পাহাড়ে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
১৬ জুন ২০১৭রাঙামাটি এবং বান্দরবানে ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে৷ কিন্তু এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও পানি সরকরাহ না থাকায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়৷আর যাঁরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি, তাঁদের কাছে ত্রাণ পৌছাচ্ছে না৷ কোথাও কোথাও প্রয়োজন বিবেচনা না করে খাবারের পরিবর্তে শুধু খাবার স্যালাইন পাঠানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে৷
রাঙামাটি টিভি স্টেশন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মামুন নামের একজন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘আমাদের কাছে কোনও খাবার পৌঁছায়নি৷ এমনকি পানি পর্যন্ত পাইনি৷ টিভিস্টেশন কেন্দ্রে একজন এসে কিছু খাবার স্যালাইন ও ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে গেছেন৷''
বিএডিসি ভবন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া আনোয়ার নামের একজন বলেন, ‘‘শুকনা খাবার চিড়া-মুড়ি দিয়ে গেছে৷ এগুলো পেয়েছি৷ তবে এখনও (শুক্রবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত) দুপুরের খাবার পাইনি৷ এলাকাবাসীর উদ্যোগে আমাদের জন্য ইফতার ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে৷''
পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাঙামটি এলাকায়৷ সেখানে পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১১০ হন নিহত হয়েছেন৷ চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি শহর পর্যন্ত ১৩ কি.মি সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ আর রাঙামাটি থেকে প্রত্যন্ত এলকার সড়ক যোগাযোগ ধস ও টানা বৃষ্টির কারণে ব্যবহারের অযোগ্য এবং ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে৷
সরবরাহ না থাকায় রাঙামাটিতে জ্বালনি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে জ্বালানিতেল ছিল, তা পেট্রোল পাম্প মালিকরা রেশনিং করে প্রায় দ্বিগুন দামে বিক্রি করেছেন৷ এরপর পাম্পগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷ কেরোসিন তেলের সংকট পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে৷ আর এলপি গ্যাসের সংকট ও চড়া দামের কারণে রান্নাও করা যাচ্ছে না৷ বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনের চার্জও দেয়া যাচ্ছে না৷ ফলে ওইসব এলাকার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন৷ বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে৷ এমন পরিস্থতিতেও পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সবাইকে সরিয়ে নেয়া হয়নি এখনো৷
ওইসব এলাকায় চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য এবং শাকশব্জির দামও বেড়ে গেছে৷ নান ধরণের গুজব আর আতঙ্কের মধ্যে আছেন সেখানকার মানুষ৷
পাহাড় ধসে আহতদের দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪৮৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে৷ এসব টিমের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৷আর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷চার জেলায় মোট ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ আর জেলা প্রশাসকদের কাছে আগে থেকেই পর্যাপ্ত ত্রান আছে, যা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন বলে মন্ত্রনালয় জানায়৷
এছাড়া যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরো ৫০ লাখ টাকা এবং ৫০০ বান্ডিল টিন বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন৷
রাঙামটির সাংবাদিক জিয়াউল হক জিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ৷ আশ্রয়কেন্দ্রে একদিনের মধ্যে মানুষ দ্বিগুন হয়ে গেছে৷ জেলা প্রশাসক বলছেন, ত্রান নিয়ে লাভ নাই৷ কারণ, তারা কিভাবে রান্না করে খাবে? সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গছে৷ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকট আছে৷''
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি৷ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দুই বেলা রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে৷ এরপর আমরা পুনর্বাসনের কাজ শুরু করব৷ আমরা চিকিৎসা সেবাকেও গুরুত্ব দিচ্ছি৷''
তিনি জানান, ‘‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য মজুদ করে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বাড়িয়েছিল৷ তারা এই দুর্যোগেও মুনাফা করার লোভ ছাড়তে পারেনি৷ তবে আমরা এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি৷ কাপ্তাই থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু করে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি৷''