প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য
১৩ জানুয়ারি ২০১৩বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘প্রায়' প্রতিষ্ঠিত একটা ব্যাপার হলো, যে দল সরকারের পক্ষে তারা সব বিষয়েই পক্ষে, আবার যে দল বিপক্ষে, অর্থাৎ যারা বিরোধী দল তারা সরকারের ভালো-মন্দ সবকিছুরই বিরুদ্ধে৷ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং আরো কয়েকটি দল এ ক্ষেত্রে এবার বেশ চোখে পড়ার মতো ব্যতিক্রম দেখাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভই করেছে মূলত একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার অঙ্গীকার করে৷
সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা গত ডিসেম্বরে সকাল-সন্ধ্যার এ হরতাল করেছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবিতে৷ সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা, আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানায় আগুনের জন্য মালিকসহ দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেয়া এবং দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিও ছিল৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়টি আওয়ামি লীগের পক্ষে গেলেও বিএনপিসহ দেশের বাকি বিরোধী দলগুলো এটা সসর্থন করছেনা, অন্যদিকে দ্রব্য মূল্য কমানো কিন্তু সব বিরোধী দলেরই দাবি৷ এভাবে বাংলাদেশের প্রচলিত ধারায় ‘না সরকারি না বিরোধী' হওয়ায় ডিসেম্বরের সেই হরতাল দেশের সবচেয়ে বড় দুটি দলের সমর্থন পায়নি৷ তারপরও সফল হয়েছিল শান্তিপূর্ণ সেই হরতাল৷
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেল তাঁর দল এবং তিনি ঠিক আগের জায়গাতেই রয়েছেন৷ অর্থাৎ সমালোচনা করার জায়গাগুলোতে খুব কঠোর সমালোচক আবার সমর্থনের জায়গাতে খুব আন্তরিক৷ তাই দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের অসারতা, শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরতে তিনি সংশয়হীন, আবার মানবতা বিরোধীদের বিচারের ব্যাপারে তিনি খুব প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷
তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে সরকারের বর্তমান অবস্থান এবং কার্যপ্রণালীকে অনেকটা অকার্যকরই মনে করছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম৷ তাঁর মতে, যুদ্ধাপরাধের বিপক্ষে এবং দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হলে এবং জামায়াতে ইসলামীসহ স্বাধীনতা বিরোধী অন্যান্য শক্তিকে হারাতে হলে এখন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে হবে, একাত্তরের মতোই ‘‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে হবে৷''