1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরমাণু বিদ্যুতের যুগ শেষ হবার পর জার্মানি কী করবে?

২ সেপ্টেম্বর ২০১১

২০২২ সালের মধ্যে জার্মানি পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু ইতিমধ্যেই বিকল্প খোঁজার উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/12RrG
জার্মানির একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রছবি: AP

জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের মারাত্মক দুর্ঘটনার জের ধরে জার্মানি বৈপ্লবিক এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে৷ ভূমিকম্প, সুনামি ও পরমাণু দুর্ঘটনার রেশ এসে পড়ে সুদূর বার্লিনে৷ ফুকুশিমার ঘটনার আগে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির সময়কাল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু রাতারাতি সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে বাধ্য হয় জার্মান সরকার৷

জার্মানির বিদ্যুৎ পরিষেবার কাঠামো

জার্মানির পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মালিক ৪টি বড় কোম্পানি৷ কয়েক মাস আগে সরকার যখন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির আয়ু বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন তারা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল৷ কিন্তু রাতারাতি একেবারে বিপরীত সিদ্ধান্তের ফলে তাদের এখন মাথায় হাত৷ তার উপর দেশের মানুষও ফুকুশিমার ঘটনার পর পরমাণু বিদ্যুতের ঘোরতর বিরোধী হয়ে উঠেছে৷ ফলে জোর গলায় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করাও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলির পক্ষে সহজ নয়৷ এই অবস্থায় তারা ঘর সামলাতে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে৷ পরমাণু বিদ্যুতের দিন শেষ হওয়ার পরেও যাতে কোম্পানি হিসেবে তারা মুনাফা করে যেতে পারে এবং শেয়ারহোল্ডারদের খুশি রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে৷ তবে সেই পরিকল্পনার রূপরেখা এখনো স্পষ্ট নয়৷ এতকাল বিশাল মুনাফা করে এসে ভবিষ্যতেও সেই একই মাত্রার সাফল্য ধরে রাখা সহজ নয়৷

Jürgen Großmann Vorstandsvorsitzender RWE
আরডাব্লুই সংস্থার প্রধান ইয়ুর্গেন গ্রোসমানছবি: picture-alliance / dpa

মুনাফা বনাম বিকল্প পথ

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, জার্মানির বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের উচ্চ হারে ডিভিডেন্ড দিয়ে এসে আখেরে নিজেদেরই সর্বনাশ করেছে৷ এখন নতুন পরিস্থিতি দেখা দিলেও কোম্পানির পুনর্গঠন বা সংস্কারের কাজ মোটেই সহজ হচ্ছে না৷ প্রতিযোগিতার বাজারে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার চেয়েও বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে মুনাফা করা বেশি জরুরি৷ এই অবস্থায় তারা পরমাণু বিদ্যুৎ বন্ধ করার কুফলের মারাত্মক এক চিত্র তুলে ধরছে৷ আরডাব্লুই সংস্থার প্রধান ইয়ুর্গেন গ্রোসমান বললেন, ‘‘আমাদের আরও বেশি করে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য প্রস্তুত হতে হবে৷ তখন বছরে দুই বা তিন দিন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে৷''

বেসরকারি কোম্পানি এমন হুমকির কথা বললেও এত নাটকীয় পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন না বিশেষজ্ঞরা৷ তবে তারাও জানতে চান, পরমাণু বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে এই সব কোম্পানি কোন পথ বেছে নেবে৷ এপ্রসঙ্গে গ্রোসমান বললেন, ‘‘ধরে নিতে হবে, পরমাণু বিদ্যুতের সবচেয়ে সম্ভাব্য বিকল্প হবে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি৷ আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস না থাকায় কয়লার ব্যবহারই তখন বাড়াতে হবে৷''

কিন্তু জার্মান সরকার জলবায়ু সংরক্ষণের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, সেই কাঠামোর মধ্যে আরও জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই৷ উল্টে সেই লক্ষ্যে কার্বন নির্গমনের বর্তমান মাত্রা ধাপে ধাপে আরও কমিয়ে আনতে হবে৷ সরকার সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জল বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে চায়, যাতে নতুন করে বাড়তি নির্গমনের সমস্যাই না দেখা দেয়৷ সরকারের এই নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বড় বড় কোম্পানিও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করছে৷ তার ফলও পাওয়া যাচ্ছে৷ যেমন ইতিমধ্যে আরডাব্লুই সংস্থার উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ১৭ শতাংশই নবায়নযোগ্য জ্বালানি৷ কিন্তু পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে যে ঘাটতি দেখা দেবে, তা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাত্রা যথেষ্ট হবে না৷ জ্বালানি কোম্পানিগুলির মতে, ঠিক এই কারণেই তড়িঘড়ি করে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত একেবারে অবাস্তব৷

A picture made available on 02 July 2010 shows Afghan men working at a coal-mine in Herat province western Afghanistan on 10 March 2010. News broke on 14 June 2010 that Afghanistan has nearly 1 trillion dollars in untouched mineral deposits including lithium, iron, copper, cobalt and gold, referring to US government estimates. The deposits could turn Afghanistan into one of the most important mining centres in the world. However, with almost no mining industry infrastructure in place, it would take Afghanistan decades to fully exploit the mineral reserves. EPA/HOSSEIN FATEMI pixel
কয়লার ব্যবহার বাড়বেছবি: picture alliance/dpa

অতীতের ভুল ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

পরমাণু বিদ্যুতের বিরোধী শিবির অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ৷ তাদের মতে, জ্বালানি কোম্পানিগুলি বিকল্প জ্বালানির বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিনিয়োগ করেছে বটে, কিন্তু তা মোটেই যথেষ্ট নয়৷ তাদের আন্তরিকতার অভাবের ফলেই আজ এই সংকট দেখা দিয়েছে৷ তাছাড়া সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করছেন তারা৷ তাদের যুক্তি, শুধু মাত্র বড় জ্বালানি কোম্পানিগুলি ও তাদের বিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উপর নির্ভর না করে সরকারের উচিত ছিল স্থানীয় পর্যায়ে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন প্রকল্পে উৎসাহ দেওয়া৷ কারণ এখনো বড় আকারে বিকল্প জ্বালানির উৎপাদন সম্ভব না হলেও স্থানীয় চাহিদা মেটাতে অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা সম্ভব৷ এর একটা বাড়তি সুবিধাও রয়েছে৷ বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে বিদ্যুতের দীর্ঘ লাইন পাততে হয়৷ ছোট আকারে পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সেই বিশাল পরিকাঠামোরও প্রয়োজন হয় না৷ ফলে অনেক অর্থেরও সাশ্রয় হতে পারে৷

পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ধাপে ধাপে বন্ধ হয়ে যাবে৷ জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানিও একদিন শেষ হয়ে যাবে৷ তখন বিদ্যুতে বাজারে আরও বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে বলে পূর্ববাণী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ সেক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণ যেমন কমে যাবে, পরিকাঠামোর সদ্ব্যবহার ও আরও প্রতিযোগিতার ফলে উপকৃত হবেন গ্রাহকরাও৷

 

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক