1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্নের মুখে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা

৩ সেপ্টেম্বর ২০১১

নাম ছিল ‘প্রোগ্রেস এম-১২এম’৷ কিন্তু নামের মর্যাদা রাখতে পারেনি৷ বলছি রাশিয়ার একটি মনুষ্যবিহীন মহাকাশযানের কথা, যেটা সম্প্রতি দুর্ঘটনায় পড়ে৷ সেই সঙ্গে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণাকে৷

https://p.dw.com/p/12STp
মহাকাশযান সোয়ুজকে ট্রেনে করে উড্ডয়নস্থলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছেছবি: AP

ইতিহাস

ইউরি গ্যাগারিনের কথা মনে আছে৷ মহাকাশে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি তিনি৷ মাত্র ২৭ বছর বয়সে নিজের নকশা করা যান ‘ভস্টক' নিয়ে মহাকাশে গিয়েছিলেন তিনি৷ সেটা ছিল ১৯৬১ সাল৷ মানে এ বছর পালিত হচ্ছে ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশে যাওয়ার ৫০তম বার্ষিকী৷

গ্যাগারিন রুশ নাগরিক ছিলেন৷ তাই রাশিয়ার জন্য এই বছরটি বিশেষ গৌরবের৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল নাসার শাটল কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ার খবর৷ তার মানে, মহাকাশ গবেষণায় প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যামেরিকার চেয়ে রাশিয়ার এগিয়ে যাওয়া৷ সব মিলিয়ে রাশিয়ার মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ভাল সময়ই কাটার কথা৷ কিন্তু সেটা কী হচ্ছে? উত্তর - না৷

কয়েকটি দুর্ঘটনা

একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়ার সাফল্যের ইতিহাস৷ এই বিতর্কে সবশেষ যোগ হয়েছে ‘প্রোগ্রেস এম-১২এম' দুর্ঘটনা৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস'এর জন্য পানি, অক্সিজেন আর জ্বালানি নিয়ে রওয়ানা হয়েছিল মনুষ্যবিহীন এই স্পেসক্রাফটটি৷ কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই সাইবেরিয়ার আলতাই অঞ্চলে ভেঙে পড়ে প্রোগ্রেস৷ পরিবেশবাদীরা ঐ এলাকায় মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন৷ কারণ মহাকাশযানে ছিল প্রায় দেড় টন জ্বালানি, যেটা খুবই বিষাক্ত৷

Juri Gagarin
ইউরি গ্যাগারিনছবি: AP

গত নয় মাসে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে অনেক৷ কিছুদিন আগে ‘এক্সপ্রেস-এএম৪' নামের একটি টেলিযোগাযোগের স্যাটেলাইট রাডার থেকে হারিয়ে যায়৷ পরে অ্যামেরিকা সেটিকে খুঁজে পায়৷ পরে জানা যায়, স্যাটেলাইটটি একটি ভুল অরবিটে চলে যায়৷

গত বছর ডিসেম্বরে তিনটি নেভিগেশন স্যাটেলাইট প্রশান্ত মহাসাগরে ভেঙে পড়ে৷ ঐ ঘটনার পর রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস'এর প্রধানের পদ থেকে আনাতলি পারমিনভকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ তিনমাস পর একটি সামরিক স্যাটেলাইটও ভুল অরবিটে চলে যায়৷

রাশিয়ার একটি দৈনিক সংবাদপত্র ‘কমারসান্ত' বলছে এভাবে একের পর এক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি ইউরো৷

কারণ

রাশিয়ান স্পেস একাডেমি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরিস লিয়াশচুক ডয়েচে ভেলেকে বলেন, দুর্ঘটনাগুলো কেন ঘটেছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেননা৷ দুর্ভাগ্য একটা কারণ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷ তবে লিয়াশচুকের আশা, এটা কোনো স্থায়ী সমস্যা নয়৷ কেননা সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ দেয়া হয়েছে এবং ব্যাপারটা নিয়ে রুশদের মধ্যে উৎসাহও বেড়েছে৷

জার্মান মহাকাশ সংস্থা ডিএলআর'এর প্রধান ইয়োহান-ডিট্রিশ ভ্যোরনার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন এজন্য শুধু রাশিয়ার উপর নির্ভর করলে চলবেনা৷

অবশ্য ইতিমধ্যে এক বিবৃতিতে রসকসমস জানিয়েছে যে, তারা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নাসা'র সহায়তা নিচ্ছে৷

Baikonur Launch Pad
ছবি: Yuzhny Space Center

আইএসএস মিশন নিয়ে দুশ্চিন্তা

এদিকে সবশেষ দুর্ঘটনার কারণে আইএসএস'এ পরবর্তী মিশনগুলো পরিচালনার আগে ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া৷ ফলে পিছিয়ে যেতে পারে মহাকাশযান ‘সোয়ুজ'এর আইএসএস যাত্রা৷ রাশিয়ার দুজন আর যুক্তরাষ্ট্রের একজন নভোচারীকে নিয়ে সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখে সোয়ুজের মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার কথা৷

এছাড়া আইএসএস'এ থাকা তিন নভোচারীর সেপ্টেম্বরের আট তারিখে পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে৷ সেটিকেও পিছিয়ে দেবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই তিন নভোচারীর মধ্যে একজন মার্কিন৷ উল্লেখ্য, শাটল কর্মসূচি শেষ হয়ে যাওয়ায় মার্কিন বিজ্ঞানীদের মহাকাশে যাওয়া আসা করার জন্য এখন রাশিয়ার মহাকাশযানের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ অন্তত আগামী তিন-চার বছর এভাবেই চলতে হবে মার্কিনীদের৷ এর মধ্যেই তৈরি হয়ে যেতে পারে কোনো এক বেসরকারি কোম্পানির মহাকাশযান৷ উল্লেখ্য, স্পেসক্রাফট তৈরিতে নাসা কয়েকটি কোম্পানিকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে৷ মহাকাশযান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন হওয়ায় নাসা নিজে স্পেসক্রাফট তৈরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়