প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন
৬ জুলাই ২০১২জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের জীবজগতের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে জাপানের শিজুয়োকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশের জীববিজ্ঞানী মো. নজরুল ইসলাম৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে ডিডাব্লিউ'কে জানান, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত কার্বিন ডাই-অক্সাইড সমুদ্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ পরিবেশ থেকে প্রায় ৫০ ভাগ কার্বন ডাই-অক্সাইড সমুদ্র শুষে নিচ্ছে৷ যার কারণে সমুদ্রের পিএইচ কমে যাচ্ছে৷ ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে৷ বিশেষ করে প্রবাল এবং কম্বোজ জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণীসমূহের শক্ত খোলস গলে যাচ্ছে৷''
এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে গবেষণা করছেন শিজুয়োকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা৷ তবে বাংলাদেশের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সেখানকার গবেষক নজরুল ইসলাম৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাদের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ কিন্তু আমাদের অযত্ন ও অবহেলার কারণে সেটা সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারছি না৷ সিওএস, নানা ধরণের সার এবং রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে৷ তলানি জমে যাচ্ছে৷ সমুদ্র সৈকতে যথেচ্ছা নির্মাণ কাজের ফলে চিরহরিৎ বৃক্ষসহ বনায়ন ধ্বংস হচ্ছে৷ বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড৷ অধিকতর উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সমুদ্র পৃষ্ঠ৷ এসব কারণে প্রবাল জগত ধ্বংস হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি রয়েছে অধিক হারে মৎস্য শিকার৷ এছাড়া মাছধরার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে ধ্বংসাত্মক উপায়৷ বিশেষ করে বড় বড় মাছ ধরতে ডিনামাইট ব্যবহার করায় সমুদ্রতলের উদ্ভিদ ও প্রাণী জগত ভীষণভাবে ক্ষতি হচ্ছে৷''
সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপ কিংবা দ্বীপপুঞ্জ মানুষের অবসর কাটানোর এক আকষর্ণীয় স্থান৷ সেই হিসেবে বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন পর্যটকদের আরো বেশি করে কাছে টানে৷ ফলে ঐ অঞ্চলে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা৷ কিন্তু পর্যটকদের যথেচ্ছা আচার-আচরণের ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র যে হুমকির মুখে সেদিকে যেন কারো নজর নেই৷ তাই ঐ অঞ্চলের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র রক্ষায় পর্যটন শিল্পের উপর কড়া নজরদারি ও পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পনার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন নজরুল ইসলাম৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের বিশাল জনপদ ক্ষতির সম্মুখীন৷ তাই পরিবেশগত দিক থেকে সমূহ ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা অনেক কিছুই ঠিকমতো বুঝে ওঠার আগেই যেন শেষ হয়ে যায়৷ তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাঁচতে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে৷'' পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যবহার্য সামগ্রী ভোগ করার ক্ষেত্রে সংযমী ও যত্নশীল হওয়া, নবায়নযোগ্য ও পুনর্বার ব্যবহারযোগ্য পণ্যের বাজার সৃষ্টি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো এবং আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার সুপারিশ করেন তিনি৷ এছাড়া পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন প্রকল্প ও তহবিল গঠন এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি আমদানি ও ব্যবহার বৃদ্ধির উপর জোর দেন নজরুল ইসলাম৷
প্রতিটি দেশের পরিবেশ রক্ষায় ২৫ শতাংশ বনভূমি দরকার৷ কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ শতাংশ বনভূমি রয়েছে৷ ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অধিকহারে বনায়ন এবং বিদ্যমান বনাঞ্চলকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর কথাও তুলে ধরেন তিনি৷ বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের পেছনে বায়ু দূষণ, পানি দূষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি অধিক জনসংখ্যা ও অধিক হারে মাছ চাষকেও দায়ী করেন এই জীব বিজ্ঞানী৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ