1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাম-কংগ্রেস জোট অনিশ্চিত

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২২ মার্চ ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা এখন অতি ক্ষীণ৷ এর ফলে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যায় কিনা, নজর থাকবে সেই দিকেই৷

https://p.dw.com/p/3FUte
ছবি: DW/P Samanta

পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির মূল প্রতিপক্ষ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস৷ এই দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নাগালের বাইরে যে ভোট, যা একইসঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা, তা একজোট করার একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস এবং রাজ্য বামফ্রন্টের মধ্যে৷ যার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল, গতবারে যার যেটা জেতা আসন, সেখানে এবারেও তারাই প্রার্থী দেবে৷ অন্য অনিশ্চিত আসনে সমঝোতার ভিত্তিতে এক দলের প্রার্থী দাঁড়াবে এবং অন্য দল তাকে সমর্থন জানাবে৷ কিন্তু কার্যত ঘটনাটা ঘটছে না৷ বামেদের জেতা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে কংগ্রেস এবং নিজেদের হারা আসন তারা বামেদের ছেড়ে দিতে রাজি৷ মৌলিক শর্ত লঙ্ঘিত হওয়ায় বোঝাপড়া হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে অনিশ্চিত৷ যদিও বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এখনও আলোচনা, বোঝাপড়ার রাস্তা খোলা রাখা হয়েছে৷ কিন্তু বামেরা যেহেতু কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো যৌথ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে রাজি নয়, কংগ্রেসের সেটা সম্মানে লেগেছে৷ ফলে শেষ পর্যন্ত সমঝোতার আদৌ কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না৷

তিনটে কারণে ‌জোট হতে পারছে না: প্রদীপ ভট্টাচার্য

কেন জোট হচ্ছে না?‌ পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‌‘‌তিনটে কারণে (‌জোট হতে পারছে না)‌৷ একটা কারণ হলো, আমরা জোটটা চেয়েছিলাম৷ বামফ্রন্ট জোট চায়নি৷ বামফ্রন্ট চেয়েছিল আসন সমঝোতা৷ আমরা বলেছিলাম, আসন সমঝোতায় আমাদের কর্মীদের মধ্যে এবং জনসাধারণের মধ্যে, ওদের কর্মীদের মধ্যে এবং জনসাধারণের মধ্যে আমরা এটা পৌঁছে দিতে পারতাম না, (‌যে)‌ কেন আমরা একসঙ্গে লড়াই করছি৷ একসঙ্গে লড়াই করতে গেলে একসঙ্গে মিটিং, একসঙ্গে পতাকা নিয়ে রাস্তায় চলা, একসঙ্গে মিছিল, সবকিছুই একসঙ্গে করা উচিত৷ কিন্তু সিপিএম দল সেটা করতে রাজি হলো না৷’’

দ্বিতীয় কারণ যেটা প্রদীপ ভট্টাচার্য নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন, সেটা হল পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস৷ প্রদীপবাবুর খেদ, ‘‌‘‌এই বিশ্বাসবোধটা তৈরি করা সম্ভব হলো না৷ সেখানে আমাদের কিছু দোষ থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু ওদের দোষটাই বেশি৷ ওরা প্রথমেই আমাদের মধ্যে একটা চিড় ধরিয়ে দিল৷ আমাদের পার্টির একজন কর্মী, রেজাউল করিম, ডাক্তার, তাঁকে বীরভূমে দাঁড় করিয়ে দিল ওদের পার্টির থেকে!‌'‌'‌ এটা কীরকম কথা!‌ প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা৷ ডা. রেজাউল করিম প্রদেশ কংগ্রেসের চিকিৎসক শাখার সভাপতি৷ তাঁকে কংগ্রেসের অজ্ঞাতসারে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে, এটা সঙ্গত কারণেই মেনে নিতে চায়নি প্রদেশ নেতৃত্ব৷ একইভাবে মেনে নেওয়া যায়নি, যে সিপিএম দার্জিলিং লোকসভা আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিলেও সেই আসনে কে দাঁড়াবে, সেটা বলে দেওয়ার চেষ্টা করা৷ ‘‌‘‌পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস এবং সম্পর্কটা ঠিক ছিল না৷’’ বললেন প্রদীপ ভট্টাচার্য৷

কংগ্রেসের আনা এই অভিযোগ মানতে রাজি নন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‘বিশ্বাসভঙ্গের‌ কথা কারও বলা উচিত নয়৷ যদি সেটা বলেন, তা হলে সেটা অসঙ্গত হবে৷ বরং বামপন্থিরা স্বৈরাচারী শক্তি, অথবা সাম্প্রদায়িক শক্তি — তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোটা ভারতবর্ষে সবচাইতে বিশ্বাসযোগ্য৷ এর ভুরিভুরি উদাহরণ বহুবার দেখা হয়ে গেছে৷ এমনকি ২০০৪ সালে ৬১ জন বামপন্থি সাংসদ মন্ত্রিত্ব নিল না, কিন্তু দিল্লিতে বিজেপি যাতে সরকার গড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করল৷ সেটা কিছুর বিনিময়ে নয়, প্রয়োজনে৷ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতায়৷ অতএব কোনো সন্দেহ নেই যে যারা (‌যেখানে)‌ জিতে আছে, সেখানে প্রার্থী দেবে৷ কংগ্রেসিরা চারটি আসনে জিতে আছে, বামপন্থিরা দু'টো আসনে জিতে আছে, সেখানে তারাই প্রার্থী দেবে৷ আর কেউ দেবেন না৷ এটা ওরা মানতে পারেনি৷ এটা ওঁরা মানতে চাননি৷’’‌

‌বিশ্বাসভঙ্গের‌ কথা কারও বলা উচিত নয়: সুজন চক্রবর্তী

তৃতীয় আরেকটি কারণের কথা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, যে আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক, সিপিআই-এর মতো বামফ্রন্টের অন্য শরিক দলগুলো সিপিএমের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছিল, যাতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হয়৷ তারাই উদ্দেশ্যমূলকভাবে, কংগ্রেস যে জায়গাগুলোতে জিততে পারে, সেই জায়গায় প্রার্থী দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল৷ তার ফলে কংগ্রেস এবং বামেদের নির্বাচনি জোট দানা বাঁধা সম্ভব হলো না৷

বামফ্রন্টের পক্ষে সুজন চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‌‘নিশ্চয়ই বামফ্রন্টের আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দল, তাদের নানা মত থাকতে পারে৷ কিন্তু বামফ্রন্ট একটা লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়ে এত বছর ধরে নিজেদেরকে পরিচালিত করেছে৷ সেই সত্যটাকে অস্বীকার করে চলাটা ঠিক হবে বলে আমার মনে হয় না৷ সেভাবেই দেখা উচিত৷ আমি এরকম মনে করছি না যে সিপিআইএম চাইছিল, বামফ্রন্টের শরিকরা চাইছিল না৷ তা না৷  বরং আমি জ্ঞাতার্থে জানাতে পারি, চারটে আসনের মধ্যে (‌কংগ্রেসের জেতা)‌, তিনটি আসন সিপিআইএম-এর (‌প্রার্থীরা)‌ কনটেস্ট করে, একটাতে কনটেস্ট করে আরএসপি৷ এই চারটে আসনেই সিপিআইএম এবং আরএসপি প্রার্থী দেবে না, এই সিদ্ধান্তে সহমত ছিল৷’’‌

তবে বিরোধের জায়গাগুলো যাই-ই হোক, পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে বিজেপি-বিরোধী ভোট কংগ্রেস এবং বামপন্থিদের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই গেল৷ এই বিরোধী-ভোট যদি তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে চলে যায়, তা হলে অন্য কথা৷ নয়ত এ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে ভোট কাটাকাটির খেলায় শেষ পর্যন্ত কারা লাভবান হয়, সেদিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের৷