সবুজ পর্যটনে বিনিয়োগের আহ্বান
১০ মার্চ ২০১৮তাঁরা মনে করছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো, সম্পদের দক্ষ ব্যবহার ও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নবান্ধব পর্যটন খাত গড়ে তুলতে হলে ‘বিনিয়োগের' বড় ভূমিকা আছে৷
সারাবিশ্বে পর্যটনের বাজার বাড়ছে হু হু করে৷ আইটিবি-র এ বছরের প্রতিবেদন বলছে, বৈশ্বিক পর্যায়ে জিডিপি-র প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে তিনগুণ বেশি হারে বাড়ছে পর্যটন খাতের আয়৷
ইউএনডাব্লিউটিও-র বিশ্ব পর্যটন ব্যারোমিটার বলছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করেছেন ৯০ কোটি ১০ লাখ মানুষ, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৬ কোটি বেশি৷ আর তাই পর্যটন খাতে আয় বাড়ছে গুণোত্তর হারে৷ ফলে বিনিয়োগও বাড়ছে একইভাবে৷
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বাজারবৃদ্ধি কিংবা বিনিয়োগ কতটা পরিবেশকে মাথায় রেখে করা হচ্ছে? বিষয়টি এমন নয় যে, সব দেশে সমান পরিমাণ লোক যাচ্ছে, কিংবা সব দেশে সমান বিনিয়োগ হচ্ছে৷
দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয় জায়গাগুলোতে মানুষের আনাগোনা এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে, তা সেই জায়গার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে৷ আর তাই এবারের বার্লিন পর্যটন মেলায় এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ পর্যটন খাতে বিনিয়োগ সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অনেকের মত৷
বিশ্বের ৩৫টি ধনী দেশের অর্থনৈতিকও উন্নয়ন সম্পর্কিত জোট ওইসিডি-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিষয়টি বুঝতে পেরেছে৷ তাই তাদের সর্বশেষ পলিসিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে৷ তারা বলছে, পর্যটন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা দরকার৷ আর সেই পরিবর্তন অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে৷
জোটের আঞ্চলিক উন্নয়ন ও পর্যটন বিভাগের প্রধান অ্যালেন ডুপেরাস এক্ষেত্রে মেক্সিকোর উদাহরণ টেনে আনেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মেক্সিকো এরই মধ্যে তাদের জ্বালানি খাতের বিনিয়োগ নীতি বদলেছে৷ তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য সহজ শর্তে ঋণও দিচ্ছে৷''
শুক্রবার বার্লিন পর্যটন মেলা আইটিবি ২০১৮-তে ‘টেকসই পর্যটনে বিনিয়োগ' শীর্ষক এক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি উদাহরণ মাত্র৷ সারাবিশ্বে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে৷''
অ্যালেন মনে করেন, শুধু পরিবেশ নয়, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সবগুলো অর্জন করার ক্ষেত্রে পর্যটন খাতের বিনিয়োগের ভূমিকা রয়েছে৷
তিনি তাঁর বক্তব্যে নীতি নির্ধারণের পর্যায়ে চারট দিক তুলে ধরেন৷ সেগুলো হলো, সবুজ বিনিয়োগ, দায়িত্বশীল ব্যবসা, সমন্বয় ও পরিসংখ্যান৷
পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগকে তিনি ব্যাখা করেছেন -পর্যটনের জন্য যেসব আবাসন তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোকে জ্বালানি দক্ষ করে গড়ে তোলা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, পানি ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা হিসেবে৷ এমনকি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষাকেও এর মধ্যে ধরেছেন তিনি৷
‘‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হবে৷ সাংস্কৃতিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে তেমন উদ্যোগ নিতে হবে৷'' বলছিলেন অ্যালেন৷
পর্যটন খাতে একটি দেশের সরকারের দায়িত্ব সরাসরি সবুজ বিনিয়োগ করা বা তার পরিবেশ তৈরি করা বলে মনে করেন অ্যালেন৷ তবে বেসরকারি খাতও এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে মনে করেন তিনি৷
এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয় এবং ডাটা বা পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখেন তিনি৷
ডাটানির্ভর পলিসির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন স্পেনভিত্তিক পর্যটন, জ্বালানি ও শিল্প খাতের সরকারি থিংকট্যাংক সেগিটুর-এর প্রধান ফার্নান্দো দে পাবলো মার্টিনও৷
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে স্পেনে ৮ কোটি ২ লাখ পর্যটক এসেছেন৷ এ খাতের আয় জিডিপির ১১ শতাংশ এবং দেশের ১৩ ভাগ কর্মসংস্থান করে দিচ্ছে এ খাত৷
‘‘আমরা খরচ করেছি ৮ হাজার ৭শ' কোটি ইউরো৷ ২০১৭ সালের শেষে আমাদের ট্রেড ব্যালান্স ৪ হাজার ২শ' কোটি ইউরো৷''
ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের রিপোর্টেও পর্যটন খাত থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রে সবগুলো দেশের শীর্ষে রয়েছে স্পেন৷
২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউরোপজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল তা কেবল এই পর্যটনের জোরেই কাটিয়ে উঠেছে স্পেন, জানান পাবলো মার্টিন৷
তবে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ যেন স্থানীয় মানুষকে বাদ দিয়ে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তিনি৷
‘‘স্থানীয় জনগণের কথা ভুলে গেলে চলবে না৷ বিনিয়োগ এমনভাবে করতে হবে, যেন তারাও এর আওতায় পড়েন৷''
পাবলো জানান, শুধু তাই নয়, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য প্রাথমিকভাবে আরো ৬ কোটি ইউরো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্পেন৷ কয়েকটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে৷
ওইসিডি-র নীতি-নির্ধারকরা প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাই যদি হয়, অচিরেই হয়ত বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের চেহারাই পালটে যাবে৷