পাঁচতারা রেস্তোরাঁ থেকে গৃহহীন মানুষের খাদ্য
২৬ জুন ২০২০সাধারণত কোলন শহরের এক সম্ভ্রান্ত রেস্তোরাঁর রাঁধুনীরা আরও জাঁকজমকপূর্ণ খাবার পরিবেশন করেন৷ কিন্তু করোনা সংকটের প্রথম পর্যায়ে রেস্তোরাঁয় অতিথিদের খাবার পরিবেশন করা নিষিদ্ধ ছিল৷
ডানিয়েল গটশ্লিশ ও তাঁর সহকর্মীরা সে সময়ে সপ্তাহে দুই বার গৃহহীন মানুষের জন্য রান্না করেছেন৷ সিক্স-কোর্স মেনু ও সঙ্গে মানানসই ওয়াইন পরিবেশনের বদলে একেবারে সাধারণ জার্মান পদ রান্না করা হয়েছে৷ যেমন খাদ্যতালিকায় ছিল টার্কির মাংস, সঙ্গে সেঁকা আলু ভাজা ও ক্রিম সসে রান্না করা শাকসবজি৷ ডানিয়েল বলেন, ‘‘আমরা যে সব মানুষকে সাহায্য করতে চাই, তাঁদের জন্য সহজ পদই ভালো৷ পেট ভরে খেতে চান তাঁরা৷''
অভুক্তদের খাওয়াতে দিনে দেড়শো এমন লাঞ্চবক্স প্রস্তুত করা হয়েছে৷ রাঁধুনী হিসেবে এরিক শ্মিৎস দাবি করেন, সাধারণ গ্রাহকদের জন্য যে উদ্যোগ ও আন্তরিকতা নিয়ে রান্না করা হয়, এ ক্ষেত্রেও তাঁরা কোনো পার্থক্য করেন না৷
এমনকি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার ইয়ুরি আপেলিউশিনস্কিও লাঞ্চবক্সের জন্য আলু কাটার কাজে হাত লাগিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারি ভরতুকির কল্যাণে আমরা বেতনের অংশবিশেষ পাচ্ছি৷ এই কাজের জন্য বাড়তি কোনো অর্থ পাচ্ছি না৷ ভালবাসা থেকেই কাজ করছি৷ চার সপ্তাহ ধরে পরিবারের সঙ্গে বাসায় থাকার পর আবার সহকর্মীদের দেখতে ইচ্ছা করে, যাদের সঙ্গে সাধারণত দিনে ১২ ঘণ্টা সময় কাটে৷''
করোনা সংকট যখন তুঙ্গে, ‘অক্স অ্যান্ড ক্লে' রেস্তোরাঁর কর্মীরা তখন তাঁদের বেতনের ৬০ শতাংশ সরকারি ভাতা হিসেবে পেয়েছেন৷ তা সত্ত্বেও তাঁরা বাসায় হাত গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র ছিলেন না৷ জার্মানিতে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সব ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ ডানিয়েল গটশ্লিশ মনে করেন, ‘‘এখানে আমাদের বিশাল সুবিধা রয়েছে৷ সবকিছু গড়ে তুলতে হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু অনেক মানুষের অবস্থা মোটেই তেমন ভালো নয়৷ পারলে মানুষকে সাহায্য করার ইচ্ছা আমার বরাবরই ছিল৷''
স্বেচ্ছাসেবীরা লাঞ্চবক্স সংগ্রহ করে কোলন শহরের মাঝে দুস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন৷ ডানিয়েল নিজেও পথে নেমেছেন৷ খাবার দিয়ে সাহায্য করতে পেরে তিনি খুশি৷ যাঁরা খাচ্ছেন, তাঁদের কাছে খাবার সুস্বাদু মনে হওয়া তাঁর কাছ বাড়তি পাওনা৷ তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘এদের কাছ থেকে আমি বেশ কয়েকবার কিছু পেয়েছি৷ খুবই ভালো৷ খেলে বোঝা যায় ভালো কোনো রাঁধুনী সেটা রান্না করেছে৷ সহকারীরাও চেষ্টা করেন বটে, তবে এর স্বাদই আলাদা৷''
করোনা মহামারির সময় গৃহহীন মানুষের জন্য অনেক সাহায্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থাও চালু রাখা সম্ভব হয় নি৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভিক্ষা হিসেবে বেশি টাকাপয়সাও পাওয়া যায় নি৷ যেমন এক সংগীতশিল্পী পথচারীদের কাছ থেকে যথেষ্ট পয়সা পাচ্ছেন না৷ কমপক্ষে একবার পেট ভরে খেতে পেলেও দিনটা মোটামুটি কেটে যায়৷
নাতালিয়া স্মলেন্টসেভা/এসবি