পরিবেশ রক্ষায় বিকল্প জ্বালানি
২৯ জুলাই ২০১১তবে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে পরিবেশবাদীদের সংশয় রয়েই গেছে৷ এর পরিবর্তে কী সৌরশক্তি বা সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়? অথবা বিকল্প জ্বালানি?
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে৷ চুক্তি অনুয়ায়ী রুপগঞ্জে এই কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে৷ তবে বাংলাদেশের পরিবেশবাদীরা এই ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিকে উপেক্ষা না করার জন্য সরকারের প্রতি ইতোমধ্যেই আহ্বান জানিয়েছেন৷
কোন ধরণের বিপর্যয় প্রতিরোধ পরিকল্পনা ছাড়াই এই চুক্তি করা হয়েছে বলে সমালোচকদের ধারণা৷ এমন অভিযোগও করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির নানা সুবিধার কথা বলা হলেও, এমন উদ্যোগের কারিগরি ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য বিপর্যয় যাচাই করেনি সরকার৷ ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ভয়াবহ ঘটনার পরে এই বিষয়টি সামনে আসলেও, নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কথা ভাবা হয়নি৷ বাংলাদেশ একদিকে ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ হওয়ায় এমন বিপর্যয় ঘটলে তার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে জাপানের চেয়ে অনেক অনেক বেশি৷
আর জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিবর্তে কী সৌরশক্তি বা সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায় না? এর উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. আমানত উল্লাহ খান বললেন, ‘‘যায়, কিন্তু এখন পর্যন্ত সৌরশক্তিতে যে ধরণের টেকনোলজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট, একটা দেশে, যেমন আমাদের দেশে যেই ধরণের, জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সৌর শক্তি থেকে তা এই মুহূর্তে আশা করা সম্ভব নয়৷ সেই জন্যেই হয়তো আমাদের অন্য সোর্সে যেতে হবে৷ নিউক্লিয়ার পাওয়ার ডেফিনিটলি আমাদের দেশের মতো টেকনোলজিক্যাল পর্যায়ে খুবই বিপজ্জনক৷ ঐতিহ্যগত যে সব জ্বালানি আছে সেগুলো ব্যবহার করবো এবং সৌরশক্তি আরো যাতে সহজতরভাবে পাওয়া যায়, বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়, এবং সস্তায় পাওয়া যায়, সেইধরণের গবেষণা আমরা করতে পারি৷''
পরিবেশ বান্ধব কী ধরণের বিকল্প জ্বালানির কথা চিন্তা করা যেতে পারে, এর জবাবে ড. আমানত উল্লাহ খান বলেছেন, ‘‘আমরা যে কয়লা ব্যবহার করেছি এতোদিন, বা জলবিদ্যুৎ, সেগুলোর কথা চিন্তা করা যেতে পারে৷ কোলটাকে আরো পরিবেশ বান্ধব হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ যতোটা আমরা করি, যেভাবে করি, যে যত্নের সাথে করি, সেই যত্নের পরিমাণ যদি বাড়াই তাহলে কোলটা অনেক পরিবেশ বান্ধব হিসেবে ব্যবহার করা যাবে৷ সেইখানে তো আমরা যাচ্ছি না, বরং আরো সস্তা বলে নিউক্লিয়ার পাওয়ারে চলে যেতে চাচ্ছি৷ নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্বল্প সময়ের জন্যে সস্তা কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্যে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ তাই সেটা থেকে দূরে থাকাটাই সবচেয়ে ভালো স্ট্রাটেজি আমাদের জন্যে৷ তাছাড়া উইন্ড ফোর্স আছে৷''
বাংলাদেশ এমনিতেই বিশ্ব পরিবেশ দূষণের অন্যতম শিকার৷ বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও ব্যবহার৷ জীবাশ্ম জ্বালানি,অর্থাৎ তেল, গ্যাস ও কয়লা ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে৷ ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে৷ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের বিশাল এলাকা আজ সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার হুমকির সৃষ্টি হয়েছে৷ এ অবস্থায় অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহার, পরিবেশকে আরো দূষিত করতে পারে৷ কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য নয়, কিন্তু তারপরেও, এর বিপদের ভাগটা বাংলাদেশকেই নিতে হচ্ছে অনেক বেশি৷ বৈশ্বিক ঊষ্ণতার ফলে সমুদ্র উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা, এর ফলে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা সাগরে চলে যাওয়া, এইসব আশঙ্কার কথা, আমরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ শুনে আসছি৷ ধরিত্রী সম্মেলন ও এর ধারাবাহিকতায় কিওটো, বালি, কোপেনহেগেন ও কানকুন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বৈশ্বিক ঊষ্ণতাজনিত বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার তাগিদে৷ কিন্তু এ পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, অর্থাৎ পরিবেশ দূষণের শিকার দেশগুলো, আরও ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে৷
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক