পুরস্কার পেল রোহিঙ্গাদের দুর্দশার ছবি
১৩ এপ্রিল ২০১৮মানবজাতির আতর্নাদ বা সঙ্কট ভেনেজুয়েলার ফটোগ্রাফার রোনাল্ডো শেমিদ তাঁর ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করে জিতে নিয়েছেন চিত্রসাংবাদিকতার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অ্যাওয়ার্ড’৷
কী ছিল সেই ছবির বিষয়? সমস্যায় জর্জরিত সমাজের প্রতিফলন ঘটাতে রোনাল্ডো তাঁর ফটোর কম্পোজিশন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন নিজের দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশকে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক বিক্ষোভকারী ছুটছেন৷ তাঁর সর্বাঙ্গে আগুনের শিখা৷ এই ছবিটি ভেনেজুয়েলার সরকারবিরোধী প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল৷
গত বছর অশান্ত হয়ে উঠেছিল ভেনেজুয়েলা৷ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছিলেন৷ সেই প্রয়াস রুখতে পথে নামে জনতা৷ সেই উত্তপ্ত ভেনেজুয়েলার কারাকাসে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এক বিক্ষোভকারীর গায়ে আগুন লাগে৷ ৩ মে এই সংঘর্ষ চলাকালীন একটি মোটরবাইকেলের গ্যাস ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটে৷ তাতেই সালাজার নামে এই বিক্ষোভকারীর শরীরে আগুন লাগে৷ অগ্নিদগ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচেছিলেন তিনি৷ এই ঘটনাই রোনাল্ডোর আলোকচিত্রে উঠে আসে সার্থকভাবে৷
এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে চর্চিত বিষয়টিও স্বাভাবিকভাবে আলোকচিত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে৷ সাধারণ সংবাদ বিভাগে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরলেন অস্ট্রেলীয় আলোকচিত্রী প্যাট্রিক ব্রাউন৷ রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সংবাদ মাধ্যমে ইতিমধ্যে নানাভাবে উঠে এসেছে৷ প্যাট্রিক অনেকটা সেই পথে হেঁটেই একটি নৌকাডুবির পরের দৃশ্যের ছবি তুলেছেন৷ কমপক্ষে ১০০ রোহিঙ্গা এই নৌকা করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন৷ কিন্তু বাংলাদেশের মাটি ছোঁয়ার আগেই এই নৌকাডুবি হয়৷ তাতে মাত্র ১৭ জন বেঁচেছেন৷ রোহিঙ্গাদের মৃতদেহের সেই সারবদ্ধ ভয়ার্ত ছবি খুব দক্ষতার সঙ্গে উঠে এসেছে প্যাট্রিক ব্রাউনের ছবিতে৷
ছবি শুধু ছবি হলেই চলবে না৷ তার মধ্যে থাকতে হবে মৌলিক সংবাদের গুরুত্বও৷ সেই মাপকাঠিতেই নির্ধারণ করা হয় ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো’র পুরস্কার৷
২০১৮ সালে মূল পুরস্কারের জন্য ছয়টি আলোকচিত্রকে বেছে নিয়েছিলেন বিচারকেরা৷ অন্যান্য আটটি বিভাগের প্রতিটির জন্য সমসংখ্যক ছবি বেছে নেওয়া হয়েছে৷ সব মিলিয়ে সেরা চিত্রসাংবাদিক হওয়ার দৌড়ে আছেন ২২টি দেশের ৪২ জন চিত্রসাংবাদিক৷ এঁদের মধ্যে ১৫ জন অতীতেও সম্মানিত হয়েছেন৷ ২৭ জন নতুন মুখ৷
ভবিষ্যতে চিত্রসাংবাদিকতার সম্ভাবনা যে প্রচুর, সে নিয়ে আশাবাদী এবারের প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক এবং প্যারিস ম্যাচ পত্রিকার চিত্র বিভাগের প্রধান জেরোমে হফার৷ তিনি বলেন, ‘‘আশা করা যায় ছবিগুলির গুণমান উন্নত হবে, সংবাদের ভাষ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে নয়া আঙ্গিক দেখা যাবে৷’’
স্টুয়ার্ট ব্রাউন/ পিএস