1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ভোট মানে শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বনাম দুর্নীতি নয়

গৌতম হোড় কলকাতা | স্যমন্তক ঘোষ কলকাতা
৩১ মে ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার মতো লোকসভা নির্বাচনেও কি বড় ভূমিকা নেবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার?

https://p.dw.com/p/4gTTz
কলকাতায় প্রচারের শেষদিনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কাট আউট।
তৃণমূলের প্রচারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কাট আউট বা পোস্টার ছিলই। ছবি: Goutam Hore/DW

কলকাতায় বৃহস্পতিবার সকালে শেষদিনের প্রচারে নেমেছেন বিদায়ী লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি খোলা জিপে সুদীপ দাঁড়িয়ে। ধীরে ধীরে চলছে সেই জিপ। তার সামনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিশাল কাট আউট নিয়ে যাচ্ছেন দলের কর্মীরা। কলকাতা উত্তরে সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায় শুধু নন, রাজ্যে তৃণমূলের যত প্রচার হয়েছে, সর্বত্রই ছিল এই লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারের ছবি, কাট আউট, ফ্লেক্স। লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারকে সামনে রেখে মেয়েদের ও সেই সূত্র ধরে পরিবারের ভোট পাওয়ার চেষ্টা।

ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে চমকটা দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে রাজ্যের প্রায় দুই কোটি নারীকে আগে দেয়া হতো পাঁচশ টাকা। বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার টাকা। এপ্রিল মাসে সেই বর্ধিত টাকা হাতে পেলেন মেয়েরা। এই টাকা পাওয়ার জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নাম তোলানোই যথেষ্ট। তারপর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায় এই অর্থ। যার জন্য কোনো কাজ করতে হয় না। নারীদের জন্য এটা মুখ্যমন্ত্রীর উপহার।

কলকাতায় এক প্রবীণ সাংবাদিক বলছিলেন, রাজ্যের ভোট তো এবার এককথায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বনাম দুর্নীতি ও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার প্রবণতার লড়াই। এটা শুনেই মনে পড়ে গেল, বহরমপুর যাওয়ার পথে ট্রেনে জঙ্গিপুরের এক যুবকের কথা। যিনি বলেছিলেন, তিনি তৃণমূলের দুর্নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিরোধীদের ভোট দেবেন। কিন্তু তার বাড়ির মেয়েদের কথা বলতে পারছেন না। তারা লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার পাওয়ার পর থেকে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় ভোট দেয়ার কথা ভাবতে পারছেন না।

কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী বৃহস্পতিবার প্রচার শুরু করছেন এভাবে।
প্রচার শুরুর আগে এভাবেই মশাল জ্বালিয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: Goutam Hore/DW

গত বিধানসভা নির্বাচনে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রভাব দেখা দিয়েছিল। বিশ্লেষকরা জানিয়েছিলেন, রাজ্যে মেয়েদের ভোট মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দল যে বিপুল সংখ্যায় পেয়েছিল, তার অন্যতম কারণ এই প্রকল্প। তখন তো মেয়েরা পেতেন প্রতি মাসে পাঁচশ টাকা করে। এখন হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। প্রায় দুই কোটি মেয়ের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা দিতে গেলে কত টাকা লাগে, সেই হিসাব কষা শক্ত নয়।  আর্থিক দিক থেকে প্রবল চাপে থাকা রাজ্যে এই বিপুল অঙ্কের ভারটা যে নেয়া হচ্ছে, তার ফলও পাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রর মতে, ''লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের একটা প্রভাব তো আছেই। বিশেষ করে গ্রাম বা ছোট শহরে। ভোটের আগে সব বকেয়া মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ফলে নারীরা খুশি। গ্রামের দিকে এক হাজার টাকা খুব কম নয়। মেয়েদের হাতে এই টাকা থাকার মূল্যও আছে।'' 

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নারীরদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, যারা এই প্রকল্পে টাকা পাচ্ছেন, তারা একবাক্যে জানিয়েছেন, তারা খুবই খুশি। এই অর্থ দিয়ে তারা সন্তানদের টিফিন কিনে দিতে পারছেন, নিজেদের জন্য খরচ করতে পারছেন। সংসারের কাজে দরকার হলে দিতে পারছেন। 

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে অর্থ পাওয়ার কৃতজ্ঞতা যদি ভোটে পড়ে, তাহলে তৃণমূল লাভবান হবে।

বিরোধীদের অস্ত্র হচ্ছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার প্রবণতা। ২০১১ থেকে টানা রাজ্যে ক্ষমতায় আছে তৃণমূল। এতদিন ধরে ক্ষমতায় থাকলে মানুষের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তার উপর কিছুদিন ধরে রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতির অভিয়োগ সামনে এসেছে। শিক্ষক নিয়োগ-সহ বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে। বিরোধীরা সেই অভিযোগই সামনে নিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী,সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সকলেই প্রচারে এই দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। 

প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তর বক্তব্য, ''সাধারণভাবে এটাকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বনাম দুর্নীতির ভোট বলা যায়।'' তবে তার মতে, ''পশ্চিমবঙ্গে ভোট অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে বেশি দরকার ভোটের মেশিনারি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে বিজেপি-র তুলনায় তৃণমূল অনেক বেশি এগিয়ে আছে। এখানে শুধু সমর্থন থাকলে হয় না। ভোটটা যাতে ইভিএমে পড়ে, সেটাও নিশ্চিত করতে হয়। সেই কাজটা করতে গেলে অভিজ্ঞ কর্মী ও সংগঠন দরকার। সেটা অনেক জায়গাতেই বিজেপি-র নেই।''

রাধা-কৃষ্ণের সাজে সেজে প্রচারে পা মিলিয়েছেন এই শিল্পীরা।
বুধবার সৌগত রায়ের প্রচারের দৃশ্য। ছবি: Goutam Hore/DW

পশ্চিমবঙ্গের ভোট তাই অন্য রাজ্যের মতো নয়। এখানে মেরুকরণও ভোটে কাজ করে, দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা বড় ভূমিকা নেয়, ভোটের দিনে রাজনৈতিক দলের কৌশল ও পাল্টা কৌশলের উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। আবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, দুর্নীতিও অনেক জায়গায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে কাজ করে। 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো