মোদীর জনপ্রিয়তার পারদ তুঙ্গে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলি থেকে লোকজনদের সরিয়ে আনা হয়েছে৷ সীমান্তে বাড়ানো হয় টহলদারি৷ সক্রিয় রাখা হয়েছে সামরিক ব্যবস্থাপনা এবং সাজসরঞ্জামও৷ এভাবেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাকিস্তান নীতি সফল হচ্ছে৷ আর তাতে তাঁর রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার পারদ এখন ঊর্ধমুখী৷ কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক– এই ত্রিফলা নীতিতে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে সক্ষম হয়েছে মোদী, এমনটাই মনে করছে দেশের মানুষজন৷ এমনকি বিরোধী দলগুলির কাছ থেকেও বাহাবা পেয়েছেন মোদী৷ বলা বাহুল্য, এই সাফল্য ধরে রাখতে পারলে মোদীর রাজনৈতিক ভাগ্য খুলে যাবে৷ যেসব সমালোচক হামেশাই মোদীকে এই বলে বিদ্ধ করতেন যে, মোদী যত গর্জে, তত বর্ষে না৷ তাঁদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে৷ শুধু কি তাই? উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের আসন্ন নির্বাচনে এবং ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে এর ছাপ পড়তে পারে, এমনটা ধারণা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷ পরিস্থিতি যাতে বিগড়ে না যায়, তারজন্য এই প্রথম মোদীর তরফে শুধু পাকিস্তানকেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে এই ধরনের সেনা অভিযানের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে যাতে কোনো ভুল বার্তা না যায়৷
ওদিকে পাকিস্তানকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, জম্মু-কাশ্মীরে সংঘর্ষ-বিরতি রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় সেনার সার্জিকাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নয়, জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করাই ছিল এর লক্ষ্য৷ এই ধরনের অভিযান আর হবে না বলেই আশা করছে ভারত৷ প্রশ্ন হলো, কেন এই স্পষ্টকথা? পাকিস্তান যাতে পাল্টা অভিযান থেকে বিরত থাকে? পাকিস্তানের দিক থেকেও কিন্তু ভারতীয় সেনার এই অভিযানকে মনগড়া আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই ধরনের কোনো সার্জিকাল স্ট্রাইক ভারতের দিক থেকে হয়নি৷ যেটা হয়েছে সংঘর্ষ-বিরতি রেখার ওপার থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলাগুলি বর্ষণে দু'জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে, ধরা পড়েছে আর একজন ভারতীয় সেনা৷ এর মানে কি এই যে, পালটা সামরিক তত্পরতা থেকে পাকিস্তান নিজেকে বিরত রাখতে চাইছে? নাকি পালটা জবাব দেবার জন্য সময় নিতে চাইছে পাকিস্তান?
তবে যেটাই হোক, মোদী স্বস্তি পাচ্ছেন না৷ কথায় বলে সাবধানের মার নেই৷ এই প্রবাদ বাক্য মেনে সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে মোদী এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শীর্ষ স্তরে জরুরি বৈঠক করেছেন৷ জম্মু-কাশ্মীর ও পাকিস্তান সংলগ্ন সীমান্ত এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়েক'শ গ্রামের প্রায় দু'লাখেরও বেশি লোকজনকে সরিয়ে আনা হয়েছে৷ অন্যদিকে অগ্নিতে ঘৃতাহুতি যেমন হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের মতো বিশিষ্টবর্গের আশংকা, জঙ্গিদের হাতে পড়তে পারে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার৷ সেক্ষেত্রে উদ্ভব হতে পারে মারাত্মক সংকট৷
প্রশ্ন হলো, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভরকেন্দ্র যদি কাশ্মীর হয়, তাহলে এত বছরেও তার ফয়সালা অধরা কেন? গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কেন? সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিতে হবেই৷ চলতি বছরের গত তিন মাস ধরে জম্মু-কাশ্মীরে লাগাতার চলছে অশান্তি, প্রতিবাদ বিক্ষোভ, ধরপাকড়, কারফিউ, গুলি, মানবাধিকার লঙ্ঘন৷ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারা গেছে ৭৬ জন৷ আহত কয়েক'শ৷ গণতান্ত্রিক দেশে নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ মেনে নেওয়া যায় না৷ অশান্তির জেরে রাজ্যের জনজীবন স্তব্ধ৷ হালের সহিংসতার জেরে বিভিন্ন সরকারি অফিসের প্রায় ২০০-৩০০ কাশ্মীরি পণ্ডিতকে ঘরছাড়া হতে হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীদের হাতে ধ্বংস হয়েছে ব্যাপক সরকারি সম্পত্তি৷ তবে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন, ‘‘পাথর ছোঁড়ার জবাবে গুলি চালনার অধিকার দেয় না৷''
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আলোচনায় উদ্যোগ নিলেও নেপথ্য উসকানিতে তা ভেস্তে যাচ্ছে বারংবার৷ উত্তেজনা প্রশমনের বাতাবরণ সৃষ্টির জন্য জরুরি, অবিলম্বে সামরিকীকরণ কমিয়ে আনা, সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন রদ করা, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের রাশ টানা, ভারতের অখণ্ডতা বজায় রেখে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া৷ কাশ্মীর ইস্যু আজ আর আন্তর্জাতিক ইস্যু নয়৷ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির মধ্যে আলোচনাই একমাত্র পথ, যেটা দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক হতে পারে৷ জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তা মেনেও নিয়েছে৷সন্ত্রাসী হামলার বদলা নিতে মোদীর দ্বিমুখী হাতিয়ার
অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
দেবারতি গুহ