1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্যোগবাংলাদেশ

নৌকাডুবিতে প্রাণহানি যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে

এম আবুল কালাম আজাদ
এম আবুল কালাম আজাদ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

আবারও নৌকাডুবি, আবারও প্রাণহানি৷ এবারের মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গের করতোয়া নদীতে৷ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মাঝনদীতে নৌকা ডুবে গেলে অন্তত ৬৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়, যার অধিকাংশই শিশু৷

https://p.dw.com/p/4HZzf
বুড়িগঙ্গায় নৌকডুবিতে নিহতদের লাশ
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/AFP/M. U. Munir

এবারও হয়েছে তদন্ত কমিটি আর মৃতদেহ সৎকারেও স্বজনদের দেয়া হয়েছে কিছু অর্থ৷ তবে কিছুদিনের মাঝেই আমরা ঘটনাটি ভুলে যাবো৷ এরপর আবার একটি ঘটনা ঘটবে, আবার অকালে মৃত্যু হবে মানুষের৷ এযেন এক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রায়ই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন স্থানে৷ অনেক ক্ষেত্রেই কয়েকজন মারা যায় বলে সেটা আমরা আমলে নেই না৷ সেসব ঘটনা খুব বেশি মিডিয়াতেও আসে না৷ সেসব ঘটনার তদন্ত হয় না বা মৃতের পরিবারকে কোনরুপ আর্থিক সাহায্যও দেয়া হয় না৷ তবে মৃতের সংখ্যা কিছুটা বেশি হলেই সেটা নিয়ে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ যেমনটি হয়েছে করতোয়ায় দুর্ঘটনা ফলে৷

অতীতের অনেক ঘটনার মত এবারেও নৌকাটিতে ছিল অতিরিক্ত যাত্রী৷ উত্তাল করতোয়া নদীতে ধারন ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে যায়৷ নৌকায় যাত্রীরা সবাই ছিল হিন্দু ধর্মের৷ দুর্গা পূজার মহালয়া উপলক্ষে তারা নদীর অন্য প্রান্তে একটি মন্দিরে বিশেষ পুজা-অর্চনায় যোগ দেয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল৷

এমন না যে প্রথমবারেরমত তারা পূজার উদ্দেশে নদীর ওপারে যাচ্ছিল৷ বরং প্রতি বছর তারা ঐ মন্দিরে গিয়ে পুজায় অংশ গ্রহণ করে থাকে৷ বৃষ্টি ও উত্তাল নদীর অবস্থা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত ছিল এদিকে ভালমত নজর দেয়া, পর্যাপ্ত নৌযানের ব্যবস্থার পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের নিরাপদে নদী পারাপার নিশ্চিত করা৷

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, নদী পারাপারে প্রতিদিন সাধারণত কেবল একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলে আউলিয়া ঘাট থেকে৷ কিন্তু মহালয়ায় হাজারো লোকের সমাগম হবে, তার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের পারাপারে ছয়টি ট্রলার দেয়ার আবেদন করা হয়েছিল সনাতন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে৷ কিন্তু সেদিন বরাদ্দ ছিল তিনটি ট্রলার, ফলে মানুষের বাড়তি চাপ ছিল৷ এছাড়াও যে ট্রলারগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, সেগুলো মাঝারি আকারের বালু বহনকারী নৌযান৷ এমন একটি নৌযানে সেদিন ১০০র বেশি মানুষ উঠে পড়েছিল, স্থানীয়দের কেউ কেউ মনে করেন ট্রলারে দেড়শো মানুষ ছিল৷ বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েছিল৷

এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলে
এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলেছবি: Private

এছাড়াও দেশের অন্য অনেক নদীঘাটের মতো করতোয়ার ঐ ঘাটেও ছিল অনিয়ম, অব্যবস্থা৷ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকা চলাচল করলেও দেখার কেউ ছিল না৷

সঠিক কোনো উপাত্ত না থাকলেও ধারনা করা হয়, প্রতিবছর কয়েকশ মানুষ নৌকাডুবিতে মারা যায়৷ এর অন্যতম কারণ হল ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলা, বেপরোয়া চলাচল এবং প্রশাসনের নির্লিপ্ততা৷

একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও এর প্রতিরোধে সরকার-প্রশাসনের তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না৷ প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন আর মৃতের পরিবারকে কিছু নগদ অর্থ দিয়েই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ করতে চায়৷ খাদ্যে ভেজাল বা দুর্ঘটনা কমাতে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়, নৌকাডুবি রোধে সেরকম তৎপরতা দেখা যায় না৷ ফলে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে৷

প্রতিটি মানুষের জীবন মূল্যবান৷ তাই প্রশাসনকে দায়িত্বশীল হতে হবে, নদীপথে মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে৷ একই সাথে যাত্রীরাও হবে সচেতন৷ তাদের বুঝতে হবে, ধারনক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নৌকায় উঠলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে৷ তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল বন্ধ করতে হবে৷