এবারও হয়েছে তদন্ত কমিটি আর মৃতদেহ সৎকারেও স্বজনদের দেয়া হয়েছে কিছু অর্থ৷ তবে কিছুদিনের মাঝেই আমরা ঘটনাটি ভুলে যাবো৷ এরপর আবার একটি ঘটনা ঘটবে, আবার অকালে মৃত্যু হবে মানুষের৷ এযেন এক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রায়ই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন স্থানে৷ অনেক ক্ষেত্রেই কয়েকজন মারা যায় বলে সেটা আমরা আমলে নেই না৷ সেসব ঘটনা খুব বেশি মিডিয়াতেও আসে না৷ সেসব ঘটনার তদন্ত হয় না বা মৃতের পরিবারকে কোনরুপ আর্থিক সাহায্যও দেয়া হয় না৷ তবে মৃতের সংখ্যা কিছুটা বেশি হলেই সেটা নিয়ে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ যেমনটি হয়েছে করতোয়ায় দুর্ঘটনা ফলে৷
অতীতের অনেক ঘটনার মত এবারেও নৌকাটিতে ছিল অতিরিক্ত যাত্রী৷ উত্তাল করতোয়া নদীতে ধারন ক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে যায়৷ নৌকায় যাত্রীরা সবাই ছিল হিন্দু ধর্মের৷ দুর্গা পূজার মহালয়া উপলক্ষে তারা নদীর অন্য প্রান্তে একটি মন্দিরে বিশেষ পুজা-অর্চনায় যোগ দেয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল৷
এমন না যে প্রথমবারেরমত তারা পূজার উদ্দেশে নদীর ওপারে যাচ্ছিল৷ বরং প্রতি বছর তারা ঐ মন্দিরে গিয়ে পুজায় অংশ গ্রহণ করে থাকে৷ বৃষ্টি ও উত্তাল নদীর অবস্থা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত ছিল এদিকে ভালমত নজর দেয়া, পর্যাপ্ত নৌযানের ব্যবস্থার পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের নিরাপদে নদী পারাপার নিশ্চিত করা৷
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, নদী পারাপারে প্রতিদিন সাধারণত কেবল একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলে আউলিয়া ঘাট থেকে৷ কিন্তু মহালয়ায় হাজারো লোকের সমাগম হবে, তার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের পারাপারে ছয়টি ট্রলার দেয়ার আবেদন করা হয়েছিল সনাতন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে৷ কিন্তু সেদিন বরাদ্দ ছিল তিনটি ট্রলার, ফলে মানুষের বাড়তি চাপ ছিল৷ এছাড়াও যে ট্রলারগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, সেগুলো মাঝারি আকারের বালু বহনকারী নৌযান৷ এমন একটি নৌযানে সেদিন ১০০র বেশি মানুষ উঠে পড়েছিল, স্থানীয়দের কেউ কেউ মনে করেন ট্রলারে দেড়শো মানুষ ছিল৷ বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েছিল৷
এছাড়াও দেশের অন্য অনেক নদীঘাটের মতো করতোয়ার ঐ ঘাটেও ছিল অনিয়ম, অব্যবস্থা৷ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকা চলাচল করলেও দেখার কেউ ছিল না৷
সঠিক কোনো উপাত্ত না থাকলেও ধারনা করা হয়, প্রতিবছর কয়েকশ মানুষ নৌকাডুবিতে মারা যায়৷ এর অন্যতম কারণ হল ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী তোলা, বেপরোয়া চলাচল এবং প্রশাসনের নির্লিপ্ততা৷
একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও এর প্রতিরোধে সরকার-প্রশাসনের তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না৷ প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন আর মৃতের পরিবারকে কিছু নগদ অর্থ দিয়েই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ করতে চায়৷ খাদ্যে ভেজাল বা দুর্ঘটনা কমাতে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়, নৌকাডুবি রোধে সেরকম তৎপরতা দেখা যায় না৷ ফলে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে৷
প্রতিটি মানুষের জীবন মূল্যবান৷ তাই প্রশাসনকে দায়িত্বশীল হতে হবে, নদীপথে মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে৷ একই সাথে যাত্রীরাও হবে সচেতন৷ তাদের বুঝতে হবে, ধারনক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নৌকায় উঠলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে৷ তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল বন্ধ করতে হবে৷