮টি শহরে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ বছর৷
সোনা, রূপা নয়, কাঠের ছাগলবর্ষ
শুধু চীনে নয়, তিব্বতেও চান্দ্র বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী নতুন বছর শুরু হয়৷ তবে সেটা হয় আরো একটা চন্দপক্ষের পর৷ রাজধানী লাসায় পোটালা প্রাসাদের সামনে শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হয়৷ তাঁদের পরনে রঙীন পোশাক, চোখে-মুখে আনন্দ৷ ১২টি প্রাণী ছাড়াও, তিব্বতিরা পাঁচটি মৌলিক উপাদানে বিশ্বাস করে৷ যেমন এ বছরের উপাদান হলো কাঠ৷ তাই বছরটা হলো ‘কাঠের ছাগলবর্ষ’৷
‘আজ আমাদের ছুটি রে ভাই...’
চীনে তো নববর্ষ এবং বসন্ত উৎসবে গোটা সপ্তাহটাই ছুটি৷ তবে চীনের বাইরে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মানুষও বসন্ত উৎসব পালন করে৷ থাইল্যান্ডে যেমন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এ দিন মন্দিরে যান৷ প্রার্থনা করেন সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য৷ হংকং এবং সিঙ্গাপুরেও বসন্ত উৎসবে সরকারি ছুটি থাকে৷ সেখানকার মানুষও তাই মেতে ওঠে আনন্দে৷
লাল রঙের উৎসব
চীন বা চীনের বাইরে যেখানেই বর্ষপূর্তি বা বসন্ত উৎসব পালন হোক না কেন, একটা রঙের প্রাচুর্য দেখা যায়৷ লাল৷ লাল রঙের বাতি, পোশাক-আশাক, লাল পাথরের অলংকার, লাল পর্দা – একেবারে লালে লাল হয়ে যায় সর্বত্র৷ এমনকি ছোটরা উপহার হিসেবে বখশিশটাও পায় লাল রঙের খামে৷ চীনা ভাষায় ‘লাল’ শব্দটির অর্থ যে ‘আনন্দ’-ও হয়!
সিংহের প্রথাগত গর্জন
যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথমবারের মতো চীনা নববর্ষ ২০১৫ উদযাপন করা হবে৷ নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে তাই এবার থাকছে নানা আয়োজন৷ এই যেমন নিউ ইয়র্ক শহরে বড় আকারের ফায়ার ওয়ার্ক-এর আয়োজন করা হয়েছে৷ আবার সিয়াটেলে থাকছে বিখ্যাত সিংহ-নৃত্য৷ এই নাচ নাকি সমৃদ্ধির প্রতীক৷ তাই আজকাল বিশ্বের বহু ‘চায়না টাউন’-এই এই নাচ দেখা যায়৷
জার্মানিতে চীনা সিংহ
ইউরোপের মধ্যে জার্মানির নর্থ রাইন ভেস্টফেলিয়া রাজ্যে চীনা নববর্ষ পালন করা হচ্ছে বেশ কয়েক বছর যাবত৷ এর মধ্যে ড্যুসেলডর্ফ শহর তো গত প্রায় দশ বছর ধরে মেতে উঠেছে বসন্ত উৎসবে৷ চীনা অভিবাসীদের মধ্যে একটা বিরাট অংশের বাস এ শহরেই৷ তাই ইউরোপের মধ্যে এখানেই চীনা ঐতিহ্যের প্রাধান্য চোখে পড়ে৷