‘‘গোঁফ দিয়ে’’ গোল!
২৪ জুন ২০১৪ফুটবল হলো জীবন, আর বিশ্বকাপ হলো সেই জীবনের সবচেয়ে বড় সিরিয়াল৷ নয়ত ব্রাজিল যেখানে একটানা উন্নতি করে চলেছে – কোথায় মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ড্র, আর কোথায় ক্যামেরুনকে ৪-১ গোলে নস্যাৎ করে দেওয়া! – সেখানে হঠাৎ ফ্রেডের গোঁফ নিয়ে পড়লাম কেন? কথায় বলে: গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা৷ সেরকম কোনো কাহিনি নয় তো?
তাহলে গোঁফের গল্পটাই আগে বলা যাক, ফ্রেড যেমন বলেছেন৷ ৪৯ মিনিটের মাথায় ডেভিড লুইজের বাঁ দিক থেকে করা ক্রসটিতে হেড করে গোল করেন ফ্রেড, চলতি বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম গোল৷ নয়ত এ বিশ্বকাপ তাঁর ভালো যাচ্ছিল না৷ এমনকি ফ্রেড নাকি তাঁর গোঁফ ছেঁটে ফেলার কথা ভাবছিলেন৷ নেইমারের ভাষ্যে: ‘‘আমি ও-কে বলেছিলাম, ‘ফ্রেড, তুমি যদি গোঁফটা রাখো, তাহলে তুমি গোল করবে৷ গোঁফ কখনো ব্যর্থ হয় না৷' গোল করার পর আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম, ‘দেখলে তো? বলেছিলাম না, গোঁফ কখনো ফেল করে না?''' ফ্রেডের ভাষ্যে: ‘‘বললে কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু বলটা খুব জোরে এসে আমার গোঁফে লাগে৷ ওটা ছিল একটা গোঁফ দিয়ে করা গোল৷''
এই ফ্রেড-ই গতবছরের কনফেডারেশনস কাপে পাঁচটি গোল করেছিলেন, তার মধ্যে দু'টি ফাইনালে, স্পেনের বিরুদ্ধে৷ ব্রাজিলের কোচ লুইজ ফেলিপে স্কোলারি সে যাবৎ পারতপক্ষে তাঁর ‘উইনিং টিম' বদলাননি, এমনকি বিশ্বকাপের জন্যেও নয়৷ ফ্রেড ও পাওলিনিয়োর প্রতি তাঁর আস্থা অটুটই রয়েছে৷ যে ব্রাজিল এককালে রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনিয়ো এবং রিভাল্ডো, এই ত্রয়ীর উপর নির্ভরশীল ছিল, তাদের সবেধন নীলমণি এখন ২২ বছর বয়সি নেইমার: এ-তে স্কোলারি নিন্দনীয় কিংবা আশঙ্কাজনক কিছু দেখেন না৷ নেইমার সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য: ‘‘আমরা নেইমারের উপর নির্ভর করি, যেমন আর্জেন্টিনা মেসির উপর নির্ভর করে৷ টপ লেভেলের প্লেয়াররা সব দলেই ঐ পার্থক্যটুকু এনে দেয়৷ আমরা যা করি, তার অনেকটাই নেইমার৷''
কিন্তু শুধু নেইমার নয়! গ্রুপ পর্যায়ে ব্রাজিলের তৃতীয় এবং শেষ খেলা সেটাই প্রমাণ করল৷ ইতিমধ্যেই একটা হলদে কার্ড দেখা আছে বলে আগেভাগেই নেইমারকে বার করে নিলেন স্কোলারি – কেননা হলদে কার্ড থাকবে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি, মুছে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছালে৷ স্কোলারি তাঁর ব্রহ্মাস্ত্রটিকে একটি ম্যাচের জন্যও হারাতে রাজি নন৷ অপরদিকে ব্রাজিল যে দল হিসেবে এগোচ্ছে, বহু মাল্লার দাঁড়া টানা ঢাউস নৌকার মতো ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে, সেটা স্কোলারি এবং তাঁর সন্তানসুলভ ‘স্টার' নেইমার, দু'জনেই লক্ষ্য করেছেন৷
সোমবার ম্যান-অফ-দ্য-ম্যাচ হবার পর নেইমার বলেছেন: ‘‘দলই হলো সবচেয়ে বড় কথা আর এটাই ছিল এ যাবৎ আমাদের বেস্ট পারফর্মেন্স৷ শুধু কতগুলো গোল করেছি, সেজন্য নয়, বরং আমরা যেভাবে খেলেছি, সেজন্য৷....আমরা ঠিকপথে চলেছি, একটানা বেড়ে চলেছি, আমাদের স্বপ্নকে সত্যি করার দিকে এগোচ্ছি৷'' স্কোলারি বলেছেন: ‘‘আমরা প্রায় আদর্শ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি, নকআউট রাউন্ডে যাবার আগে সেখানে পৌঁছানোটা জরুরি৷ এবার আমাদের আরো কম ভুল করতে হবে৷ গ্রুপ স্টেজে একবার পা পিছলোলে কোনো আপত্তি নেই, অন্য দু'টো ম্যাচ জিতলেই হলো৷ এবার আর সেটা করা যাবে না কেননা একটা গোলেই জয়পরাজয় নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে৷''
অথবা একটা ম্যাচে৷ গ্রুপ এ-র বিজয়ী হিসেবে নক-আউট রাউন্ডে ব্রাজিলের প্রথম খেলা আগামী শনিবার, গ্রুপ বি-র রানার্স-আপ চিলির সঙ্গে৷ স্কোলারি সে বিষয়ে আদৌ সুখি নন: ‘‘এর আগে চিলির বিরুদ্ধে দু'বার খেলেছি৷ আমরা জানি ওরা কতটা মুশকিলের প্রতিপক্ষ৷ লোকে ভাবে আমরা সহজেই চিলিকে হারাব, কিন্তু ওরা আসলে একটা ‘ওয়েল অর্গানাইজড, কোয়ালিটি সাইড'৷ যদি বিপক্ষ দলকে বেছে নেওয়া চলতো, তাহলে আমি চিলিকে বাছতাম না৷''
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)