‘মালালা দিবস’
১১ নভেম্বর ২০১২জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলে এবং নারী শিক্ষার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করায় তালেবানের হামলার শিকার হন মালালা৷ তবে এই ঘটনা সারা বিশ্বকেই আলোড়িত করে৷ মালালা যেন বিশ্ববাসীর কাছে নারী শিক্ষার প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন৷ বর্তমানে ব্রিটিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মালালা৷ তবে তালেবানের গুলিতে ১৫ বছর বয়সি ছাত্রী মালালা এবং তাঁর দুই সহপাঠী আহত হওয়ার প্রায় এক মাস পর মালালা দিবস পালনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে শনিবার মালালা দিবস পালিত হলো৷ একইসাথে নারী শিক্ষা সম্প্রসারণে মালালার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে শান্তিতে নোবেল পদকের জন্য মনোনীত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হাজার হাজার ব্রিটিশ নাগরিক৷
শুধু তাই নয়, মালালার সাহসী ভূমিকা এবং আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে পাকিস্তানের গরিব ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির দাবি ওঠে বেশ জোরেশোরে৷ যেসব পরিবার তাদের মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠায়, তাদের জন্য বৃত্তির দাবিতে স্বাক্ষর করেছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ৷ এমনকি এই দাবি সম্বলিত আবেদন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির কাছে হস্তান্তরের সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন বলেন, ‘‘মালালার স্বপ্নের মধ্যে ঠিক তা-ই রয়েছে যা পাকিস্তানের জন্য সর্বোত্তম৷'' এরপরই শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জারদারি এই দাবির প্রতি নিজের সম্মতি জানিয়ে তাতে স্বাক্ষর করেন৷
প্রেসিডেন্ট জারদারি বলেন, ‘‘মালালা আমাদের নারী ও শিশুদের প্রতিরোধী শক্তির বহিঃপ্রকাশ৷ যেসব সন্ত্রাসী মালালার মাথায় ও কাঁধে গুলি করেছিল, তারা শুধু পাকিস্তানের এক বীর কন্যাকে খুন করতে চায়না বরং তারা পাকিস্তানকেই ধ্বংস করতে চায়৷ তাঁর উপর আঘাত আমাদের অঞ্চলের প্রতিটি শিশুর উপর আঘাত৷ এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর হামলা৷ আমাদের শিশুরা হামলার শিকার হলে আমরা বসে থাকতে পারি না৷ তাই আমাদেরকে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে৷''
এ অবস্থায় পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দিয়েছে, যেসব গরিব পিতা-মাতা তাদের মেয়েদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার জন্য পাঠাবে তাদেরকে ছাত্রীর মাথাপিছু মাসিক দুই ডলার করে বৃত্তি প্রদান করা হবে৷ যুক্তরাজ্য এবং বিশ্বব্যাংক এই বৃত্তির জন্য অর্থ যোগান দেবে৷ আর এই অর্থ বিতরণ করা হবে পাকিস্তান সরকারের বেনজির আয় সহায়ক কর্মসূচির আওতায়৷ এই কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যে গরিব পরিবারগুলো মাসিক দশ ডলার করে সহায়তা পাচ্ছে৷
ইন্টারনেট ভিত্তিক অধিকার কর্মীদের সংগঠন ‘আওয়াজ' এর দক্ষিণ এশীয় প্রচারক আলাফিয়া জোয়াইব জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হলে দুই বছরের মধ্যে সেখানকার বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীদের নিবন্ধনের হার নয় শতাংশ বৃদ্ধি পায়৷ তাই সরকারের নতুন বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দারিদ্র্য, দুর্নীতি এবং তালেবান জঙ্গিবাদ নিয়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান সরকার৷ অথচ দেশটির প্রায় ১৮ কোটি মানুষের ০.৫৭ শতাংশেরও কম নাগরিক আয়কর প্রদান করে৷ ফলে পাকিস্তান সরকারকে তাদের অনেক সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয়৷ ২০১৫ সালের মধ্যে পাকিস্তানের গরিব শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে যুক্তরাজ্যের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে৷
এএইচ / জেডএইচ (ডিপিএ, রয়টার্স)