বঙ্গোপসাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে খুব শিগগিরই চুক্তি
১০ আগস্ট ২০০৯জ্বালানি সম্পদের জন্য অসীম সম্ভাবনাময় দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গণনা করার হয়৷ কিন্তু যথাসময়ে অনুসন্ধান না করার কারণে বাংলাদেশে চাহিদা অনুসারে গ্যাস উত্তোলন এবং সরবরাহ করা যাচ্ছে না৷ ফলে বাড়ছে সংকট৷
রয়েছে আড়াই বছরের চাহিদা মেটাবার গ্যাস
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে আবিষ্কৃত ২৩টি গ্যাসক্ষেত্রে বর্তমানে মজুদের পরিমাণ মাত্র ৭ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)৷ যদি আর নতুন গ্যাস না পাওয়া যায় তবে এই গ্যাসে ২০১১ সাল পর্যন্ত (প্রায় আড়াই বছর) চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে৷ তবে বর্তমানে সম্ভাব্য আরো প্রায় ৫ দশমিক ৫০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট মজুদকে প্রমাণিত মজুদ করা গেলে তা দিয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে৷
শিগগিরই সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রপ্রান্তিক তেল গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর জন্য উৎপাদন বন্টন চুক্তি বা পিএসসির প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্ত করেছে বলে জানা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহি বার্তা সংস্থা ডাও জোনস নিউজওয়্যারকে জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি৷ খুব শিগগিরই ব্লকগুলো ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷ অপরদিকে, জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, এ মাসের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷
অন্যদিক, জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মহসিন এ ব্যাপারে বলেন, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিদেশী কোম্পানিগুলোকে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু নির্দেশনা পেয়েছি৷এ মুহূর্তে আমরা এসব নিয়েই কাজ করছি৷
নতুন যাদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গভীর ও অগভীর সমুদ্রের ২৮টি ব্লকের মধ্যে ১৫টি ব্লকের জন্য ২২টি দরপ্রস্তাব পায় পেট্রোবাংলা৷ যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো ফিলিপস, অস্ট্রেলিয়ার স্যানটোস ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের লংউডস রিসোর্স লিমিটেড, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল অয়েল করপোরেশন, যুক্তরাজ্যের কমট্রেক সার্ভিস লিমিটেড, তাল্লো বাংলাদেশ ও চীনের সিনোক ব্লকগুলোতে অনুসন্ধানের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয়৷ এদের মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে কনোকো ফিলিপস ও তাল্লো বাংলাদেশকে যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়৷
মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস গভীর সমুদ্রের ১০, ১১, ১২, ১৭, ১৫, ১৬, ২০, ২১নং ব্লকের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয়৷ অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ডের কোম্পানি তাল্লো বাংলাদেশ অগভীর সমুদ্রের ৫নং ব্লকের জন্য প্রাথমিকভাবে যোগ্য কোম্পানি বলে চিহ্নিত হয়েছে৷
জানা গেছে, অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার অনুমতি পেলে আগামী ২৫ বছরের জন্য এই বিদেশী দুই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করবে পেট্রোবাংলা৷ চুক্তি হওয়ার দুই বছরের মধ্যে প্রতিটি কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসন্ধানী কূপ খনন করতে হবে৷
উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) অনুযায়ী এ দুই বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে গ্যাস বিক্রি করে গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকলে বাড়তি গ্যাস এলএনজি আকারে গ্যাস রপ্তানি করতে পারবে৷ পিএসসি মডেলে প্রাপ্ত গ্যাসের দাম বিষয়ে পূর্বের নীতিই অনুসরণ করা হয়েছে৷ স্থল প্রান্তিক ব্লকের ২৫ ভাগ বেশি দাম দেয়া হবে এ গ্যাসের৷
ব্লক ইজারার শুরু ২৫ বছর আগে
পিএসসি'র আওতায় ১৯৮৪ সালে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরের ছয়টি ব্লক (আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি) আইওসিকে দেয়া হয়৷ পরে ১৯৯১ সালে দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে আটটি ব্লক নিয়ে আওসি'র সঙ্গে চুক্তি হয়৷
এ সময় সিলেটের একটি আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রসহ ১২, ১৩ ও ১৪নং ব্লক নিয়ে অক্সিডেন্টালের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়৷বর্তমানে এটি পরিচালনা করছে ইউনোকল বাংলাদেশ লিমিটেড৷ তারা জালালাবাদ থেকে প্রতিদিন ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ড থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে৷এছাড়া সাগরের অন্যদিকে ১৫ ও ১৬নং ব্লক নিয়ে কেয়ার্ন এনার্জির সঙ্গে পিএসসির সই করা হয়৷বর্তমানে সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে৷একই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ২২নং ব্লকের জন্য ইউএমসি'র সঙ্গে পিএসসি চুক্তি করা হয় এবং পরে তা আসে ওশান এনার্জির কাছে৷ বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ ব্লক এখন পেট্রোবাংলার কাছে ফেরত এসেছে৷এদিকে, বঙ্গোপসাগরের ১৭ ও ১৮নং ব্লক নিয়ে পিএসসি চুক্তি করা হয় অকল্যান্ড-রেক্সউডের সঙ্গে৷বর্তমানে এটি পরিচালনা করছে টোটাল ও তাল্লো ওয়েল পিএলসি৷
১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ২য় দফা বিডিং আহ্বান করে৷এ সময়ও পিএসসি দলিলে কিছু সংশোধন করা হয়৷এ সময় দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করে নির্বাচিত কোম্পানির সঙ্গে আরও চারটি ব্লক নিয়ে পিএসসির সই করা হয়৷ এর মধ্যে ৯নং ব্লকে তাল্লো গ্যাস আবিষ্কার করেছে৷কেয়ার্ন এবং শেভরন তাদের তিনটি ব্লকে কাজ শুরু করেছে৷
পরে গত ২০০৮ সালে গভীর ও অগভীর সমুদ্রের ২৮টি ব্লকের মধ্যে ১৫টি ব্লকের জন্য ২২টি দরপ্রস্তাবডাকা হয় তৃতীয় দফা দরপত্র৷ কিন্তু সেই দরপ্রস্তাবই এখন চুড়ান্তের পথে৷
প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক