অ্যালুমিনিয়াম রিসাইক্লিং
২ আগস্ট ২০১৪একাধিক ধাতুযুক্ত অ্যালয় বা ধাতব সংমিশ্রণ থেকে কোনো ধাতু আলাদা করা এতকাল বেশ কঠিন ছিল৷ ‘টোমরা' নামের এক কোম্পানি এবার পরীক্ষামূলকভাবে অ্যালয় থেকে উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম তৈরি করছে৷ টোমরা সর্টিং কোম্পানির টোমাস এয়ার্ডমান বলেন, ‘‘আজকাল পুরানো গাড়ি থাকলে তা থেকে অ্যালুমিনিয়াম বের করা সম্ভব৷ তবে অ্যালয় আবার হুবহু আগের অবস্থায় আনার উপায় ছিল না৷ অর্থাৎ ‘ডাউনসাইকেল' করে কিছুটা নিম্নমানের অ্যালুমিনিয়ামে রূপান্তর করা যেত৷ উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম চাইলে নতুন করে তা জোগাড় করতে হতো৷ এখন আমরা এক প্রযুক্তি গড়ে তুলেছি, যা প্রথমবারের মতো অ্যালয় শনাক্ত করতে পারে৷''
লেজার রশ্মির সাহায্যে ইঞ্জিনিয়াররা কনভেয়ার বেল্টের উপর ধাতুর খণ্ড বিশ্লেষণ করে সেগুলিকে পরস্পরের থেকে আলাদা করতে পারেন৷
আখেন শহরের গবেষকরা এই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি তৈরি করেছেন৷ ফ্রাউনহোফার ইন্সটিটিউটে তাঁরা এই প্রক্রিয়া আরও নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা করছেন৷ কাজটা বেজায় জটিল৷ ধাতুর অংশগুলি দ্রুত শনাক্ত করে, মেপে, রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে আলাদা করতে হয়৷ ফ্রাউনহোফার ইন্সটিটিউটের ড. কর্ড ফ্রিকে-বেগেমান বলেন, ‘‘এই অংশগুলি বেল্টের উপর সেকেন্ডে ৩ মিটার গতিতে এগিয়ে চলেছে৷ অর্থাৎ এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সব কাজ সারতে হয়৷ এক একটি কাজের জন্য কয়েক মিলি সেকেন্ড বা ১০ মিলি সেকেন্ড সময় থাকে৷ বিশ্লেষণও আলাদা কাজ, যা মাত্র কয়েক মাইক্রো সেকেন্ডের মধ্যে সারতে হয়৷''
এক থ্রিডি লেজার স্ক্যানার ধাতুর টুকরার অবস্থান ও মাপ মনে রাখে৷ এই সব তথ্য এক বিশেষ শক্তিশালী কম্পিউটারে ভরা হয়৷ সেটি স্থির করে প্রত্যেকটি টুকরার ঠিক কোন অংশ বিশ্লেষণ করতে হবে৷ দ্বিতীয় একটি লেজার সেই অংশের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশ ‘ভেপারাইজ' বা বাষ্পে পরিণত করে৷ তার নিখুঁত রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে সংকেত পাঠানো হয়৷ বাতাসের জেট তখন সেই অনুযায়ী টুকরাগুলিকে আলাদা করে৷
শিল্পক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে হলে ঘণ্টায় ২ থেকে ৪ টন অ্যালুমিনিয়াম অ্যালয় বিশ্লেষণ করতে হবে৷ তবেই সেটা লাভজনক হবে৷ তবে পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এটি একটা বিশাল সাফল্য, সন্দেহ নেই৷ টোমাস এয়ার্ডমান বলেন, ‘‘ভবিষ্যতের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিস্টেম প্রথমবারের মতো ধাতু হিসেবে অ্যালুমিনিয়ামকে একটা সাইকেল-এর মধ্যে রাখতে পারবে৷ অর্থাৎ উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম রিসাইক্লিং সম্ভব হবে৷''
এই প্রক্রিয়ার অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধার শেষ নেই৷ কারণ নতুন অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন করতে যে জ্বালানি লাগে, অ্যালুমিনিয়াম রিসাইক্লিং করতে তার মাত্র এক-দশমাংশের প্রয়োজন হবে৷