জন্ম নিয়ন্ত্রণ
৩০ মে ২০১২জন্মনিরোধ এবং জন্মনিরোধ
বিশ্বের এক এক প্রান্তে এক এক রকমের ছবি৷ ইউরোপের অধিকাংশ দেশে, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড কিংবা ক্যানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় মানুষের জন্মহার বেশ কম৷ তারা চায় আরও শিশু জন্মাক৷ আর অন্যদিকে, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে মানুষের সংখ্যা উল্কার মত বেড়ে চলেছে৷ এমনিতেই বিশ্বের জনসংখ্যা জন বিস্ফোরণের কাছকাছি পৌঁছবে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে, বলছে সমীক্ষা৷ সুতরাং, সেদিকে তাকালে তো অবশ্যই ভাবতে হবে, কী ভাবে জনসংখ্যার এই তীব্র গতিতে বাড়বৃদ্ধিকে ঠেকানো যায়৷ আর সেই জন্যই ক্রমাগত চলছে নানা ধরণের নিরীক্ষা৷ জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক উপায় হিসেবে কনডমের ব্যবহার তো গোটা বিশ্বেই প্রচলিত৷ তার সাহায্যে শুধু যে জন্মহার কমানো যায়, তাই-ই নয়, সেইসঙ্গে এইডস বা এইচআইভি-র মত মারণ রোগের বাড় বিস্তারকেও ঠেকানো সম্ভব হয়৷ সুতরাং, কনডম অত্যন্ত কার্যকরী এক আবিষ্কার৷ জন্মহার নিয়ন্ত্রণের আর যা প্রচলিত উপায়, তা হল মহিলাদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি৷ যার সাহায্যে নারী নিয়মিত জীবনযাপনের পরেও গর্ভবতী হয়না এবং তার সাহায্যে জন্মহার নিয়ন্ত্রিত হয়৷ তারপরেও পুরুষের জন্যও এমনই কোন উপায়ের সন্ধানে ছিল বিজ্ঞান৷ সন্ধান চলছিল এমন এক পথের, যাতে নারীর মতই পুরুষও কোন বিশেষ বড়ি খেলে তার শুক্রাণুর তেজকে নিয়ন্ত্রিত করা যাবে৷ ফলে জন্মহার বাড়তে পারবে না৷
জিনের নাম ‘কাটনা ওয়ান'
‘কাটনা ওয়ান'৷ অবশেষে জানা গেছে পুরুষের জন্যও সেই বিশেষ বড়ি প্রস্তুতের সম্ভাবনা৷ এডিনবড়ার গবেষকরা সেই পথ খুঁজে পেয়ে গেছেন৷ প্রাথমিকভাবে ইঁদুরদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে বোঝা গেছে, পুরুষের শরীরে শুক্রাণুকে ক্ষমতাশালী করে যে জিন, তার নাম ‘কাটনা ওয়ান'৷ বিশেষ এই জিনের ক্ষমতা যদি কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যায়, তাকে যদি দুর্বল করে ফেলা যায়, তাহলেই আর নারীর গর্ভে ভ্রুণ তৈরি করতে পারবে না পুরুষের শুক্রাণু৷ তার ফলে অনেক সহজ হয়ে যাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি৷ কারণ, প্রচলিত যেসব পদ্ধতি সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে, বহু দেশে দেখা যায় ধর্মীয় কারণে কিংবা নারী পুরুষের শারীরিক মিলনের আনন্দকে বাধাগ্রস্ত না করতে কনডমের ব্যবহার সব সময়ে অনেকে করে না৷ দ্বিতীয় যে উপায়টি য়েছে, তা হল পুরুষের নির্বীজকরণ বা ভ্যাসেক্টমি৷ এক সময়ে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হলেও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিস্তর৷ ক্ষেত্র বিশেষে ভ্যাসেক্টমি বা নির্বীজকরণের ফলে অনেক পুরুষের শারীরিক শক্তি ব্যাহত হয়েছে এমন ঘটনার উদাহরণও কম নয়৷ তাছাড়া, মানসিক দিক থেকে ভ্যাসেক্টমি করাতে রাজি হন না, এমন পুরুষের সংখ্যাও কম নয়৷
নতুন পদ্ধতি কী তাহলে পিল?
সেটাই বিজ্ঞানের নতুনতম চমৎকার বললে ভুল বলা হবেনা৷ যদিও আপাতত পরীক্ষা নিরীক্ষার স্তরে রয়েছে পুরো বিষয়টিই৷ তবু, একথা বললে ভুল হবে না যে বিজ্ঞান একটা সমাধানসূত্র পেয়ে গেছে৷ আসলে এখানে অন্য একটি বিষয়কেও মাথায় রাখতে হবে, আর তাহল, বিগত বহু বছর ধরে এই জন্ম নিয়ন্ত্রণের দায় নারীর ওপরেই চাপিয়ে রেখেছে এ যাবৎ প্রচলিত ব্যবস্থা৷ নারীর শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটিয়ে তার সাহায্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের এই একই পদ্ধতি পুরুষের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা গেলে তাতে দ্বিবিধ উপকার৷ বলছে বিজ্ঞান৷ কারণ, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষে নারীর ওপর যে ধরণের প্রভাব তৈরি করে থাকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি, পুরুষের ক্ষেত্রে তার প্রভাব ততটা বেশি নাও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলটি৷
তবে এরপরেও সবকিছুই অনুমান সাপেক্ষ৷ কারণ পুরুষের শুক্রাণুকে নিস্তেজ করার এই যে নতুন আবিষ্কার, তাকে তৈরি করতে, যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সহ সম্পূর্ণ করতে সময় লাগবে অনেকটাই৷ তারপরেও প্রয়োজনীয়তাই হল আসল কথা৷ আর বিশ্বের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এমন একটি ম্যাজিক বড়ির জন্য অনেকদিনের অপেক্ষা তো আগে থেকেই ছিল৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় (এপি, এএফপি)
সম্পাদনা: জাহিদুল হক