বদলাচ্ছে পরিবেশ, প্রাণ দিয়ে তার দাম মেটাচ্ছে প্রাণীকূল
২৭ জানুয়ারি ২০১১কেনিয়ার সাইমন ইয়কিম কিরু এখনো মনে করতে পারেন এই কিছুদিন আগেও ভোরে পাখির ডাকে তাঁর ঘুম ভাঙতো৷ ঘুম থেকে উঠলেই বিভিন্ন গাছে তিনি দেখতে পেতেন অসাধারণ সব পাখির নাচ আর উড়ে-বেড়ানো৷ তিনি বসবাস করতেন আবেরডেয়ার ন্যাশনাল পার্কের কাছে৷ পৃথিবীর প্রায় সব পাখিই এই পার্কে ভিড় করে৷ কারণ এখানে সবচেয়ে বেশি পাখি আসে, সঙ্গী-খুঁজতে৷ আর এসব পাখিরা বিভিন্ন সংকেত দিত৷ যদি ধনেশ পাখি দেখা যেত তাহলে কিরু বুঝে নিতেন ‘বৃষ্টি এগিয়ে আসছে', অর্থাৎ বীজ বোনার সময় এখন৷ যদি কোন বাজপাখি বুক ফুলিয়ে উড়ে বা বসে থাকে তার মানে, ‘অতিথি আসছে' আর যদি মাঝ রাতে পেঁচা ডাকে তার মানে,‘মৃত্যুর খবর শুনতে হবে'৷
৫৮ বছর বয়সী সাইমন কিরু জানান, পাখির এসব ডাক শুনে অনেক কিছু বোঝা যেত৷ এখন আর কোন সংকেত নেই, কারণ পাখিগুলোই যে নেই৷
গত দুই দশকে অনেক খোলা জায়গা ধ্বংস করা হয়েছে৷ তৈরি করা হয়েছে ঘর-বাড়ি আর কারখানা৷ যেখানে পাখি থাকতো সেখানে এখন মানুষ বসবাস করছে৷ গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে৷ পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে৷
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী একশো বছরে পৃথিবীর বুক থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রাণী পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে৷ এর বেশির ভাগই নিঃশ্চিহ্ন হবে তাপমাত্রার কারণে৷ যদি তামপাত্রা ৩.৬ থেকে ৫.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত যায় তাহলেই হবে৷ কারণ বেশির ভাগ প্রাণীই ঠান্ডা নয় কিন্তু শীতল তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে৷ উষ্ণতাও কোন সমস্যা নয় কিন্তু কোন অবস্থাতেই এই প্রাণীগুলো গরম সহ্য করতে সক্ষম হবে না৷ যদি তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে ৫০ শতাংশ প্রাণী হারিয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে৷ জাতিসংঘের পরিবেশ দপ্তর থেকেও কথাগুলো নিশ্চিত করা হয়৷
তবে সবচেয়ে বেশি মাথা ঘামানো হচ্ছে পোলার বেয়ার নিয়ে৷ অথচ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আফ্রিকা থেকে শুরু করে, অ্যামেরিকা, দক্ষিণ অ্যামেরিকা সব জায়াগাতেই প্রাণীকূলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি৷
তবে মানুষ এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আগে প্রাণীরাই সাবধান হয়ে গেছে৷ তারা নিজেরাই উঁচু জায়াগায় চলে যাচ্ছে৷ যে জায়গাগুলো তুলনামূলকভাবে শীতল সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে প্রাণীরা৷ এর জন্য প্রাণীদের পাড়ি দিতে হচ্ছে হাজার হাজার মাইল৷ এর মধ্যেই অসংখ্য প্রাণী আবার গিয়ে পড়ছে শিকারীদের হাতেও৷
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ওয়াল্টার ইয়েট্স জানান, খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় আর যাই হোক প্রাণীগুলো উত্তর মেরু যাবে না৷ তার আগেই প্রাণীগুলো নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়