ফেসবুক নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে অনেকে
২২ মে ২০১৩‘আপত্তিকর' মন্তব্য বা ছবি যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ না পায়, সে জন্য তা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷ তার জন্য কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ ইন্টারনেট গেটওয়েতে নজরদারির জন্য ফিল্টারিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি৷ এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে দরপত্রও আহ্বান করা হয়৷ বাংলাদেশে ইন্টারনেট গেটওয়ে মোট ২৯টি৷
কিন্তু ফেসবুক বা টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ন্ত্রণ বা ফিল্টারিং-এর বিরোধিতা করেছেন তথ্য প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, এটা সরাসরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ৷ তিনি বলেন, একের পর এক এই নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবইে গ্রহণযোগ্য নয়৷ এর আগে টেলিফোনে আড়িপাতার ব্যবস্থা চালু হয়েছে৷ এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একই ব্যবস্থার শিকার হতে যাচ্ছে৷
তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকার আপত্তিকর বলতে কী বোঝাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়৷ এই ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিকসহ নানা ধরণের হয়ারনির কাজে ব্যবহার হতে পারে৷ কারণ যা সরকার বা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পছন্দ করবেনা, তাই তাদের কাছে আপত্তিকর মনে হবে৷ তাহলে তো আর নাগরিকরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন না৷ আর মনে রাখতে হবে, সরকার বিরোধিতা এবং রাষ্ট্রদ্রোহ এক নয়৷''
জাকারিয়া স্বপন জানান, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আছে৷ কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সে সব দেশসহ সারা পৃথিবীতে নিন্দিত৷ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশ সেইসব দেশের তালিকায় নাম লেখাবে, তা ভাবা যায়না৷ তিনি বলেন, ‘‘আইনগতভাবে কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা যায়৷ যাকে বলে ল-ফুল ইন্টারসেপশান৷ সারা পৃথিবীতেই সে ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু মানুষের ব্যক্তিগত যোপন তথ্য ব্যক্তিগত মাতামত ফিল্টার করা বা তা দেখার ব্যবস্থা করা আইনসম্মত নয়৷''
ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সিনিয়র রিপোর্টার ফাল্গুনী দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যক্তিগত বা গ্রুপ ভিত্তিক ভাবের আদান প্রদানের একটি উপায়৷ তিনি চাননা সেটার ওপর কোন ধরণের হস্তক্ষেপ হোক বা তা অযাচিতভাবে দেখা হোক৷ তাঁর মতে, এসব করা হলে মানুষ তো আর মন খুলে কথা বলতে পারবেনা৷ তাঁর ধারণা, এ ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে বাংলাদেশে ফেসবুক এবং টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাবে৷
এদিকে বাংলাদেশে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা৷ আর তাতে দেখা যায় অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ বিরোধী৷ তাঁরা মনে করেন, এই মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে তেমন সুবিধা করা যায়না৷ কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যারা ব্যবহার করেন, তারা বেশ সচেতন৷ তাই সরকারকে এ নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷
আর সরকার বলছে, রাষ্ট্রীয়, সমাজ, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় – এমন ধরণের মন্তব্য, ছবি বা কোনো উপাদান যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রকাশ না পায়, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা৷