1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে স্বপ্নও

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৩ নভেম্বর ২০১৩

হরতালে ককটেল আর যানবাহনে আগুনের ঘটনায় যাঁরা পুড়ছেন, তাঁদের দুর্বিষহ অবস্থা চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই৷ যিনি পুড়েছেন, একমাত্র তিনিই বুঝতে পারবেন এ যন্ত্রণা৷ আহতদের কেউ কেউ এই নরকযন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করছেন৷

https://p.dw.com/p/1AGXb
Smoke rises as a bus burns on a street after a nationwide strike was called, in Dhaka November 9, 2013. The opposition Bangladesh Nationalist Party (BNP) on Saturday announced another 84-hour nationwide strike, starting on Sunday, after police arrested BNP leaders, triggering violent protests across the country. No one claimed responsibility for setting the bus on fire and no casualties were reported, authorities said. Picture taken November 9, 2013. REUTERS/Mahmud Opu (BANGLADESH - Tags: POLITICS CIVIL UNREST)
ছবি: Reuters

গত তিন সপ্তাহে মোট ১০ দিন হরতাল পালন করল বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলীয় জোট৷ এই হরতালকে কেন্দ্র করে শুধু ঢাকাতেই ককটেল আর যানবাহনে আগুনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন৷ নারী, শিশু, এমনকি প্রতিবন্ধীরাও রেহাই পাননি আগুন থেকে৷ তাঁদের কারুর পুরো শরীর ঝলসে গেছে৷ আবার কারুর গেছে হাত-পা৷ কারুর চোখ নষ্ট হয়েছে৷ কারু বা ঝলসে গেছে পুরো শরীর৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিত্‍সক ডা. পার্থ শংকর পাল ডয়চে ভেলেকে জানান, এখন তাদের কাছে ২৪ জন চিকিত্‍সাধীন আছেন৷ হঠাত্‍ করে হরতালের কারণে পোড়া রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায়, তাঁরা তাঁদের চিকিত্‍সা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন৷ তবে এটাই একমাত্র বিশেষায়িত চিকিত্‍সা কেন্দ্র হওয়ায়, তাঁরা রোগীদের অন্য কোনো হাসপাতালে পাঠাতেও পারছেন না৷ তাই মেঝেতে রেখে হলেও তাঁদের চিকিত্‍সা দেয়া হচ্ছে৷

যাঁরা আগুনে বা ককটেলে আহত হয়েছেন, তাঁদের সবার করুণ কাহিনি প্রায় একই রকম৷ হরতালে বাস বা অন্য কোনো যানবাহনের যাত্রী হিসেবে আগুনের শিকার হয়েছেন তাঁরা৷ কোথাও বা বাসে সরাসরি আগুন দেয়া হয়েছে৷ কেউ আহত হয়েছেন যাত্রাবাড়িতে, কেউ সায়েদাবাদ, কেউ মহাখালি আবার কেউবা শিকার হয়েছেন মিরপুর এলকায়৷ আহতদের কাছ থেকে জানা যায়, বাসে আগুন বা ককটেল-বোমা ছোড়া হয় হঠাত্‍ করে৷ তবে যাত্রী হিসেবে বাসে উঠেও আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ এরা যাত্রীদের নামারও সময় দেয় না৷

বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতর তারেক আহমেদ জানান, তিনি বাসের মাঝের সিটে ছিলেন৷ অনেক যাত্রী দ্রুত নেমে গেলেও তিনিসহ কয়েকজন আর নামতে পারেননি৷ আগুন তাঁদের গ্রাস করেছে৷ পুরনো ঢাকায় সন্ধ্যার পর একটি লেগুনায় (হিউম্যান হলার) পেট্রোল-বোমা ছুড়ে মারা হলে, রবিবার রাতে ছয়জন যাত্রীই অগ্নিদগ্ধ হন৷ তাঁদের একজন আবুবকর সিদ্দিক জানান, তিনি ভাবতেও পারেননি যে তাঁর জীবনে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে৷ তাঁর জীবনের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে এভাবে৷

যাঁরা পুড়ে গেছেন, তাঁদের আত্মীয়স্বজনও এখন দিশেহারা৷ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খলিলের স্ত্রী শাহানা বেগমের কান্না যেন থামছে না৷ কারণ. গুরুতর আহত খলিল শেষ পর্যন্ত বাঁচবেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না৷ আর বাঁচলেও কর্মক্ষম থাকার আশা খুবই কম৷ শাহানা বেগম জানান, হরতালের আগুনে শুধু তাঁর স্বামীই পোড়েননি, পুড়েছে তাঁদের গোটা সংসার৷

ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, যাঁরা এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাঁদের শরীরের ২৫ ভাগের বেশি পুড়ে গেছে৷ তাঁদের অবস্থা সত্যিই আশঙ্কাজনক৷ তিনি জানান, তাঁদের বড় একটি অংশ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন৷ কয়েকজনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে৷ তাঁদের জন্য সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই৷

Activists from Bangladesh's Jamaat-e-Islami set fire to a pile of cotton material on a street during the first day of a two-day-long strike to protest against the decision by the country's war crimes tribunal to deliver judgement in the cases involving their top leaders in Dhaka March 3, 2013. Bangladesh deployed troops on Sunday to a town where eight people were killed in clashes between police and Islamist party supporters protesting against the conviction of party leaders on charges stemming from the country's 1971 independence war. Bangladesh has been rocked by protests and counter-protests since January, when a tribunal set up by the government to investigate abuses during the war of independence against Pakistan handed down its first conviction, sentencing a leader of the Jamaat-e-Islami party in absentia to death. REUTERS/Andrew Biraj (BANGLADESH - Tags: POLITICS CIVIL UNREST CRIME LAW)
নারী, শিশু, এমনকি প্রতিবন্ধীরাও রেহাই পাননি আগুন থেকে (ফাইল ফটো)ছবি: Reuters

হরতালে এই নৃশংসতার জন্য বিরোধী দল দায়ী করছে সরকারকে৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, সরকারের লোকজন এই সব ঘটনা ঘটিয়ে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপাচ্ছে৷ অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন৷

এরপরও সামনের সপ্তাহে আবারও হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে৷ নেতারা হরতালে মাঠে না থাকলেও ককটেল আর আগুন যে থাকবে, তা বলা যায় প্রায় নিশ্চিত করেই৷ বলা বাহুল্য, বার্ন ইউনিটে আরো বাড়বে আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা৷ পুড়বে মানুষ, পুড়বে সংসার, পুড়বে কপাল৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য