ফ্যাশন ডিজাইনে আফগান পুনরুত্থান
‘আফগানিস্তান মানেই জঙ্গিবাদ’ এই পরিচয়ের পরিবর্তন চান আমস্টারডাম-ভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার নাভেদ ইলিয়াস৷ উদ্ভাবনী ডিজাইনের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ভাবমূর্তি নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়াস শুরু করেছেন তিনি৷
ধ্বংসাবস্থা থেকে পুনরুত্থান
পশ্চিমা বিশ্বে পাগড়ি, লম্বা আলখাল্লার মতো আফগান পোশাককে প্রায়ই ইসলামি জঙ্গিদের সাথে সম্পৃক্ত করে দেখা হয়৷ কিন্তু এই বেশভূষা সত্যিকার অর্থে সমৃদ্ধ আফগান সংস্কৃতির অংশ৷ আমস্টারডামে সর্বশেষ ফ্যাশন শো ‘রাইজ ফ্রম দ্য এশেজ’ বা ধ্বংসাবস্থা থেকে পুনরুত্থানে এই পশ্চিমা ধারণা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন আফগান বংশোদ্ভূত ডাচ নাগরিক নাভেদ ইলিয়াস৷
ইতিহাসে আলোকপাত
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজের করা ডিজাইনের প্রদর্শনী করেছেন ইলিয়াস৷ জন্মভূমি এবং নিজের সংস্কৃতির শেকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই গড়ে তুলেছেন নিজের কোম্পানি ‘জাজাই’৷
যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি
ইলিয়াসের জন্ম ১৯৯৩ সালে আফগানিস্তানে৷ সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর কাবুলের ক্ষমতা দখল নিয়ে দেশটির বিভিন্ন ইসলামি যোদ্ধাদের সংগঠনের মধ্যে তখন চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ৷ সেই স্মৃতি কিছুটা মনে আছে ইলিয়াসের৷ তার ডিজাইনেও আছে সেই যুদ্ধের প্রভাব৷
আফগানিস্তানের রং
আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্বতার ওপর ভিত্তি করে জাজাইয়ের রং এবং ধাঁচেও আছে আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ৷ আফগান শেকড় হলেও ইলিয়াসের ডিজাইন প্রভাবিত হয়েছে পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারাও৷
মঞ্চের পেছনের গল্প
মডেলরা মঞ্চে আসার আগে প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় খতিয়ে দেখেন ইলিয়াস নিজেই৷ প্রতিটি মডেলকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপনের জন্য তাদের পেছনে আলাদা করে সময় দেন তিনি৷ লক্ষ্য একটাই, নিজের উদ্দেশ্য সবচেয়ে ভালোভাবে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা৷
শৃঙ্খলে আবদ্ধ আফগানিস্তান
র্যাম্পে ক্যাটওয়াকের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকে না ইলিয়াসের ফ্যাশন শো৷ ‘রাইজ ফ্রম দ্য এশেজ’ শোতে ফুটিয়ে তোলা হয় যুদ্ধ ও বোমায় বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ইতিহাস৷ এই ছবিতে আফগানিস্তান কিভাবে সহিংসতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছে, সেটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে৷
আশার আলো
এই আফগান-ডাচ ডিজাইনার মনে করেন তরুণরাই আফগানিস্তানের ভবিষ্যত৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি তরুণদের একটা বিকল্প চিন্তাধারার সন্ধান দিতে চাই৷ অন্ধভাবে নেতাদের পেছনে ছোটা তরুণ আফগানদের ত্যাগ করতে হবে৷’’ এই ছবিতে একজন মডেল এক শিশুকে কোলে নিয়ে আছেন৷ ইলিয়াস সেই আশার আলোই ফুটিয়ে তুলতে চান এই শিশুর মাধ্যমে৷
রাজনৈতিক বক্তব্য
দেশের বাইরে অনেকদিন ধরে বসবাস করলেও আফগানিস্তান নিয়ে ইলিয়াসের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার৷ নিজের কাজের মাধ্যমে আফগান রাজনীতি, দুর্নীতি এবং যুদ্ধবাজদের কঠোর সমালোচনা করতে চান ইলিয়াস৷ তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই আমি রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করি৷ আমি আমার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা প্রকাশে কুণ্ঠিতও নই৷’’