‘আগে নিরাপত্তা দরকার, পরে জাস্টিস'
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮শুক্রবার ডয়চে ভেলেকে দেয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটিতে অনেক কিছুই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো স্বাভাবিক নয়৷ সেখানে আইন থাকলেও তার স্বাভাবিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না৷
মেয়ে দু'জন ও তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টিই তাই মুখ্য হয়ে উঠেছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘ওদের নিরাপত্তা আগে, তারপর জাস্টিস৷ জাস্টিস এখানে সেকেন্ডারি বিষয় হয়ে গেছে৷''
তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই মেয়ে দু'টিকে চাকমা সার্কেলের রাজার হেফাজতে রাখার আবেদন করেছিলেন বলে জানান তিনি৷ কিন্তু তার আগেই মেয়ের পরিবার কাস্টডি দাবি করায় আদালত পরিবারের পক্ষে রায় দিয়েছেন৷
তারপরও আদালতের কাছে সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান দেবাশীষ রায়৷ আবেদন করা হয়েছিল যাতে আদেশ তুলে নেয়া হয়৷ আদালত আপিল বিভাগে আবেদন করার পরামর্শ দেন৷
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাকমা রানি ইয়েন ইয়েন ও এক নারী স্বেচ্ছাকর্মী নির্যাতিতাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে (ইয়েন ইয়েন) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন দেবাশীষ রায়৷
এ বিষয়ে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, সন্ধ্যার দিকে আট দশজন নারী, কয়েকজন পুরুষ, যাদের কেউ কেউ মুখোশধারী এবং সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, এসে রানি ইয়েন ইয়েন ও তাঁর সঙ্গীর ওপর চড়াও হন৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘রানিকে ও ঐ ভলান্টিয়ারকে মারা হয়েছে ভিক্টিমদের সামনে৷ এরপর রানি ও ভলান্টিয়ারকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে৷''
রানিকে শারীরিক আঘাত ও তাঁর ঐ সঙ্গিনীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রাজা দেবাশীষ৷ এমনকি ইয়েন ইয়েন জীবন নিয়ে কোনোমত পালিয়ে বাঁচেন বলেও মন্তব্য করেন দেবাশীষ রায়৷
‘‘তারা বলছিল, হাসপাতালের ভেতর একে মেরে ফেলা যাবে না৷ তখন তিনি হাসপাতালের বাইরে অন্ধকারের মধ্যে একটি লেকের পানিতে ঝাঁপ দেন৷ পরে এক পরিবারের সহায়তায় বাড়িতে ফেরেন৷''
সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি৷
এদিকে, তরুণী দু'জন রাঙ্গামাটি জেলার রিজার্ভ বাজারের ফারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান অভিলাস তংচঙ্গার বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে দুপুর একটার দিকে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান৷
ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, তাদের পিতা উসেচিং মারমা ও মা সূত্র ক্রটির হেফাজতে রয়েছে তারা৷ তবে রাজা দেবাশীষ পরে অভিযোগ করেন যে, শোনা যাচ্ছে,তাদের সেখান থেকেও অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, তারা ফারুয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বাসাতেই আছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘এখনো এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি৷''
বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে কী ঘটেছে জিজ্ঞেস করা হলে সাঈদ তারিকুল বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ তাদের বাবা মায়ের হেফাজতে দিয়ে দিয়েছে৷'' আর কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আর কোনো ঘটনার কথা আমরা জানি না৷''
একজন সেনাসদস্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এমন অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি৷ এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক কর্ণেল রাশেদুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে সেনা কর্মকর্তার কথা বলা হচ্ছে, তিনি সেখানকার ক্যাম্প কমান্ডার৷ কিন্তু যে পেট্রোল দলটির কথা বলা হচ্ছে, সেই দলে তিনি ছিলেনই না৷''
এদিকে, সদর হাসপাতালে কী ঘটেছিল তা জানতে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সে সময় ছুটিতে ছিলেন বলে জানানো হয়৷
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের দায়িত্বে থাকা ডা. নীহার রঞ্জন নন্দীর হাসপাতাল থেকে নেয়া মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে আরেক ব্যক্তি দাবি করেন, সংযোগটি তাঁর, নীহার রঞ্জনের নয়৷ তিনি বলেন যে, তাঁর কাছে অনেকেই ফোন করে ডাক্তার নীহার রঞ্জনের খোঁজ করছেন৷