বর্ধিত বেতনের দাবিতে শিক্ষকদের অনশন
২৫ জুলাই ২০১৯প্রাথমিক শিক্ষকরাই ভবিষ্যতের নাগরিকদের পড়াশোনার প্রথম পাঠ দেন৷ কিন্তু, তাঁদের বেতন এখনও মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে অনেকটাই কম৷ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সল্টলেকের বিকাশ ভবনে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা৷ ১৮ জন শিক্ষকের অনশন বৃহস্পতিবার ১৩ দিনে পড়েছে৷ মূলত দুটি দাবিকে সামনে রেখে এই কর্মসূচি নিয়েছে উস্থি প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন৷ বেতন বৃদ্ধি ও বদলি নীতিতে পরিবর্তন৷ বেতন বাড়ানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের টানাপোড়েন চলছে৷
প্রাথমিক শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় হারে বেতন চাইছেন৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়েশিক্ষকনিযুক্ত হলে এখন মাসের শেষে বেতন মেলে প্রায় ২২ হাজার টাকা৷ কেন্দ্রীয় হার অনুযায়ী এই বেতন প্রায় ৩৩ হাজার টাকা৷ কেন এই বেতনের দাবি তুলেছেন শিক্ষকরা? আন্দোলনকারী সংগঠনের প্রধান পৃথা বিশ্বাস বলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থা এনসিইআরটি-র নিয়ম রাজ্য সরকার কার্যকর করার পর উচ্চমাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর ও প্রশিক্ষণ না থাকলে এখন চাকরি দেওয়া হয় না৷ এই নীতি কার্যকর হওয়ার পর শিক্ষকরা তাঁদের যোগ্যতা বাড়িয়ে নিয়েছেন৷ এখন বর্ধিত যোগ্যতা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় হারে বেতন দেওয়া উচিত৷ আমরা এই দাবিটাই তুলেছি৷
এই দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের সমাবেশে তিনি বলেছেন, শিক্ষকেরা কেন্দ্রীয় হারে বেতন চাইলে কেন্দ্রের কাছে চলে যান৷ অর্থাৎ, বর্ধিত বেতনের দাবি মানছে না রাজ্য সরকার৷ তার আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বৈঠকে বসেন৷ সেই বৈঠকেও এক দাবি রাখা হয়৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাড়তি বেতনের জন্য যে টাকা খরচ হবে, তা বহন করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়৷ বর্ধিত হারে বেতন দিলে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে৷
রাজ্যের ১ লাখ ৮০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ভবিষ্যৎ এখন তাই অনিশ্চিত৷ ইতিমধ্যে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা অনশন মঞ্চে এসে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ এসেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী৷ তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন, শিক্ষকদের দাবি ন্যায্য৷ এই দাবি মেনে নেওয়া উচিত রাজ্য সরকারের৷ এনসিইআরটি নির্ধারিত যোগ্যতা যাঁরা অর্জন করেছেন, তাঁরা কেন সেই অনুযায়ী বেতন পাবেন না?
লাগাতার অনশনে পৃথা বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন৷ ফের অনশন শুরু করেছেন তিনি৷ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরো কয়েকজন৷ আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি পূরণ দূরের কথা, আন্তরিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না৷ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা দিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ৷ তিনি বলেছেন, এটা প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার যে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা প্রায় অর্ধেক বেতন পান৷ শিক্ষার বা প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে যে কিছুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে— মনে হয় সে-বিষয়ে সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন৷ এর প্রতিবাদে সংগতভাবেই নিপীড়িত শিক্ষক সমাজ আজ আন্দোলন করছেন৷
অনশন মঞ্চে এসে শিক্ষকদের সমর্থন জানিয়েছেন বিদ্বজ্জনদের৷ প্রাক্তন অধ্যাপক মিরাতুন নাহার মঙ্গলবার চার ঘণ্টার প্রতীকী অনশন করেছেন৷ তিনি বলেন, বিবেকের ঘরে তালা দিয়ে বসে আছে সরকার৷ আর শিক্ষকরা অনশন করে নিজেদের বিপন্ন করছেন৷ কেন তাঁদের ন্যায্য দাবি মানা হবে না৷ অভিনেতা কৌশিক সেনের আপত্তি সরকারের মনোভাব নিয়ে৷ শিক্ষকদের দাবিকে সমর্থন করে তিনি বলেন, যে ভাবে সরকার শিক্ষকদের বিষয়টি সামলাচ্ছে, সেটা আপত্তিকর৷ অত্যন্ত কঠোর প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে৷ যাঁরা অনশন করছেন, তাঁদের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত৷
আপাতত টানাপোড়েনে ইতি পড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ প্রাথমিক শিক্ষকদের এই আন্দোলনের ব্যাপকতা বাড়লে সরকারের উপর চাপও বাড়বে৷ বৃহস্পতিবার শাসকদলের অধীনস্থ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এক সভার আয়োজন করেছে৷ সেখানে শিক্ষামন্ত্রী কি বলেন, সে দিকেই সবার নজর৷