ফ্রান্সে ফের লকডাউন, জার্মানিতে বাড়ছে কড়াকড়ি
২৯ অক্টোবর ২০২০করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জের। শুক্রবার থেকে ফের সম্পূর্ণ লকডাউনের নির্দেশ দিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও সোমবার থেকে আংশিক লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছেন।
গত এক সপ্তাহে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার প্রকোপ লাফিয়ে বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সে করোনার সংক্রমণ হয়েছে ৩৪ হাজার। তার পরেই বুধবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসেন মাক্রোঁ। আলোচনার শেষে জরুরি ভিত্তিতে লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন তিনি। নতুন নিয়ম বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ করেছেন, যেন সকলে নিয়ম মানেন।
মাক্রোঁর বক্তব্য, যে ভাবে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে দ্রুত হাসপাতালগুলি ভর্তি হয়ে যাবে। মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। অন্য প্রদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও সম্ভব হবে না। কারণ, দেশের সর্বত্র করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এই সময়ে লকডাউন মানতেই হবে সকলকে। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এর জন্য যে আর্থিক ক্ষতি হবে, সরকার সে দিকে লক্ষ্য রাখবে বলেও মাক্রোঁ কথা দিয়েছেন। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বৃহস্পতিবারই ১০ হাজার ইউরোর ইনসেনটিভ বা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তিনি।
লকডাউনের নিয়ম
স্কুল, কাজ এবংচিকিৎসার প্রয়োজনে মানুষ বাড়ির বাইরে বেরতে পারবেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরলেই প্রশাসনকে তার কারণ জানাতে হবে। এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যাতায়াত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিটি সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে। বার, রেস্তোরাঁ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া ঘোরাঘুরি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, অধিকাংশ ক্লাস যেন অনলাইনে করানো হয়। অফিসের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়িতে বসেই অফিস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে এক ঘণ্টার জন্য বাড়ির বাইরে এক্সারসাইজ করতে যাওয়া যাবে।
প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নিয়ম চালু থাকবে। তারপর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ফরাসি জনগণের কাছে মাক্রোঁর অনুরোধ, তাঁরা যেন নিয়মগুলি পালন করেন।
জার্মানিতে আংশিক লকডাউন
বুধবার রাতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও আংশিক লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছেন। খুব প্রয়োজন না হলে জার্মান নাগরিকরা যাতে বাড়ির বাইরে না বের হন, তার অনুরোধ জানিয়েছেন চ্যান্সেলর। স্কুল খোলা থাকলেও অনলাইন ক্লাসের উপর জোর দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়েছেন, গণপরিবহন চালু থাকবে। কিন্তু একসঙ্গে বেশি মানুষ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। কোনো সমাবেশে দশ জনের বেশি একত্রিত হতে পারবেন না। সিনেমা হল, থিয়েটার বন্ধ থাকবে। বার, রেস্তোরাঁও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। পর্যটকদের জন্য হোটেল বন্ধ। বিশেষ দরকারে কেউ হোটেলে থাকতে পারেন।
প্রশ্ন উঠছে, চ্যান্সেলর আংশিক লকডাউনের নিয়ম ঘোষণা করলেও সকলে তা মানবেন তো? জার্মানিতে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে। মাস্ক ছাড়া শয়ে শয়ে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন আংশিক লকডাউন বিধি কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় তৈরি হয়েছে। ম্যার্কেল অবশ্য বলেছেন, মানুষের প্রতিবাদের অধিকার আছে। ফলে এই পরিস্থিতিতেও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ প্রদর্শনে কোনো বাধা থাকছে না।
ইটালি এবং স্পেনও গত ২৪ ঘণ্টায় সব চেয়ে বেশি সংক্রমণের কথা জানিয়েছে। তারই মধ্যে ইটালিতে কড়াকড়ির বিরুদ্ধে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। রাস্তায় পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ চলছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)