প্যারিসে সাংবাদিক হত্যা
৮ জানুয়ারি ২০১৫মুখোশধারী দুই আততায়ী একটি রেনো ক্লিও গাড়িতে করে পেট্রোল পাম্পটিতে পৌঁছায়৷ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধী বিশেষ পুলিশ এখন দলে দলে গ্রামটিতে পৌঁছেছে, এমনকি পাশের গ্রামটির আকাশেও হেলিকপ্টার ঘুরছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন সেই গ্রামের মেয়র৷ তৃতীয় এক সহকারী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে৷
৩২ বছর বয়সি শেরিফ কুয়াশি ও তার ৩৪ বছর বয়সি সহোদর সঈদ বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ব্যঙ্গ-পত্রিকা ‘শার্লি এব্দো’-র কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আটজন সাংবাদিক, দু’জন পুলিশ অফিসার, এক মেরামত কর্মী এবং একজন অতিথিকে হত্যা করেছে৷ এছাড়া যে ১১ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর, বলে জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি৷
শার্লি এব্দো পত্রিকাটি ঐ দিনই প্রকাশিত হবার কথা ছিল, তাই নিউজরুমে একটি সম্পাদকীয় কনফারেন্স চলছিল, এবং যে সব সম্পাদক, কার্টুন-আঁকিয়ে ও প্রবন্ধকার ক্ষেত্রবিশেষে বাড়িতে বসে কাজ করেন, তারাও এ দিন উপস্থিত ছিলেন৷ পরে জানা যায়, হত্যাকারীরা প্যারিসেই মানুষ হয়েছে; কাজেই তারা পরিষ্কার ফরাসিতে কথাবার্তা বলছিল৷ এছাড়া তারা বিশেষ বিশেষ সম্পাদক ও ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের নাম ধরে ডেকে তাদের শনাক্ত করার পর গুলি করে হত্যা করছে বলে প্রকাশ৷
শেরিফ কুয়াশিকে ২০০৮ সালে দেড় সালের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল ইরাকে জিহাদি প্রেরণের দায়ে৷ সে সময় শেরিফ বলেছিল, সে নাকি বাগদাদের আবু ঘ্রেইব কারাগারে ইরাকি বন্দিদের উপর মার্কিন সৈন্যদের নিপীড়নের কথা শুনে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণা পায়৷
শেরিফ ও তার ভাই সঈদের বর্তমান মনোভাব সম্পর্কে একাধিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে: যেমন তাদের ‘‘আল্লাহু আকবর'' ধ্বনি দিতে, কিংবা ‘‘আমরা হজরত মোহাম্মদের প্রতিশোধ নিয়েছি! আমরা শার্লি এব্দোকে হত্যা করেছি!'' - এই মর্মে চিৎকার করতে শোনা গেছে৷ এছাড়া এক প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি পরে প্যারিসের অপর একটি এলাকায় এই দুই বন্দুকধারীকে দেখেন, তিনি জানিয়েছেন যে, কুয়াশি ভ্রাতৃদ্বয় অপর একটি গাড়ি কব্জা করার সময় উপস্থিত মানুষজনকে বলেছে, ‘‘তোমরা মিডিয়াকে বলতে পারো, এটা ছিল ইয়েমেন-এর আল-কায়েদা''৷ কুয়াশিদের এক সহযোগী, ১৮ বছর বয়সি মুরাদ হামিদ গোড়াতেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে পূর্ব ফ্রান্সের একটি ছোট শহরে: সে সম্ভবত পুলিশি অনুসন্ধান তথা মিডিয়ার চাপ সহ্য করতে পারেনি৷
শার্লি এব্দো ব্যঙ্গ-পত্রিকার সাংবাদিক, শিল্পী ও কর্মীদের উপর এই জঘন্য আক্রমণ সারা বিশ্বে উষ্মা ও সহানুভূতির ঢেউ তুলেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ট্রেলিয়া অবধি হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে, ‘ভিজিল' করে, ‘আমি শার্লি', এই নিশান তুলে ধরে তাদের সংহতি জানিয়েছেন৷ শার্লি এব্দোর উপর আক্রমণ যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ, তা-তে কারো সন্দেহ নেই৷
এসি/ডিজি (এপি, এএফপি)