বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা
১৫ আগস্ট ২০১৩বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে ৫ জনের দণ্ড কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৮শে জানুয়ারি৷ আরেকজন লে. কর্নেল (অব.) আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবোয়েতে মারা যান৷ কিন্তু এখনো দেশের বাইরে পলাতক আছেন ৬ জন৷ তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত খবর আছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান অ্যাডভোকেট আনিসুল হক৷ তিনি জানান, মেজর (অব.) রাশেদ চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থান করছেন৷ তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ সেই আবেদনের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি৷
আনিসুল হক আরও জানান, আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় রাশেদকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছেনা৷ তিনি মনে করেন, আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তাকে ফেরত আনা সম্ভব হবে, কারণ, এর আগে লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনা হয়েছিল৷ সেখানে তাঁর আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, ২০০৭ সালের ১৭ই জুন তাকে ফেরত পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র৷ এর আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেজর বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে ফেরত আনা হয়েছিল বন্দি বিনিময় চুক্তি করে৷
অন্যদিকে মেজর (অব.) নূর চৌধুরী এখন ক্যানাডার টোরন্টোতে অবস্থান করছেন৷ তিনিও ক্যানাডা সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন৷ তবে তাঁর আবেদন গ্রহণ করেনি সে দেশের সরকার৷ কিন্তু নূর চৌধুরী ফাঁসির আসামি হওয়ায় ক্যানাডার আইনে সুবিধা পাচ্ছেন৷ ক্যানাডায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই৷ তাই তাঁরা তাঁদের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ডের আসামিকে তাঁর নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেনা৷ নূর চৌধুরী নতুন এক আবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে৷ তবে ক্যানাডা তাঁকে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে পারে৷ বাংলাদেশের সরকার এখন সেই প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছে বলেও জানান আনিসুল হক৷
এদিকে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতে আছেন বলে অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে৷ তবে তার অবস্থান স্পষ্ট নয়৷ বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকবার তাকে ভারতের কাছে ফেরত চেয়েছে৷ ভারতও বার বার বলছে, ভারতে থাকলে তাকে ফেরত দেয়া হবে৷
আনিসুল হক জানান কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম এবং ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদ কোথায় আছেন তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ তাদের সবার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা আছে৷ তাদের মধ্যে একমাত্র শরিফুল হক ডালিমের তত্পরতার কথা জানা যায়৷ তিনি তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মাঝে মধ্যে মতামত দিয়ে থাকেন৷
আনিসুল হক জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে৷ তিনি নিজেও তাঁর সদস্য৷ তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে বিশ্বের সব দেশের কাছে পলাতক ৬ জনের ব্যাপারে তথ্য এবং তাদের ফেরত চেয়ে আবেদন জানিয়েছে৷ তিনি মনে করেন, পলাতক ৬ জনকে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা জরুরি, নয়তো বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার অসমাপ্তই থেকে যাবে৷