বন্যার কবলে বিপর্যস্ত মানুষ
১৬ জুলাই ২০২০এটা সরকারি হিসেব৷ বাস্তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এই বন্যায় ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ সবচেয়ে ক্ষতির মধ্যে রয়েছে উত্তরের জেলাগুলো৷ দেশের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷
তবে কিছু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান মনে করেন, ‘‘এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও সেই আশঙ্কা কমে আসছে৷ কয়েকদিনের মধ্যেই নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করবে৷’’ তিনি দাবি করেন, পানিবন্দি মানুষদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে৷
বন্যায় উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নিলফামারী, রংপুর, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টঙ্গাইল, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মাদারিপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, ফেনী ও নওগাঁ জেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন৷ এছাড়া ঢাকার নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হচ্ছে৷
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো উত্তরের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর প্রভৃতি জেলা৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ১৮ জেলার ৯৪ উপজেলার মানুষ এখন পানিবন্দি৷
আবহাওয়া অফিস জানায়, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রবল বৃষ্টির কারণে এই বন্যা৷ আসাম থেকে আসা বৃষ্টির পানির ঢল পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলছে৷ গত তিন-চার দিনের প্রবল বৃষ্টির পর আগামী দুইদিন বৃষ্টি কম থাকবে৷ কিন্তু ১৯ থেকে ২৩ জুলাই আবার প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ আখতার আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার আসামেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে৷ সেই পানি সিলেটের হাওড় এবং ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে প্রবেশ করে৷ আর আমাদের এখানে তো বৃষ্টি আছেই৷’’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৪টি প্রধান নদ-নদীর ২২টি পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার উপরে আছে৷ প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামন ভু্ইঁয়া জানান, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বিপদ সীমার উপরে থাকলেও নদীর পানি কমতে শুরু করেছে৷ গঙ্গা ও পদ্মা ছাড়া সব নদীর পানিই একটু একটু করে কমছে৷ তবে গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি আরো বাড়বে৷ আবার বৃষ্টি শুরু হলে অন্যান্য নদীর পানিও বাড়তে শুরু করবে৷ তখন আবার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে৷ তার মতে, ‘‘পানি নামতে শুরু করায় এখন দেশের মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে৷’’
বন্যায় পানিবন্দি এলাকাগুলোতে খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয়ের সংকট দেখা দিয়েছে৷ পানীয় জলের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে৷ সংকট দেখা দিয়েছে শিশু খাদ্যের৷ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র এবং বাঁধে অবস্থান করছেন৷ সেনিটেশন ব্যবস্থার প্রবল সংকট৷ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও পরিবেশ খারাপ এবং রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ছে৷
এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৪৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ সরকারি হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোত ৩০ হজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন৷ কিন্তু বাঁধে যারা অবস্থান করছেন, তাদের কোনো হিসাব নেই৷ জানা গেছে, বাঁধে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তারা সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন৷ আবার অনেকে পানির নীচে তলিয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘরেই মাচা বানিয়ে থাকছেন৷
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘‘বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হয়েছে৷ কাজ করছে মেডিকেল টিম৷ তাদের রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে৷ বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই তৎপরতা অব্যাহ থাকবে৷’’
ওইসব এলাকার জন্য ৫৭৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে৷ এরমধ্যে ১৮৯টি টিম কাজ শুরু করেছে৷ আট হাজার ২০০ মেট্রিক টন চাল আর নগদ দুই কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া রান্না করা খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান৷