পশ্চিমা বিশ্বের ইসলাম আতংক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮মূলত গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে ইসলামোফোবিয়া কথাটির প্রচলন শুরু৷ তবে ২০০১ সালে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পরই বিষয়টি অনেক বেশী পরিচিতি পেয়েছে৷ আসলে ইসলামোফোবিয়া বিষয়টি কি? অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ তবে সারকথা হলো এটি এমন একটি ধারণা যা ইসলামের মূল বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়৷ অর্থাত্ ইসলামোফোবিয়ার কথা যারা বলেন তারা মনে করেন, ইসলাম হচ্ছে একটি উগ্রবাদী, জঙ্গী ধ্যানধারণা এবং অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গে এর কোন মিল নেই৷ মূলত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেই ইসলামোফোবিয়ার জন্ম হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সংস্থা ইউরোপিয়ান মনিটরিং সেন্টার অন রেসিজম এন্ড জেনোফোবিয়া বা ইইউএমসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর গোটা ইউরোপ জুড়ে ইসলামোফোবিয়া অর্থাত্ ইসলাম-আতংকের বিস্তার ঘটেছে৷ ইউরোপের নানা দেশে এই ইসলামোফোবিয়ার কারণে মুসলমনারা বিভিন্ন বৈষম্যেরও মুখোমুখি হচ্ছেন৷ ইউরোপের অন্যতম দেশ জার্মানিতেও দক্ষিণপন্থীদের মাঝে এর রেশ রয়ে গেছে৷ সম্প্রতি জার্মানির কোলন শহরে মসজিদ নির্মানের তীব্র বিরোধিতা করছে সেখানকার উগ্র দক্ষিণপন্থী নামে পরিচিত একটি স্থানীয় সংগঠন৷ এজন্য তারা ইসলামবিরোধী একটি সম্মেলনও করতে যাচ্ছে৷ এই ইসলামবিরোধী সম্মেলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সক্রিয় হয়েছে জার্মান নাগরিকদের বহু সংগঠন৷
ইসলামোফোবিয়ার প্রভাব জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমানদের ওপর যে পড়ছে না তা কিন্তু নয়৷ তবে এর মাত্রা কতটুকু? পাকিস্তান থেকে আসা শেহজাদ চিমা জার্মানির বন শহরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন৷ তিনি জানান ইসলাম আতংকের বিষয়টি এখানকার লোকজনের মধ্যে কিছুটা হলেও কাজ করে৷ শেহজাদ বলেন, প্রথম দিকে আমার মনে হয়েছিলো হয়তো ইউরোপের বাইরে থেকে আসার কারণে আমাকে আলাদা মনে করা হচ্ছে৷ কিন্তু পরে আমার মনে হয়েছে জার্মানির লোকজন মুসলমানদের সম্পর্কে যেন কিছুটা ভীত৷ হয়তো তারা বিভিন্ন ধরনের প্রচারণায় প্রভাবিত৷
শেহজাদ মনে করেন, সাধারণভাবে জার্মানির লোকজনের আচরণ বন্ধুত্বপুর্ণ৷ তাই ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে তাদের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে সকল পর্যায়ে আলোচনা ও ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নেয়া উচিত৷ তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এখানকার লোকজন আসলে ইসলামের বিপক্ষে নয়৷ ইসলামের ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট ধারণা দিলে তারা এটি গ্রহণ করতেও পারে৷
জার্মানিতে বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ মুসলমান বাস করে৷ তাদের বেশীরভাগই তুর্কী বংশোদ্ভুত৷ তা সত্ত্বেও মূল ধারার জনগণের মত তারাও জার্মান সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে৷
মুসলমানরা জার্মানিতে কোন ব্যতিক্রম নয় বলে মনে করেন লুইসা সিলিং৷ তিনি জার্মানির রাজধানী বার্লিনে থাকেন৷ বার্লিনের বিশ্ববদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা করেন৷ লুইসার মতে জার্মান সমাজে মুসলমানদের উপস্থিতি কোন সমস্যা নয়৷ তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা কোন সমস্যা নয়৷ যদি কোন ভিন্ন মত থাকে আমার মনে হয় আমার বন্ধুরা সেসব বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনা করতে রাজি৷ আমার ক্লাসে দুজন তুর্কী মেয়ে আছে৷ তারা হিজাবও পরে৷ কিন্তু তারা খুবই খোলামেলা ও মুক্তমনের৷ আমাদের মতামত জানতেও তারা বেশ আগ্রহী৷
তবে মানুষের মন থেকে ইসলামোফোবিয়ার বিষয়টি দূর করা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে না বলে মনে করেন লুইসা সিলিং৷ এ ব্যপারে তার বক্তব্য, এ ধারণা দূর করা কঠিন৷ কারণ মানুষ সহজভাবেই উত্তর খুঁজে পেতে চায়৷ আমরা হয়তো সন্ত্রাসের জন্য ইসলামকে দায়ী করছি৷ তবে এজন্য ক্রিটিক্যাল জার্নালিজম ও সেরকম পাঠকের প্রয়োজন যাতে প্রচলিত ধারার প্রচারণা বন্ধ হয়৷
পশ্চিমা বিশ্বের সমাজগুলোতে এখন মুসলমানদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতই৷ তাই তাদের নিয়ে অযথা আতংকের মধ্যে না থেকে কিভাবে তাদেরকে মুল ধারায় সম্পৃক্ত করা যায় সেটা নিয়েই এখন বেশী চিন্তা করছেন পশ্চিমা নীতিনির্ধারকরা৷