ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি পুলিশের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ
রেস্তোরাঁয় শেফ-এর সহকারি হওয়ার আশায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রতিবন্ধী তরুণ ইয়াদ হালাক৷ প্রতিদিনের মতো সেদিনও হেঁটে যাচ্ছিলেন স্কুলে৷ ইসরায়েলের পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে তাঁকে৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত....
ইয়াদ হালাকের কী অপরাধ?
ইয়াদ হালাক৷ বয়স ৩২৷ তবে আচরণে ঠিক আট বছরের শিশুর মতো৷ স্বপ্ন ছিল বড় কোনো রেস্তোরাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট শেফ হবেন৷ এলউইন এল কুদস সেন্টারে চলছিল প্রশিক্ষণ৷ মে মাসের শেষ শনিবার সকালে পূর্ব জেরুসালেমের পুরাতন শহর থেকে হেঁটে সেখানেই যাচ্ছিলেন৷ ইসরায়েলের সীমান্ত পুলিশ পথেই গুলি করে হত্যা করে তাকে৷
পুলিশের মিথ্যা বিবৃতি
লায়ন্স গেটের কাছে গুলি করে হত্যা করার পর ইয়াদ হালাকের পরিচয় এভাবেই তুলে ধরেছিল ইসরায়েলের সীমান্ত্র পুলিশ৷ এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ’’পিস্তলের মতো একটা সন্দেহজনক জিনিস নিয়ে এক ব্যক্তিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়৷’’ বাধা দিতে চাইলে সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে এবং পুলিশ তাকে ‘‘দৌড়ে তাড়া করে’’৷ বারবার থামতে বলা সত্ত্বেও না থামায় তাকে গুলি করতে বাধ্য হয় পুলিশ৷
এক শিক্ষিকার আপ্রাণ চেষ্টা
ইয়াদ হালাকের এক শিক্ষিকা দূর থেকে দেখছিলেন পুরো ঘটনা৷ শিক্ষার্থীর বিপদ দেখে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি৷ ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তাদের হিব্রু ভাষায় চিৎকার করে বলছিলেন, ‘‘ও প্রতিবন্ধী৷ ও কারো ক্ষতি করে না৷’’ তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি৷ কেউ শোনেনি তাঁর কথা৷ রাস্তার পাশের এক ডাস্টবিনের আড়ালে লুকিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন ইয়াদ৷ পুলিশের গুলিতে সেখানেই লুটিয়ে পড়ে তাঁর দেহ৷
ইসরায়েলি পুলিশের ভুল স্বীকার
পরে ইয়াদ হালাকের কাছে যে কোনো অস্ত্র ছিল না তা স্বীকার করে নেয় ইসরায়েলের পুলিশ৷ তার কাছে কোনো পিস্তল বা অন্য কোনো আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া না যাওয়ার কথা স্বীকার করা হয় এক বিবৃতিতে৷ (ফাইল ফটো)
তদন্ত শুরু
ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয়৷ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, ঘটনায় জড়িত দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
‘ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা সহজ’
ইয়াদ হালাকের এমন মৃত্যুতে এলউইন এল কুদস সেন্টারে নেমেছে শোকের ছায়া৷ স্থানীয়রাও শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ৷ এলউইন এল কুদস সেন্টারের অন্য শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা আতঙ্কিত৷ এক ছাত্রীর বাবা ইমাদ মুনা বলছিলেন, ‘‘ (ইসরায়েলের) ওই লোকগুলোর কাছে হত্যা যেন সহজ একটা ব্যাপার৷ বিষয়টা খুব আতঙ্কের৷ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা সহজ৷’’ (ফাইল ফটো)
যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড, ফিলিস্তিনে ইয়াদ হালাক
ইয়াদ হালাক হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা৷ পশ্চিম তীরের বেথেলহাম শহর এবং জেরুসালেমের বিক্ষোভ সমাবেশে ইয়াদের প্রতি ইসরায়েলি পুলিশের নিষ্ঠুরতাকে তারা তুলনা করেছেন জর্জ ফ্লয়েডের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের আচরণের সঙ্গে৷ ‘ ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর মতো করে তাই অনেক বিক্ষোভকারী তাদের প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘প্যালেস্টিনিয়ান লাইভস ম্যাটার৷’
ইসরায়েলেও প্রতিবাদ
ইসরায়েলের মানবতাবাদীরাও বসে নেই৷ ইয়াদ হালাক হত্যায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে তেল আবিব, জাফা এবং আরো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তারা৷
‘ওখানে যাওয়া ছিল ওর আনন্দ’
বাবা কাহেইরি হালাক জানালেন, বয়স ৩২ হলেও আসলে ইয়াদ ছিলেন আট বছরের শিশুর মতো৷ প্রথম এক মাস এক শিক্ষক স্কুলে নিয়ে যান তাকে৷ তবে পথ চিনে ফেলার পর একাই হেঁটে যেতে চাইতেন৷ শিক্ষকরা ইয়াদকে বুঝিয়েছিলেন, ‘‘স্বাবলম্বী হতে হবে, স্বাধীনভাবে একা চলতে হবে৷’’ একা স্কুলে যেতে দিয়ে সন্তান হারানোর শোক মানতে পারছেন না কাহেইরি হালাক! মানতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর সন্তান আর কোনোদিন ফিরে আসবে না৷
ইসরায়েলের দুঃখ প্রকাশ
এক মন্ত্রিসভা বৈঠকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গানৎস বলেছেন, ‘‘এ ঘটনায় আমরা সত্যিই দুঃখিত৷ (ইয়াদ হালাকের) পরিবারের শোকের অংশীদার আমরাও৷’’ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘ইয়াদ হালাকের সঙ্গে যা ঘটেছে তা বড় ধরনের ট্র্যাজেডি৷ তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন, অথচ অতি স্পর্শকাতর একটি স্থানে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া তাকে জঙ্গি মনে করা হয়েছে৷"