নোবেল পুরস্কার ও ‘রায়চৌধুরি ইকুয়েশন’
৯ অক্টোবর ২০২০একাধিকবার কলকাতায় এসেছেন এ'বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রজার পেনরোজ৷ বস্তুত কোভিড পরিস্থিতি তৈরি না হলে গত জুন মাসেই ফের কলকাতায় আসার কথা ছিল তাঁর৷ এই শহরের সঙ্গে তাঁর সেই যোগাযোগ আরো নিবিড় হলো নোবেল প্রাপ্তিতে৷ কারণ, মহাকাশের কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রবাদপুরুষ স্টিফেন হকিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে পেনরোজের যে কাজ, যা নিয়ে তাঁর ব্যাপকতর গবেষণা এবং শেষ পর্যন্ত এই নোবেল–স্বীকৃতি, তা দাঁড়িয়ে আছে যে সমীকরণের ওপর, তার স্রষ্টা একজন বাঙালি৷ এবং তিনি কলকাতার৷ আন্তর্জাতিক স্তরে সম্মানিত পদার্থবিদ, প্রয়াত অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরি৷ স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার পদার্থবিদ মহলে এই নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস, আনন্দ৷ তাদের অনেকেই সরাসরি তাঁর ছাত্র ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে, বা তারও আগে আশুতোষ কলেজে, যে দুটি জায়গায় শ্রী রায়চৌধুরি অধ্যাপনা করেছেন৷ সেই ছাত্রদের একজন, পুনের আন্তর্বিশ্ববিদ্যালয় মহাকাশ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের প্রধান সোমক রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তাঁর পদবি এবং তিনি কলকাতা থেকে এসেছেন শুনেই অধ্যাপক পেনরোজ জানতে চেয়েছিলেন, তিনি অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরির কেউ হন কিনা৷ রজার পেনরোজ এবং স্টিফেন হকিং, দুজনেই অতীতে একাধিক উপলক্ষ্যে সশ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তাঁদের গবেষণায় অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরির গাণিতিক সূত্র ‘রায়চৌধুরি ইকুয়েশন’-এর দিশা-দেখানো অবদানের কথা৷
আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যার জগতে বস্তুত এটাই মনে করা হয় যে, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ‘জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি'র পর, তার বিস্তৃততর ব্যাখ্যায় এই ‘রায়চৌধুরি ইকুয়েশন’ দ্বিতীয় যুগান্তকারী সমীকরণ৷ তার সঙ্গে রজার পেনরোজের নোবেলজয়ী গাণিতিক তত্ত্বের কী আন্তর্সম্পর্ক, খুব প্রাঞ্জল ভাষায় তার ব্যাখ্যা দিলেন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক অমিতাভ রায়চৌধুরি, যিনি সম্পর্কে প্রয়াত অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরির ভ্রাতুষ্পুত্র৷ বিরাট এক যৌথ পরিবারের শরিক হওয়ার সুবাদে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাঁর কাকাকে৷ জানালেন, বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অন্তর্মুখী, প্রচারবিমুখ৷ একই সঙ্গে তিনি খারিজ করলেন একটি জল্পনা, যা পেনরোজ নোবেল পাওয়ার পর থেকেই শোনা যাচ্ছে৷ যে, বাঙালি গবেষক বলেই অমল রায়চৌধুরি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পাননি, অথচ তাঁর দেখানো পথে এগিয়েই নোবেল পেলেন একজন৷ অধ্যাপক অমিতাভ রায়চৌধুরি বললেন, ‘‘আমাদের দেশে বসে কোনো কাজ করলে বিদেশে তার স্বীকৃতি পেতে দেরি হয়, এ কথাটা ঠিক৷ কিন্তু অধ্যাপক রায়চৌধুরির ক্ষেত্রে ঠিক ওরকম হয়নি, বরং তার উল্টো হয়েছিল৷ ওঁর কাজটা বিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছিল অনেক আগে৷ যখন ১৯৫৫ সালে ওঁর পেপারটা ছাপা হয়, তার পরেই সেটা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছিল বিদেশে৷ দেশে কোনো আলোচনাই হয়নি৷ কিছুই হয়নি৷ বিদেশে যথেষ্ট আলোচনা এবং উৎসাহ হয়েছিল এটাতে৷''
স্টিফেন হকিংয়ের পিএইচডি থিসিসে পর্যন্ত ‘রায়চৌধুরি ইকুয়েশন'-এর উল্লেখ ছিল৷ শুধু অমল রায়চৌধুরির নিজের দেশই সেই গাণিতিক তত্ত্বকে প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে দেরি করেছিল৷ সেটাও বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জয়ন্তবিষ্ণু নার্লিকার-এর উদ্যোগে৷ তিনিই প্রথম জ্যোতির্পদার্থবিদ্যাকে ভারতে পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারার চর্চায় নিয়ে আসেন এবং যথাযোগ্য মান্যতা পায় রায়চৌধুরি ইকুয়েশন৷
গতবছরের ছবিঘরটি দেখুন...